Advertisement
E-Paper

‘পারফরম্যান্সের কোনও মূল্যই নেই!’ ক্ষুব্ধ মনোজ

হতাশা, যন্ত্রণা, আফসোস মিলেমিশে একাকার মনোজের গলায়। কেন জাতীয় নির্বাচকদের অনাস্থা, বুঝে উঠতে পারছেন না। প্রশ্ন জন্ম নিচ্ছে নিজের মধ্যেই।

সৌরাংশু দেবনাথ

শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৮ ১৯:২২
ব্যাটেই সব জবাব দিতে চান মনোজ। ফাইল ছবি।

ব্যাটেই সব জবাব দিতে চান মনোজ। ফাইল ছবি।

হোয়াটসঅ্যাপের প্রোফাইল পিকচারই অসম্ভব প্রতীকী! উইলিয়াম টেলের লোকগাথাকে মনে করিয়ে দাঁড়ানো কিশোরের মাথায় আপেল। প্রবাদ অনুসারে, বিখ্যাত ধনুর্ধরের তির বিদ্ধ করেছিল আপেল, অক্ষত ছিল শিশু। এ ক্ষেত্রে সামান্য বদলেছে ব্যাপারটা। তির এসে বিঁধেছে কিশোরের কপালে। পাশে লেখা, ‘ট্রাস্টিং টু মাচ কিলস ইউ’। মানে দাঁড়ায়, কাউকে বেশি ভরসা করলে ডুবতে হবে!

বিশ্বাসভঙ্গের পালা কোথাও কি ক্রিকেটীয় জীবনের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে? কে-ই বা তাঁর বিশ্বাস ভাঙল? মনোজ তিওয়ারির গলায় মুচকি হাসি, “যা বোঝার বুঝে নিন। জীবনে কারও ওপর ভরসা বেশি রাখলেই মৃত্যু। এটা তো আর খারাপ কথা নয়। বরং এটাই জীবনে ঘোর বাস্তব।”

বাস্তব যে কত রুক্ষ হতে পারে, তা অবশ্য হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেছেন। কেরিয়ারে এমন কখনও হয়নি যে, সিনিয়র দল বাদ দিয়ে আরও ছ’টা দল গড়া হয়েছে আর তিনি তার কোনওটাতেই নেই। এ বার তাই হয়েছে। আনন্দবাজার ডিজিটালকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে হতাশা, যন্ত্রণা, অভিমান সব মিশে গেল বাংলা অধিনায়কের গলায়।

দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ দলের বিরুদ্ধে চার দিনের ম্যাচের জন্য ভারত ‘এ’ দল। দলীপ ট্রফির জন্য তিন স্কোয়াড। অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ ও দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ দলের বিরুদ্ধে চতুর্দেশীয় সিরিজের জন্য আরও দুই স্কোয়াড। তার মানে, দেশের সেরা ১০০ জনেও বাংলার অধিনায়কের জায়গা হচ্ছে না!

মনোজ: নিজের মধ্যেই প্রশ্নগুলো জন্ম নিচ্ছে। বিসিসিআই বা সিলেক্টরদের কাউকে প্রশ্ন করতে চাই না। বুঝতে পারছি না যে হচ্ছেটা কী। যে ফরম্যাটে ভাল করেছি, সেখানে সুযোগ পাচ্ছি না। একশো জনেও নেই কেন, এটা তো জানতে হবে। আমি কি কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছি? আমি কি খারাপ আচরণ করেছি? যদি আমার কোথাও ভুল থাকে, সেটাকে শুধরে তো নিতে হবে। কিন্তু কারণটাই তো জানতে পারছি না। যদি কারণ কেউ না বলে, তখন তো নিজে থেকে তা বুঝে নিতে হবে।

ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক থেকেছেন মনোজ। ফাইল ছবি।

গত মরসুমে লিস্ট-এ ক্রিকেটে ১২৬.৭০ গড়ে ৫০৭। বিজয় হাজারে ট্রফি ও দেওধর ট্রফিতে গড় ছিল ১০০-র বেশি। এত ধারাবাহিক থেকেও তো লাভ হল না!

মনোজ: ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে এই রেকর্ড কারও নেই। আমি তো কোনও দিন দেখিনি ওভারের ফরম্যাটে কেউ ১২৭ গড় করেও বাদ পড়েছে। শেষ বছর দেওধর ট্রফিতে কর্নাটকের বিরুদ্ধে ১২০ করে আউট হয়েছিলাম। কিন্তু তার পরও বলা হয়েছিল যে আমি কেন ম্যাচ শেষ করে আসতে পারিনি। নিজেকে বললাম যে, ঠিক আছে, ম্যাচ শেষ করে আসা উচিত ছিল। ফাইনালে কর্নাটকের বিরুদ্ধেই ৫৯ করে ম্যাচ জিতিয়ে ফিরলাম। ওই ইনিংস না খেললে দল চাপে পড়ে যেত। প্রশ্ন হল, আমি দলকে চ্যাম্পিয়ন করিয়েও সুযোগ পেলাম না। কিন্তু, যাঁরা পারফর্মই করেনি, তাঁরা তো এই দলগুলোতে রয়েছে। এটা তো হতে পারে না। আমি কারও নাম নিতে চাইনি। কিন্তু, এগুলো দেখলে খারাপ তো লাগেই। পারফরম্যান্সের কোনও মূল্যই নেই দেখলে দুঃখ তো হবেই।

গত মরসুমে মোট ১২৬০ রান করেছেন। সঙ্গে ২১ উইকেট। এর পরেও ‘এ’ দলে নেই। নিজেকে উদ্দীপ্ত করতে সমস্যা হচ্ছে না?

মনোজ: হচ্ছে তো বটেই। আমি বরাবর দলের কথা ভেবে খেলি। দলের স্বার্থে দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় আউটও হয়েছি। গত বার দলীপ ট্রফিতে ৭৮ রানে ব্যাট করার সময় যেমন সাত উইকেট পড়ার পর মারতে গিয়ে আউট হয়েছি। চাইলে অ্যাভারেজ ভাল রাখতে পারতাম নট আউট থেকে। কিন্তু তা কখনও করিনি। দলীপের ফাইনালে দ্বিতীয় ইনিংসে আমাকে ভুল আউট দেওয়া হল ৩৮ রানে। আম্পায়ার পরে আমাকে সরি বলল। আমি তো একটা বড় ইনিংস খেলতেই পারতাম! রঞ্জিতেও দু’বার বাজে আউটের শিকার হয়েছি। যদি ভাল উইকেটে ওখানে একশো-দেড়শো করতাম, তা হলে রান কোথায় গিয়ে দাঁড়াত? অনেক বার চোট নিয়েও দলের জন্য লড়ে গিয়েছি। আইপিএলের আগে ঝুঁকি নিয়েও বাংলার হয়ে খেলেছি। মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে রঞ্জির কোয়ার্টার ফাইনালে কাফ মাসলে চোট নিয়েও নেমে পড়েছিলাম। আজকের দিনে এত টাকা হারানোর ঝুঁকি কেউ নেবে? অন্য কেউ হলে হয়তো আইপিএলের কথা ভেবে নামতই না। আমি তা করিনি। দু’বছর আগে কেএসসিএ প্রতিযোগিতাতেও পাঁচ-ছ’টা সেলাই নিয়ে নেমেছি। ব্যাট ধরতে পারছিলাম না, তা-ও নেমেছিলাম। এগুলো দেখা হবে না?

আরও পড়ুন: ইতিহাস গড়ছে ইংল্যান্ড ক্রিকেট, সঙ্গী কোহালিরা

আরও পড়ুন: ১৯ সেপ্টেম্বর এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তান​

আইপিএল হয়তো একটা বড় কারণ। নয় কি?

মনোজ: যদি আইপিএল পারফরম্যান্সই বিচার্য হয়, তবে ২০১৭ সালে তো আইপিএলে ভাল রান করেছিলাম। তখন তো সুযোগ দেওয়া হয়নি। এ বার কিংস ইলেভেন পঞ্জাব আমাকে না খেলালে কী করব? আমার সঙ্গে বরাবর এটাই হয়। যখন ভাল করি, তখন সুযোগ দেওয়া হয় না। এক বার কনফিডেন্স ভেঙে দিলে তা আর ফেরানো যায় কি?

বাংলার নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে।

মনোজ: বাংলার নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়ার কথা বলিনি। তবে এটা তো চিরস্থায়ী কাজ নয়। প্রাথমিক দল গড়ার পরে অধিনায়ক ঠিক হয়। কিন্তু মনের মধ্যে একটা খারাপ লাগা তো রয়েছে। ধারাবাহিক থাকার পরও আমাকে বর্ষসেরা করা হয়নি। সেটা সৌজন্য দেখিয়ে একটা ফোন করেও তো বলা যেত। এক জন জুনিয়র পেয়েছে বলে কিন্তু রাগ নেই। খারাপ লাগে ক্রিকেট ক্রমশ রাজনীতির জায়গা হয়ে ওঠায়। আমি মনেপ্রাণে যা বিশ্বাস করি, সেটা বলি।

সিএবিতে কী বলে এলেন তা হলে?

মনোজ: আমার একটাই যন্ত্রণা বা অভিমান এখানেও। বাংলার প্রতি দায়বদ্ধতা, একাত্মতা কেন দেখা হবে না? একটা ক্রিকেটারের সঙ্গে যদি অন্যায় হয়, তবে তো সে সিএবি-র কাছেই যাবে। কিন্তু, সেখান থেকেই যদি রেসপন্স না আসে, তা হলে মন ভেঙে তো যাবেই। আমিও তো মানুষ। কষ্ট তো হবেই। যতই মন শক্ত করে রাখি না কেন, দিনের শেষে প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খায় মাথায়। উত্তর পাই না বলেই অসহায় লাগে!

আরও পড়ুন:অবসরপ্রাপ্তদের এই একাদশ টি২০-তে টেক্কা দিতে পারে যে কোনও দলকে​

আরও পড়ুন: কে বলল তেত্রিশ? রোনাল্ডোর বয়স আসলে বিশ!​

Cricket Manoj Tiwary
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy