Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কেরলের বিরুদ্ধে গোল নষ্টের মূল্য দিল এটিকে

আইএসএলের উদ্বোধনী ম্যাচকে কেন্দ্র করে ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে প্রবল আগ্রহ ছিল। তার অন্যতম কারণ, বাংলা বনাম কেরল দ্বৈরথ। এই দু’টি রাজ্যেই ফুটবল নিয়ে সব চেয়ে বেশি উন্মাদনা।

ঘাতক: ম্যাচের শুরুতে এগিয়ে গিয়েও জয় এল না এটিকের। আইএসএলে কেরলের হয়ে সমতা ফিরিয়ে উচ্ছ্বাস জোড়া গোলদাতা ওগবেচের (ডান দিকে)। আইএসএল

ঘাতক: ম্যাচের শুরুতে এগিয়ে গিয়েও জয় এল না এটিকের। আইএসএলে কেরলের হয়ে সমতা ফিরিয়ে উচ্ছ্বাস জোড়া গোলদাতা ওগবেচের (ডান দিকে)। আইএসএল

শ্যাম থাপা
শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৯ ০৪:০৬
Share: Save:

কোচির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে ম্যাচ শুরু হওয়ার ছয় মিনিটের মধ্যে কার্ল ম্যাকহিউয়ের গোলে এটিকে এগিয়ে যাওয়ার পরে মনে হচ্ছিল, কেরল ব্লাস্টার্স এ দিন দাঁড়াতেই পারবে না। ভাবতে পারিনি নাটকীয় ভাবে বদলে যাবে ম্যাচের রং। ফুটবলে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে না পারলে যে সাফল্য পাওয়া সম্ভব নয়, আরও একবার প্রমাণিত।

আইএসএলের উদ্বোধনী ম্যাচকে কেন্দ্র করে ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে প্রবল আগ্রহ ছিল। তার অন্যতম কারণ, বাংলা বনাম কেরল দ্বৈরথ। এই দু’টি রাজ্যেই ফুটবল নিয়ে সব চেয়ে বেশি উন্মাদনা। অসংখ্য ফুটবলার উঠে এসেছে বাংলা ও কেরল থেকে। তার উপরে এটিকের কোচ আবার আন্তোনিয়ো লোপেজ় হাবাস। অভিষেকের আইএসএলে যিনি চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন কলকাতাকে। ফলে স্পেনীয় কোচকে নিয়ে প্রত্যাশা তুঙ্গে। রবিবার সন্ধ্যায় আমাদের প্রাক্তন ফুটবলারদের বিজয়া সম্মেলনী ছিল। সেখানেও সকলের চোখ ছিল টেলিভিশনে কেরল বনাম এটিকে ম্যাচে।

আমি নিজেও হাবাসের রণনীতির ভক্ত। প্রতিপক্ষের শক্তি ও দুর্বলতা অনুযায়ী সব কোচই রণনীতি সাজান। হাবাসের বিশেষত্ব হচ্ছে, ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী পরিকল্পনা বদলে প্রতিপক্ষকে সমস্যায় ফেলা। ওঁর রণকৌশলেই কোচিতে ঘরের মাঠে শুরু থেকেই সমস্যায় পড়ে গিয়েছিল কেরল। তার উপরে রক্ষণের প্রধান ভরসা সন্দেশ ঝিঙ্গান চোটের জন্য মাঠের বাইরে ছিটকে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শুরু থেকেই রয় কৃষ্ণদের আক্রমণের ঝড় তোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাবাস। শুধু তাই নয়। প্রতিপক্ষের উপরে চাপ বাড়াতে এটিকের ডিফেন্ডারেরাও কর্নার ও ফ্রি-কিকের সময় কেরলের বক্সে উঠে যাচ্ছিল। ফলশ্রুতি, মাত্র ছয় মিনিটের মধ্যেই অসাধারণ গোলে এটিকে-কে এগিয়ে দেয় কার্ল।

গোল খেয়ে আরও চাপে পড়ে গিয়েছিল কেরল। রক্ষণে ফুটবলারের সংখ্যা বাড়িয়ে বারবার চেষ্টা করছিল এটিকের ঝড় থামাতে। কলকাতায় কোচিং করিয়ে যাওয়া এলকো সাতৌরির রণনীতি ছিল, আগে হার বাঁচাও, তার পরে জয়ের কথা ভাবা যাবে। ২৪ মিনিটে রয় কৃষ্ণ মাঝমাঠ থেকে বল ধরে দ্রুত গতিতে কেরলের বক্সে ঢুকে পড়েছিল। কিন্তু সামনে একা গোলরক্ষককে পেয়েও অবিশ্বাস্য ভাবে বল বাইরে মারল। দু’মিনিট পরে মাইকেল সুসাইরাজও বল নিয়ে কেরল বক্সে ঢুকে পড়েছিল। কিন্তু তাকে ফাউল করে সের্খিয়ো সিদোঞ্চা। টেলিভিশনে বারবার রিপ্লে দেখে মনে হচ্ছিল, পেনাল্টি ছিল। যদিও রেফারি এটিকে ফুটবলারদের দাবি খারিজ করে দেন।

রয় কৃষ্ণের অবিশ্বাস্য ভাবে গোল নষ্ট। তার পরে এটিকের পেনাল্টির আবেদন খারিজ। এই দু’টো ঘটনা যেন কেরল ফুটবলারদের উজ্জীবিত করে দিল। ওরা ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করল। রক্ষণ সামলে প্রতিআক্রমণ নির্ভর ফুটবল খেলতে শুরু করল হোলিচরণ নার্জারি, প্রশান্ত কারুথাদাথকুনিরা। ৩০ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে সমতা ফেরাল বার্তোলোমেউ ওগবেচে। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার ঠিক আগে নিজের দ্বিতীয় গোল করল ও। নাইজেরিয়ার জাতীয় দলের প্রাক্তন স্ট্রাইকার ওগবেচে শুধু দু’টো গোলই করল না, পুরো দলটাকেও খেলাল।

কেরল অধিনায়ক ওগবেচেকে দেখে যতটা মুগ্ধ হয়েছি, ঠিক ততটাই হতাশ করেছে রয় কৃষ্ণ। গত মরসুমে অস্ট্রেলীয় লিগে সোনার বুট পেয়েছে এটিকে স্ট্রাইকার। ওকে ঘিরেই তৃতীয় বার আইএসএলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখছে কলকাতার ফুটবলপ্রেমীরা। অভিষেকের ম্যাচেই নায়ক হয়ে উঠতে পারত ফিজি জাতীয় দলের স্ট্রাইকার। কিন্ত অবিশ্বাস্য ভাবে একাধিক গোল নষ্ট করল। ওগবেচের দ্বিতীয় গোলের ঠিক এক মিনিট আগে সোনার সুযোগ পেয়েছিল এটিকে স্ট্রাইকার। কিন্তু এ বারও ব্যর্থ হয়।

রবিবার রয় কৃষ্ণকে দেখে প্রথম ফেডারেশন কাপ ফাইনালের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। এই কোচিতেই ম্যাচটা ছিল। আমি তখন মোহনবাগানে। আমাদের প্রতিপক্ষ ছিল বেঙ্গালুরুর আইটিআই। পুরো ম্যাচে অসাধারণ খেলেছিলাম আমরা। রয় কৃষ্ণের মতো আমিও সে দিন একাই একাধিক নিশ্চিত গোল নষ্ট করেছিলাম। শেষ পর্যন্ত ০-১ হেরে মাথা নিচু করে মাঠ ছেড়েছিলাম আমরা। সেই ব্যর্থতা এখনও আমাকে যন্ত্রণা দেয়।

তবে এখনই এত হতাশ হওয়ার কোনও কারণ নেই। সবে প্রথম ম্যাচ খেলল এটিকে। এর পরে নির্বাসন কাটিয়ে মাঠে ফিরবে জবি জাস্টিন ও আনাস এডাথোডিকা। আশা করছি, রয় কৃষ্ণ-জবি যুগলবন্দিতে ফের চেনা মেজাজে দেখা যাবে এটিকে-কে।

কেরল ব্লাস্টার্স: বিলাল খান, মহম্মদ রাকিপ, জাইরো রদ্রিগেস, জিয়ানন্নি জ়ুইভারলুন, জেসেল কারনেরিয়ো, জ্যাকসন সিংহ (সাহাল আব্দুল সামাদ), মুহামদৌ নিং, প্রশান্ত কারুথাদাথকুনি, সের্খিয়ো সিদোঞ্চা (মারিয়ো আরকোয়েস, রাফায়েল মেসি), হোরিচরণ নার্জারি ও বার্তোলোমেউ ওগবেচে।

এটিকে: অরিন্দম ভট্টাচার্য, প্রীতম কোটাল, অগাস্টিন ইনিগুয়েস, প্রবীর দাস, কার্ল ম্যাকহিউ, প্রণয় হালদার (বলবন্ত সিংহ), হাভিয়ার হার্নান্দেস (এদু গার্সিয়া), জয়েশ রানে (শেহনাজ সিংহ), ডেভিড উইলিয়ামস, মাইকেল সুসাইরাজ ও রয় কৃষ্ণ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Football ISL 2019 Kerala Blasters ATK
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE