Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
ফাইনালে বারবার হার

শ্রীকান্তদের চাই ঠিক পরিকল্পনা, মত বিমলদের

অনেকে বলছেন বিশ্ব ব্যাডমিন্টন সংস্থার এই ১২টা প্রতিযোগিতা খেলতেই হবে, এই নিয়মে চাপে পড়ে যাচ্ছেন খেলোয়াড়েরা।

পরীক্ষা: শ্রীকান্ত-সিন্ধুদের সামনে এ বার মিশন টোকিয়ো। নিজস্ব চিত্র

পরীক্ষা: শ্রীকান্ত-সিন্ধুদের সামনে এ বার মিশন টোকিয়ো। নিজস্ব চিত্র

শমীক সরকার
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৯ ০৫:৩৩
Share: Save:

গত মরসুমে পি ভি সিন্ধু সাতটি প্রতিযোগিতার ফাইনালে উঠেও হেরে গিয়েছিলেন। সাইনা নেহওয়ালও বিশ্ব ব্যাডমিন্টন সংস্থার ওয়ার্ল্ড ট্যুরের তিনটি প্রতিযোগিতায় ফাইনালের বাধা পেরোতে পারেননি। সদ্য শেষ হওয়া ইন্ডিয়ান ওপেনেও কিদম্বি শ্রীকান্তকে রানার্স হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। চোট-আঘাত সামলে প্রায় দেড় বছর পরে এই পর্যায়ের কোনও প্রতিযোগিতায় ফাইনালে উঠেও খেতাবের খরা কাটাতে পারেননি শ্রীকান্ত। চলতি মাস থেকেই শুরু হচ্ছে অলিম্পিক্সে যোগ্যতা অর্জন পর্ব। যেখানে সফল হলে থাকবে অলিম্পিক্সের চ্যালেঞ্জ। সেই পরীক্ষায় নামার আগে প্রশ্ন উঠছে কেন বারবার ভারতীয় খেলোয়াড়েরা শেষ বাধা পেরোতে ব্যর্থ হচ্ছেন। চাপের কাছে হার মানছেন, না কি এর পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে?

প্রাক্তন জাতীয় কোচ বিমল কুমার মঙ্গলবার টেলিফোনে বললেন, ‘‘সিন্ধু, শ্রীকান্তরা কিন্তু খারাপ খেলছে না। কোনও প্রতিযোগিতার কোয়ার্টার, বা সেমিফাইনালে হারলেও সেটা খারাপ ফল নয়। আমার মতে ধারাবাহিক সাফল্য পেতে গেলে চাই ঠিকঠাক পরিকল্পনা। এখন বছরে ১২টা প্রতিযোগিতা খেলতে হয় সেরা খেলোয়াড়দের। আমার মতে ধারাবাহিক সাফল্য পেতে গেলে একজন খেলোয়াড়কে কোন কোন প্রতিযোগিতা খেলতে হবে সেটা পরিকল্পনা করে ঠিক করতে হবে।’’

অনেকে বলছেন বিশ্ব ব্যাডমিন্টন সংস্থার এই ১২টা প্রতিযোগিতা খেলতেই হবে, এই নিয়মে চাপে পড়ে যাচ্ছেন খেলোয়াড়েরা। কিন্তু সাইনার প্রাক্তন কোচ বলছেন, ‘‘১২টা প্রতিযোগিতা খেলা নিয়ে খুব একটা সমস্যা হওয়া উচিত নয়। টেনিসে এক এক জন খেলোয়াড় আরও বেশি প্রতিযোগিতা খেলে। রজার ফেডেরারকেই দেখুন, গত দেড় মাসে তিনটি প্রতিযোগিতায় খেলল (দুবাই টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপ, ইন্ডিয়ান ওয়েলস মাস্টার্স ও মায়ামি মাস্টার্স) তার মধ্যে দুটোয় ট্রফি জিতেছে, একটার ফাইনালে উঠেছে। তাই বলছি, পরিকল্পনা করে এগোতে হবে। কোন প্রতিযোগিতায় খেতাব জয়ের সম্ভাবনা বেশি। প্রতিযোগিতায় নামার আগে খেলোয়াড়ের শারীরিক অবস্থা কী, এ সব দেখে পরিকল্পনা নিতে হবে। তা হলেই সাফল্য আসবে।’’

ন’বারের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন অপর্ণা পোপাট আবার বলছেন, ‘‘সামনে অলিম্পিক্সের যোগ্যতা অর্জন রয়েছে। তাই প্রত্যেক খেলোয়াড়ই একটা নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলছে। বিশ্ব ব্যাডমিন্টন সংস্থা এখন নিয়ম করে দিয়েছে বছরে ১৫টা প্রতিযোগিতার মধ্যে অন্তত ১২টা খেলতেই হবে। চোট-আঘাত সামলে এতগুলো প্রতিযোগিতায় খেলার ধকল সামলানো সোজা নয়। তাই খেলোয়াড়দের খুব সাবধানে থাকতে হচ্ছে। হয়তো এ বছর একটা-দুটো বড় প্রতিযোগিতায় এবং অবশ্যই পরের বছর অলিম্পিক্সে সেরা ছন্দে পৌঁছনোটাই খেলোয়াড়দের লক্ষ্য।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

তিনি আরও যোগ করেছেন, ‘‘শ্রীকান্ত কিন্তু ভালই খেলছে। কয়েকটা প্রতিযোগিতায় চূড়ান্ত পর্বে ওঠার পথে একটুর জন্য হেরে গিয়েছে। সাইনা, সিন্ধুও ভাল খেলছে। তবে অনেক সময় সাফল্যের জন্য প্রচণ্ড চেষ্টা করতে গিয়ে চোট লাগার সম্ভাবনা থাকে। সেটা একেবারেই হওয়া উচিত নয়। বিশেষ করে সামনে অলিম্পিক্সের যোগ্যতা অর্জন পর্ব শুরু হচ্ছে। তাই আমাদের ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে এখন সব চেয়ে জরুরি হল ফিট থাকা।’’

আর এক প্রাক্তন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন মধুমিতা বিস্ত বলছেন, ‘‘সব প্রতিযোগিতায় ১০০ শতাংশ দেওয়া কোনও খেলোয়াড়ের পক্ষেই সম্ভব নয়। আমাদের খেলোয়াড়েরা বিশ্বের সেরাদের হারানোর ক্ষমতা রাখে। সেই জন্যই এত প্রত্যাশার চাপ। তা ছাড়া এক জন খেলোয়াড়ের জীবনে ওঠা-পড়া তো থাকেই। শ্রীকান্ত যাঁর কাছে ইন্ডিয়া ওপেনে ফাইনালে হারল, সেই ভিক্টর অ্যাক্সেলসেনের কথাই ধরা যাক। গত বছর চোট লাগার পর থেকে ভিক্টর অনেক প্রতিযোগিতায় নামতেই পারেনি। এ বছর কিন্তু ভিক্টর সেই ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। চলতি মরসুমে বার্সেলোনায় স্পেন মাস্টার্স খেতাব জয়ের পাশাপাশি, অল ইংল্যান্ডে রানার্স হয়েছে। তা ছাড়া চোট থেকে উঠে আসার পরে যে কোনও খেলোয়াড়ের আত্মবিশ্বাস কিছুটা নড়বড়ে থাকে। ঝুঁকি নিয়ে শট মারব কি মারব না, ফের চোট লেগে যাবে না তো? এ সব চিন্তা থাকে। কিছুটা সময় দিলেই সেটা কেটে যায়।’’

ক্রীড়া মনোবিদ অনুশীলা ব্রহ্মচারী অবশ্য মনে করছেন যে কোনও খেলাধুলোয় সফল হতে গেলে চাই মানসিক কাঠিন্য। তিনি বললেন, ‘‘খেলোয়াড়দের ফিটনেস এবং দক্ষতা বাড়ানোর প্রশিক্ষণ যে রকম দেওয়া হয় সে রকমই মানসিক কাঠিন্য বাড়ানোর অনুশীলনও করা উচিত। খুব ছোটবেলা থেকেই সেটা একই সঙ্গে করলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রবল চাপ সামলানো সহজ হয়ে যায়। জাতীয় শিবিরে তাই বাধ্যতামূলক করা উচিত স্কিল এবং ফিটনেসের পাশাপাশি মানসিক জোর বাড়ানোর প্রশিক্ষণও।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kidambi Srikanth PV Sindhu Badminton
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE