Advertisement
E-Paper

মনটা শুধু বল দেখাতেই থাক না

একটা দীর্ঘ সময় যেমন অনিবার্য ভাবে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ প্রিভিউয়ের দিন ব্যাকুল হয়ে মিডিয়া তাঁকে খুঁজত, এখনও তাই! প্রাক্-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ তাঁর প্রতিটি গতিবিধি। প্রতিটি প্র্যাকটিসের ধরন, প্রতিটি শরীরী ভাষা যে অনুবীক্ষণের তলায় ফেলা হবে এটাই তো চিরকালীন নিয়ম!

গৌতম ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৬ ০৩:২৯
 ম্যাচে মন থাকবে বলের উপর। প্র্যাকটিসেও যেন তাই। শনিবারের মোহালিতে কোহালির প্রতিদ্বন্দ্বী অবশ্য ধোনি। -শঙ্কর নাগ দাস

ম্যাচে মন থাকবে বলের উপর। প্র্যাকটিসেও যেন তাই। শনিবারের মোহালিতে কোহালির প্রতিদ্বন্দ্বী অবশ্য ধোনি। -শঙ্কর নাগ দাস

একটা দীর্ঘ সময় যেমন অনিবার্য ভাবে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ প্রিভিউয়ের দিন ব্যাকুল হয়ে মিডিয়া তাঁকে খুঁজত, এখনও তাই! প্রাক্-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ তাঁর প্রতিটি গতিবিধি। প্রতিটি প্র্যাকটিসের ধরন, প্রতিটি শরীরী ভাষা যে অনুবীক্ষণের তলায় ফেলা হবে এটাই তো চিরকালীন নিয়ম!

নামটাই শুধু যা বদলে গিয়েছে।

সচিন তেন্ডুলকর থেকে বিরাট কোহালি।

অমিলের মধ্যে সাড়ে সাতাশের সচিন সাংবাদিক সম্মেলনে কখনও এত সপ্রতিভ ছিলেন না। শনিবার কোহালির প্রেসমিট দেখে মনে হল এখানকার পারফরম্যান্সও বুঝি তাঁর মোট রানের সঙ্গে যোগ হবে। সৌরভ বাদ দিয়ে ইদানিংকালের কোনও ভারতীয় ক্রীড়াবিদকে মনে করতে পারছি না এত মাঝ ব্যাট দিয়ে দেশজ এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে খেলতে।

কপিল দেব তাঁকে চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মধ্যেই তুলনা করেছেন ভিভ আর সচিনের সঙ্গে। করে বলেছেন কোহালি এগিয়ে। টেস্টে ১১ সেঞ্চুরি হয়ে গিয়েও তাঁর গড় ৪৪-এ থেমে আছে কেন, বেশ বিস্ময়কর। সচিন এবং ভিভ দু’জনের টেস্ট গড়ই পঞ্চাশের ওপর। কোহালি সেখানে পিছিয়েও ওয়ান ডে আর টি-টোয়েন্টিতে রোমহর্ষক গড়সম্পন্ন। ওয়ান ডে-তে সাতাশ বছরে কী না ২৫ সেঞ্চুরি আর অ্যাভারেজ ৫১। টি-টোয়েন্টিতে ৫২। ভাবাই যায় না! অস্ট্রেলিয়াতে শেষ তিন টি-টোয়েন্টিতে রানগুলো সচিনতূল্য নয়, তার চেয়েও উজ্জ্বল! রানআউট ৯০। ৫৯ এবং ৫০।

প্রথম দু’টো ম্যাচে ভারত আগে ব্যাট করে জিতেছে বলে ধোনি নিশ্চয়ই আবার প্রথম ব্যাট করতে চাইবেন। টস খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে। কিন্তু সমান গুরুত্বপূর্ণ হল, কোহালি রান পাবেন তো? পাঁচ বছর আগের অবিস্মরণীয় মোহালি সেমিফাইনালে কিন্তু করেছিলেন মাত্র ৯। বাকিরা তবু টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেই টিম ইন্ডিয়া আর এই জমানা তো এক নয়। আধুনিক সময় বলছে, আর সব টিমের সামনে বাকি ব্যাটিং লাইন আপ রান পেয়ে জেতাতে পারে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার মনোবল দুমড়াতে কোহালির বড় স্কোর অব্যর্থ। অস্ট্রেলিয়া যে শুধু তাঁর করা রানটাকেই খেলে না, তারা মনে মনে কোহালিকেও খেলে!

এই দু’হাজার ষোলোর কোহালি ব্যাখ্যা করলেন পাঁচ বছর আগের মোহালির ভুল তিনি আর করবেন না। ‘‘তখন আমার বয়স মাত্র সাড়ে একুশ। মাঠে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী, জাঁকজমক, উত্তেজনা এই সব দেখে কেমন চোখ ধাঁধিয়ে গিয়েছিল। অন্তরটাও নিশ্চয়ই প্রভাবিত হয়। এখন শিখে গিয়েছি পরিস্থিতি যত রাজকীয় হোক, তাতে ভেসে যেতে নেই। সব মনোযোগ রাখতে হয় বলটা দেখার ওপর। মনটা ওই একটা বিন্দুতেই রাখতে হয়। ওটা ঠিকঠাক হলে পরিস্থিতিকে পরে রসিয়ে উপভোগ করার অনেক সময় পড়ে থাকে।’’

দিল্লিবাসী সিনিয়র সাংবাদিক জিজ্ঞেস করলেন, আপনার মানসিকতার মধ্যে ইদানিং একটা শান্ত, সমাহিত ভাব এসেছে। এটা কী করে আনলেন? কোন অনুশীলনে? পূজাপাঠ করে?

বিরাট হেসেই ফেললেন। ‘‘পূজাপাঠ আমি? কী বলছেন? আমার তো শুরুতে ইমেজ ছিল একটা বখে যাওয়া ছেলের। কত লেখালেখি হত এর হাতে এতগুলো ট্যাটু। এর রং বেরঙ্গি লাইফস্টাইল। পূজাপাঠ এই প্রথম শুনলাম। তবে আমি একটা কথা বলতে পারি, বেসিক স্কিল উন্নতি করার জন্য আমি উদয়-অস্ত পরিশ্রম করি। স্কিল বেটার করাটা এত কঠিন কাজ যে লাগাতার পড়ে থাকলে তবে একটু একটু করে হতে পারে। আমি যেমন প্রতিদিন প্র্যাকটিসে উন্নতি করতে যাই। জাস্ট এমনি অনুশীলনে যাওয়ার মানে হয় না। আমি এই লক্ষ্য নিয়ে যাই যে প্রতিদিন এক পার্সেন্ট করে নিজেকে এগোব।’’ অবাক লাগছিল এর পরের উত্তরগুলো শুনে যখন বললেন, ‘‘বিশ্বাসটা হারালে চলবে না যে আমি ঠিক করে ছাড়ব। নিজেকে বকতে হবে তোমার কেরিয়ার তো খুব ছোট। দু’দিন পর আর চাইলেও সুযোগ পাবে না। তাই প্রতিটা মিনিট খাটো আর এনজয় করো। যত পার নিজেকে বাড়াও।’’

এর পর কেউ একজন জিজ্ঞেস করলেন, এই যে সদ্য অস্ট্রেলিয়াকে ৩-০ হারিয়ে এসেছেন সেই পারফরম্যান্স নিশ্চয়ই কাল বাড়তি মনোবল দেবে? এর দু’রকম উত্তর হয়। হয় কনফিডেন্স পাব। বা ওটা পিছনে চলে গিয়েছে। রোববার নতুন দিন। নতুন ম্যাচ। কোহালি দু’টোর কোনওটাই বললেন না। বললেন, ‘‘জিতেছি এটা ঝালিয়ে নেওয়াটা তত দরকারি নয় যতটা দরকারি সেই বিশ্লেষণটা নিয়ে পড়া যে কী কী কারণে আমরা জিতেছিলাম।’’ জানতে চাওয়া হল কোয়ার্টার ফাইনাল হেরে গেলে বিদায়, এটা ভেবে বাড়তি টেনশন?

কোহালি আবার সপাটে প্রশ্নটাকে পুল মারলেন। ‘‘ওই সব বাড়তি ভাবনায় মনকে আক্রান্ত করে লাভ নেই। তা হলে ফোকাসটা অন্য দিকে চলে যাবে। চাপের মধ্যে পারফর্ম করার টোটকাটাই হল ঠিক ওই বিন্দুতে মনকে ধরে রাখা। ঠিক ওই মুহূর্তটার মধ্যে থাকা।’’

বেঙ্গালুরু ম্যাচে ধোনির শেষ বলে বরফশীতল মস্তিষ্ক প্রদর্শনের কথা উঠল। কোহালি বললেন, ‘‘আমি আউটফিল্ডে থাকায় ঠিক ওই সময়টায় মাহিভাইয়ের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়নি। যারা ক্লোজে ছিল তারাই বলছিল। কিন্তু সেই লং অন থেকে আমি একটা জিনিস দেখে বিস্ফারিত হয়ে যাই, মাহিভাই গ্লাভসটা খুলেও কিন্তু বল ছোড়েনি। বল হাতে ছুটেছে। ওই চাপের মুখে সঠিক সিদ্ধান্তটা নিতে পারা যে আমি ছোড়ার চেয়ে এই বল হাতে দৌড়ব—ওই সিদ্ধান্তটা অসামান্য।’’

জানতে চাওয়া হল ভারতীয় ফ্যানরা যে জিতলে মাথায় তুলে নাচে, কাল ছুড়ে ফেলে দেয় এটা ভেবে ভয় হয় না? টি-টোয়েন্টি তো ফর্ম্যাট হিসেবে ভয়ঙ্কর অনিশ্চিত। কোহালি বলেন, ‘‘ফ্যানদের মনোভাব তো চাইলেও কন্ট্রোল করা সম্ভব নয়। ওটা নিয়ে ভেবে কী করব? কেউ সত্যি খুব রেগে যান। কেউ বেশি খুশি হয়ে পড়েন। তাই এই সব নিয়ে ভাবতেই নেই। যত দূরে থাকা যায় তত ভাল। মনটা শুধু বল দেখায় থাক।’’

ফ্যানদের বিরূপ প্রতিক্রিয়া শুনে এক ঝলকে মনে পড়ে গেল সিডনির বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল। সেই অস্ট্রেলিয়া। সেই কোহালি। করেছিলেন মাত্র ১। দেশজুড়ে বিক্ষোভের ঝড় উঠেছিল বীরুষ্কার বিরুদ্ধে। তাঁর একজন অনুষ্কা শুনি এখন আর জীবনে প্রগাঢ় ভাবে নেই। বা নেই-ই। এই বিরাটও কিন্তু তেরো মাস আগের সিডনির বিরাটের চেয়ে আলাদা। সে পূজাপাঠ বা ক্রিকেট থেকে পাওয়া পরিণতি যে কোনও কারণেই হোক।

wt20 virat kohli MS Dhoni
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy