Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
দিল্লি থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার পরীক্ষা শাহরুখের দলের

কোচ হিসাবে পন্টিংকে আনার চেষ্টায় নাইট রাইডার্স

এই মুহূর্তে কেকেআরের পক্ষ থেকে সরকারি ভাবে কেউ এ নিয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না। তবে শাহরুখের দলের শীর্ষমহল থেকে জোরালো ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে যে, পন্টিংই এখন কোচ হিসেবে নাইট কর্তাদের চোখে এক নম্বর পছন্দ।

নজরে: আইপিএলে এ বার গুরু পন্টিংকে দেখা যাবে কলকাতায়? ফাইল চিত্র

নজরে: আইপিএলে এ বার গুরু পন্টিংকে দেখা যাবে কলকাতায়? ফাইল চিত্র

সুমিত ঘোষ 
শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৯ ০৩:৪০
Share: Save:

ট্রেভর বেলিসকে হাতের মুঠোয় পেয়েও শেষ মুহূর্তে হারানোর ধাক্কা সামলাতে ক্রিকেট সমুদ্রের আরও বড় মাছ ধরার দিকে হাত বাড়িয়েছেন কলকাতা নাইট রাইডার্স কর্তারা। শাহরুখ খানের আইপিএল দল চাইছে রিকি পন্টিংকে কোচ করে আনতে। ক্রিকেটার পন্টিংয়ের আইপিএল যাত্রা শুরু হয়েছিল কেকেআর থেকেই। কোচ হিসেবে ফিরলে দারুণ এক প্রত্যাবর্তন কাহিনি লেখা হতে পারে ইডেনের সবুজ গালিচায়।

এই মুহূর্তে কেকেআরের পক্ষ থেকে সরকারি ভাবে কেউ এ নিয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না। তবে শাহরুখের দলের শীর্ষমহল থেকে জোরালো ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে যে, পন্টিংই এখন কোচ হিসেবে নাইট কর্তাদের চোখে এক নম্বর পছন্দ। তাঁর সঙ্গে কথাবার্তাও শুরু হয়েছে বলে খবর। গত বছর পন্টিং ছিলেন দিল্লি ক্যাপিটালসের প্রধান কোচ। উপদেষ্টা হিসেবে সেই দলে ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। নাইট কর্তারা যদি পন্টিংকে নিতে চান, দিল্লি থেকে ছিনিয়ে আনতে হবে। শোনা যাচ্ছে, তাতেও দমে যাচ্ছেন না তাঁরা। গত বছর আইপিএলে ভাল করতে না পারায় মরিয়া নাইট কর্তারা সর্বাত্মক ভাবে পন্টিংয়ের জন্য ঝাঁপাতে প্রস্তুত।

বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, কেকেআরের শীর্ষমহল পন্টিংকে বাজিয়ে দেখতে শুরু করেছে এবং প্রাথমিক কথাবার্তার ফল খুব নেতিবাচক নয়। তবে পন্টিং দিল্লির কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসলে আবার পরিস্থিতি ঘুরে যাবে কি না, সেটাও দেখার। গত বছর তরুণ দল নিয়ে ভাল করার পরে দিল্লি ক্যাপিটালসও কি সহজে তাঁকে ছেড়ে দিতে চাইবে? মনে তো হয় না।

২০১৫ থেকে কেকেআরের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করা জাক কালিসের সঙ্গে এ বছরই ছাড়াছাড়ি হয় নাইটদের। গত বছরের আইপিএলে একেবারেই প্রত্যাশিত ফল করতে পারেনি কলকাতার দল। সঙ্গে সহকারী কোচ সাইমন ক্যাটিচকেও তাই বিদায় জানানো হয়। গত বছর আইপিএল চলাকালীন এমনও শোনা গিয়েছিল যে, দলের মধ্যে তীব্র মতপার্থক্যের চোরা স্রোত চলছে। আন্দ্রে রাসেলের মতো তারকা বার বার সাংবাদিক সম্মেলনে এসে প্রকাশ্যে অসন্তোষ প্রকাশ করে গিয়েছেন তাঁর ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে।

ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার এবং কেকেআরের সেরা ম্যাচউইনার উপরের দিকে ব্যাট করতে চাইছিলেন। আর কেকেআর টিম ম্যানেজমেন্ট তাঁকে ক্রমাগত নীচের দিকে নামিয়ে যাচ্ছিল। রাসেল-সহ দলের ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটারেরা প্রায় বিদ্রোহীই হয়ে উঠেছিলেন। কালিস এবং কেকেআরের বিচ্ছেদ যদিও ঘটেছিল দু’পক্ষে সৌজন্য বজায় রেখে।

এ বারে অধিনায়ক দীনেশ কার্তিকের ভবিষ্যৎ কী, তা নিয়ে নাইট অন্দরমহল থেকে এখনও কোনও ইঙ্গিত নেই। তবে নতুন কোচিং টিম যে কর্তারা আনতে চেয়েছেন, তা শুরু থেকেই স্পষ্ট ছিল। আরও বলিষ্ঠ কাউকে দায়িত্ব দিতে চাইছিলেন তাঁরা। পন্টিং সে দিক দিয়ে খুব পছন্দের নাম। এক দিকে যেমন তাঁর মধ্যে অস্ট্রেলীয় কাঠিন্য রয়েছে, যেমন ছেলেদের জন্য সময় দেন, তেমনই ক্রিকেট জীবনে নিজে ছিলেন এত বড় ম্যাচউইনার। ড্রেসিংরুমের শ্রদ্ধা আদায় করে নেওয়া তাই কঠিন হবে না।

পন্টিংয়ের জন্য যদিও শুরু থেকে ঝাঁপাননি কেকেআর কর্তারা। শাহরুখের টিমের সঙ্গে প্রায় চূড়ান্ত কথাবার্তা হয়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপজয়ী কোচ ট্রেভর বেলিসের। এর আগেও নাইটদের কোচ হিসেবে কাজ করে গিয়েছেন বেলিস। তাঁকে সরিয়েই ক্রিকেট-গুরু হিসেবে যাত্রা শুরু হয়েছিল কালিসের। কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে কেকেআরকে টপকে সানরাইজার্স হায়দরাবাদে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বেলিস। অপ্রত্যাশিত এই মোচড়ে কেকেআর কিছুটা বেসামাল হয়ে পড়ে। তার পরেই তাদের শীর্ষ কর্তারা পন্টিংকে নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেন।

গত বার দিল্লি ক্যাপিটালসে ছিলেন পন্টিং। ডাগআউটে পাশাপাশি বসতে দেখা যেত তাঁকে এবং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে। দু’জনের জুটিতে প্রথম বার আইপিএলে চনমনে দেখিয়েছিল দিল্লিকে। শ্রেয়স আইয়ারের নেতৃত্বে প্লে-অফ পর্যন্ত পৌঁছেছিল তারা। মনে করা হচ্ছিল, এই সফল যাত্রার প্রধান কারিগর দুই মাস্টার। সৌরভ এবং পন্টিং। কেকেআর যদি রাজধানীতে হানা দিয়ে তুলে আনতে পারে পন্টিংকে, নিঃসন্দেহে বড় দাঁও হবে। যদিও বেলিসের সঙ্গে সমস্ত কিছু ঠিকঠাক হয়ে গিয়েও শেষ মুহূর্তে যে ভাবে চুক্তি বানচাল হয়ে গেল, তার পরে সইসাবুদ না হওয়া পর্যন্ত আর কেউ কিছু ধরে নিতে রাজি নয়।

কেউ মুখ খুলতে না চাইলেও নাইট অন্দরমহলে সেই শুরুর দিন থেকেই অনেকে রিকি পন্টিং নামটা শুনলেই উত্তেজিত হয়ে পড়েন। ক্রিকেটার পন্টিংকে কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা তাঁদের কাছে দারুণ। সব সময় জুনিয়র ক্রিকেটারদের সাহায্য করতেন। তাঁর পরামর্শেই নেট বোলার হিসেবে বল করতে আসা অশোক ডিন্ডাকে সই করিয়েছিল নাইট রাইডার্স। বাংলার পেসারকে সব সময়ই নানা পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করেছেন পন্টিং। আইপিএলে দিল্লির আগে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সেও কোচিং করিয়েছেন তিনি। বিশ্বকাপে ডেভিড ওয়ার্নার, অ্যারন ফিঞ্চ, স্টিভ স্মিথদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাই কোচ হিসেবে অভিজ্ঞতাতেও পিছিয়ে নেই তিনি।

‘মিশন পন্টিং’ সফল করতে পারলে কলকাতার ক্রিকেট ভক্তদের জন্য দুর্দান্ত শারদীয়া উপহারই দিতে পারবেন শাহরুখ খান!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket IPL KKR Ricky Ponting Delhi Capitals
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE