করোনার জন্য গত বছর বাতিল হওয়ার পরে এ বার উইম্বলডন শুরু হতেই দেখছি একটা বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে কোর্ট নিয়ে। বিশেষ করে, সেন্টার কোর্ট। রজার ফেডেরারের প্রতিপক্ষ পড়ে গিয়ে ম্যাচ ছেড়ে দেওয়ার পরেই সেরিনা উইলিয়ামসও তাই করল।
১৯৫৯ থেকে ’৭৪ পর্যন্ত উইম্বলডনে খেলার অভিজ্ঞতা আমারও আছে। সিঙ্গলসে শেষ ষোলোয় উঠেছি, ডাবলসে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছি। আমাদের সময় তো ঘাসের কোর্টের জন্য বিশেষ জুতোও ছিল না, এখন যা আছে। তখনও বৃষ্টি হলে কোর্টে একটু ভিজে ভাব থাকত। পিচ্ছিল হয়ে যেত কোর্ট। এটা নতুন কোনও ব্যাপার নয়। তাই জানি না, এই ব্যাপারটা নিয়ে এখন এত কেন
বিতর্ক হচ্ছে। উইম্বলডনের কথা উঠলেই মনে পড়ে যায় আমাদের খেলোয়াড় জীবনের কথা। এখনও আমার কাছে সেরা টেনিস প্রতিযোগিতা উইম্বলডন। কারণ ইংল্যান্ডে এটা শুধু একটা টেনিস প্রতিযোগিতা নয়, উৎসব। সবাই অপেক্ষা করে থাকে কবে উইম্বলডন শুরু হবে। এক বছর আগে থেকেই টিকিটের চাহিদা শুরু হয়ে যায়। ফাইনালের টিকিট পাওয়া মানে তো বিরাট বড় প্রাপ্তি। বাকি তিনটে গ্র্যান্ড স্ল্যামের থেকে উইম্বলডনের ঐতিহ্য আলাদা। অন্য গ্র্যান্ড স্ল্যামে যে কোনও রঙের পোশাকে নামতে পারলেও এখানে সাদা পোশাকে খেলতে হয়। উইম্বলডন মানেই স্ট্রবেরি, ক্রিম। টেনিসকে কেন্দ্র করে এই উৎসবে সবাই সামিল হতে মুখিয়ে থাকে।
এ বারের আসি খেলোয়াড়দের প্রসঙ্গে। আমার মতে এ বারও জয়ের দৌড়ে এগিয়ে জোকোভিচই। দু’বছর আগে ফাইনালে ফেডেরার দুটো ম্যাচ পয়েন্ট পেয়েও জিততে পারেনি। হাঁটুতে দুটো অস্ত্রোপচারের পরে চল্লিশ বছর বয়েসেও খেলতে নেমেছে একটাই উদ্দেশ্য নিয়ে— নবম ট্রফি জয়। কিন্তু দু’সপ্তাহ টানা খেলে যাওয়ার ধকল সামলে ওর পক্ষে এ বার চ্যাম্পিয়ন হওয়া খুব কঠিন। তার উপরে ফাইনালে উঠলেও হয়তো জোকোভিচের মোকাবিলা করতে হবে। যেটা সহজ নয়। নোভাক এ বারও দারুণ ফর্মে আছে। ওর সার্ভিস আগের চেয়ে অনেক ধারালো হয়েছে। তা ছাড়া ওর রিটার্ন অনবদ্য। এত দ্রুত রিটার্ন করতে পারে, যা যে কোনও প্রতিপক্ষকে সমস্যায় ফেলে দিতে পারে। ফিটনেসও দুর্দান্ত। ফরাসি ওপেনে নাদালকে সেমিফাইনালে হারানোর ম্যাচেও যেটা স্পষ্ট বোঝা গিয়েছে। সব চেয়ে বড় কথা, এ মরসুমে দুটো গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে আত্মবিশ্বাসও দারুণ জায়গায় রয়েছে জোকোভিচের। শুক্রবারও দাপটে তৃতীয় রাউন্ডে জিতল জোকোভিচ। তিন সেটে হারাল যুক্তরাষ্ট্রের ডেনিস কুডলাকে।
এ বার আরও এক জনকে নিয়ে চর্চা চলছে। ইটালির মাত্তেয়ো বেরেত্তিনি। দু’বছর আগে ছেলেটা কলকাতায় ডেভিস কাপে খেলে গিয়েছে। তখনই দেখেছিলাম ওর প্রতিভা। এ বার তো প্রস্তুতি প্রতিযোগিতা কুইন্স ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপেও জিতেছে। বরিস বেকারের সঙ্গেও ওর তুলনা শুরু হয়েছে। তবে বেকার অন্য পর্যায়ের খেলোয়াড়। সেই পর্যায়ে পৌঁছতে এখনও বেরেত্তিনিকে অনেক পথ পেরোতে হবে। তবে এও বলে রাখি, জোকোভিচকে টক্কর দেওয়ার ক্ষমতা কিন্তু এই ছেলেরই রয়েছে। বড় চমক দিতে পারে বেরেত্তিনি।
সানিয়াদের ঐতিহাসিক জয়: শুক্রবার উইম্বলডন দেখল মিক্সড ডাবলসে ‘অল ইন্ডিয়ান’ দ্বৈরথ। যে লড়াইয়ে সানিয়া মির্জা এবং রোহন বোপান্না জুটি ৬-২, ৭-৬ (৫) ফলে হারাল রামকুমার রমানাথন এবং অঙ্কিতা রায়না জুটিকে। একই দিনে জিতলেন ইগা শিওয়নটেক। হারলেন গ্যাব্রিনে মুগুরুজ়া।