দুই আইকন। বহু দিন পর শহরে একসঙ্গে।
ছেষট্টির ডেভিস কাপ ফাইনালে জন নিউকোম্ব-টনি রোচের অবিসংবাদী অস্ট্রেলীয় জুটিকে হারিয়েছিলেন জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। রামনাথন কৃষ্ণনের পাশে খেলে। ঠিক পঞ্চাশ বছর পরে দক্ষিণ কলকাতা সংসদের জন নিউকোম্ব-টনি রোচের কাছে জয়দীপ হেরে বসলেন! কার জুড়ি হয়ে?
লিয়েন্ডার পেজ!
যে কোনও পর্যায়ের ডাবলসে মঙ্গলবারই জীবনে প্রথম বার জুটি বেঁধেছিলেন জয়দীপ-লিয়েন্ডার। ডিকেএসের কোর্টে ২৯ বছর ধরে ডাবলস চ্যাম্পিয়ন হয়ে আসছেন বলে ময়দান কাঁপানো দুই প্রাক্তন তারকা ফুটবলার শ্যাম থাপা-প্রদীপ চৌধুরী জুটির ক্লাবে আদরের নাম নিউকোম্ব-রোচ। ডিকেএসের প্রাণপুরুষ হিরণ্ময় চট্টোপাধ্যায় (টেনিসমহলের সোনাদা) ৩২ বছর পরে প্রথম বাঙালি হিসেবে সর্বভারতীয় টেনিস ফেডারেশনের মহাসচিব হওয়ার নজির গড়ায় তাঁর আঁতুরঘর ডিকেএস এ দিন ঘরের ছেলেকে বরণীয় ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতিতে স্মরণীয় সংবর্ধনা দিল। সেই ঝলমলে অনুষ্ঠানের একটা অংশ চার গেমের সেলিব্রিটি ডাবলস ম্যাচ। মূল উদ্দেশ্য নিছক মজা। কিন্তু কোথাও যেন ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে থাকল জয়দীপ-লিয়েন্ডারের কোনও পয়েন্ট জেতার উৎসবপালনে হাই-ফাইভ! যাঁদের সম্পর্ক খুব একটা বন্ধুত্বপূর্ণ বলে এ দেশের টেনিসমহলে বোধহয় তেমন সুনাম নেই।
কোর্টের ভেতর যদি এহেন অভূতপূর্ব জুটি সৃষ্টি করে থাকে হিরণ্ময়ের সংবর্ধনা-সন্ধে, তা হলে কোর্টের বাইরে বহু পুরনো জুটির প্রত্যাবর্তনও ছিল এই অনুষ্ঠানে। অনেক অনেক দিন পরে কলকাতার সর্বকালের সেরা ক্রীড়া-জুটি মঙ্গলবার পাশাপাশি চেয়ারে বসলেন। আড্ডা মারলেন। এক ম়ঞ্চ থেকে ভারতীয় টেনিসের সর্বময় কর্তার কাছে অনুরোধ রাখলেন, এককালের ভারতীয় টেনিসের মক্কা কলকাতা থেকে ফের চ্যাম্পিয়ন টেনিস প্লেয়ার তৈরি করার।
তাঁরা— সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং লিয়েন্ডার পেজ!
লিয়েন্ডার তো এমনকী বক্তব্য রাখতে গিয়ে রীতিমতো নস্টালজিক। তুলে আনলেন সেই ১৯৯১-র ফেব্রুয়ারিতে পিকে-র (প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়) কাছে সল্ট লেক সাইতে তাঁর আর সৌরভের জুটিতে ট্রেনিং করার প্রসঙ্গ। পুরনো বন্ধুকে তাঁর সামনেই নির্দ্বিধায় ঘোষণা করলেন, ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক। সৌরভ আবার তাঁর কাছে লিয়েন্ডার কী বোঝাতে গিয়ে বললেন, ‘‘যখনই ওর খেলা দেখি মনে হয় যেন আমি নিজে খেলছি। কারণ, লিয়েন্ডারও সব সময় জিততে চায়।’’ চাইলেন লিয়েন্ডার ২০২০ অলিম্পিক্সও খেলুন। ‘‘তার জন্য লিয়েন্ডার চাইলে আমিই ওর সঙ্গে ট্রেনিং করতে রাজি আছি,’’ বলে দিতেও দ্বিধা করলেন না সৌরভ।
সর্বভারতীয় টেনিস ফেডারেশনের মহাসচিব হিরণ্ময় চট্টোপাধ্যায়ের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে
ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, লিয়েন্ডার পেজ ও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। মঙ্গলবার দক্ষিণ কলকাতা সংসদে।
তারকাখচিত অনুষ্ঠানে রাজ্যের দুই হেভিওয়েট মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ হাকিম, মহানাগরিক শোভন চট্টোপাধ্যায়, মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমারের পাশাপাশি ছিলেন চুনী গোস্বামী, নরেশ কুমার, আখতার আলি, অগ্নিমিত্রা পল-এর মতো সমাজের নানা জগতের সেলিব্রিটিরা। কিন্তু অনুষ্ঠানটা আবর্তিত হল সৌরভ-লিয়েন্ডারকে ঘিরে। সিএবি প্রেসিডেন্ট সৌরভের সামনেই টেনিসের সর্বময় কর্তা হিরণ্ময়ের প্রখর সাংগঠনিক দক্ষতা, দূরদর্শিতা, পরিশ্রমের ক্ষমতাকে বাংলার ক্রিকেট প্রশাসনেও কাজে লাগানোর অনুরোধ রাখলেন রাজ্যের মন্ত্রী থেকে প্রবাদপ্রতিম খেলোয়াড়েরা। আবার স্বয়ং এআইটিএ মহাসচিব হিরণ্ময় মঞ্চে দাঁড়িয়ে হাটে হাঁড়ি ভাঙলেন— ‘‘আজ সকালে লিয়েন্ডারের সঙ্গে গল্ফ খেলছিলাম। তখন ওকে বলেছি, তুই যদিও বলিস আরও পাঁচ বছর খেলবি, কিন্তু আমি চাই আর খেলিস না। ডেভিস কাপে আর একটা ডাবলস ম্যাচ জিতলে বিশ্ব রেকর্ড হবে। তার পর খেলা ছেড়ে দে। আয়, দু’জনে মিলে আরও একটা লিয়েন্ডার পেজ তৈরি করার কাজে নামি।’’
সত্যিই কি দেশের সর্বময় টেনিস কর্তা চান, আড়াই দশকের বেশি সার্কিটে কাটানো লিয়েন্ডার এ বার খেলা ছেড়ে তাঁর উত্তরসূরি তৈরির কাজে এআইটিএর হাতে হাত ধরে কাজে নামুন?
লিয়েন্ডার শুধু মুচকি হাসলেন!
ছবি: উৎপল সরকার
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy