Advertisement
E-Paper

প্রয়াত বাবার স্বপ্নপূরণ করার দিন সিরাজের

টেনিস বলের ক্রিকেটে একাধিক ম্যাচ জেতানোর খবর পেয়ে সিরাজের বাবা তাঁকে ভর্তি করিয়ে দেন স্থানীয় কোচিং ক্যাম্পে।

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ ০৬:২৩
অনন্য রেকর্ড সিরাজের। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া

অনন্য রেকর্ড সিরাজের। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া

হায়দরাবাদের সেই দরিদ্র আবহের মধ্যে থেকে উঠে এসে তিনি যে ক্রিকেটার হবেন, সেটাই বিশ্বাস করতে পারতেন না পরিবারের সদস্যেরা। শুধু তাঁর বাবা মহম্মদ ঘউস ছেলের স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে দিনরাত পরিশ্রম করে যেতেন। অটোচালক বাবা ভাবতেন, আরও কয়েকটা অতিরিক্ত ভাড়া যদি খাটতে পারি, ছেলেটাকে ভাল করে ক্রিকেট খেলাতে পারব। বাবা-ছেলের সেই সংগ্রাম, সেই সাধনার ফল? মেলবোর্নে ঐতিহাসিক বক্সিং ডে-তে টেস্ট অভিষেক ঘটাচ্ছেন মহম্মদ সিরাজ।

টেনিস বলের ক্রিকেটে একাধিক ম্যাচ জেতানোর খবর পেয়ে সিরাজের বাবা তাঁকে ভর্তি করিয়ে দেন স্থানীয় কোচিং ক্যাম্পে। অর্থাভাবে সেই কোচিং সেন্টারের খরচ চালানোও সম্ভব হত না। কিন্তু ছোটবেলার কোচ কে. সাইবাবা খুদে পেসারের প্রতিভা দেখে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিতে রাজি হয়ে যান। সে দিন থেকেই শুরু হয় সিরাজের যাত্রা। যা স্বীকৃতি পাচ্ছে শনিবারের মেলবোর্নে। অস্ট্রেলিয়ায় খেলতে গিয়েই বাবাকে হারান সিরাজ। কিন্তু তাঁর স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করছেন ছেলে।

অনূর্ধ্ব-১৯ প্রতিযোগিতায় নামার আগে জুতো ছিল না সিরাজের কাছে। অটোচালক বাবা সারা রাত ধরে অটো চালিয়ে প্রথম জুতো কিনে দেন সিরাজকে। সেই জুতো পরে পাঁচ উইকেট নিয়ে বাবার পরিশ্রমকে যথার্থ সম্মান জানান সিরাজ। বাবার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে দেশে ফিরে আসার সুযোগও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তরুণ পেসার। ভারতের টুপি পরেই সম্মান জানাতে চান বাবার লড়াইকে।

সেই সুযোগ এসে যাচ্ছে মেলবোর্নে। শুক্রবার আনন্দবাজারকে ফোনে সিরাজের কোচ সাইবাবা বলছিলেন, ‘‘আমার হাতে সিরাজকে তুলে দিয়ে ঘউস বলেছিল, ছেলে যেন অন্তত একটি টেস্ট খেলতে পারে দেশের হয়ে। কথা দিয়েছিলাম, আমি সিরাজকে তৈরি করবই। শনিবার ঘউস ও আমার স্বপ্ন পূরণের দিন। আমি চাই সকলে ওকে আশীর্বাদ করুন। সিরাজ যেন প্রমাণ করতে পারে, ক্রিকেটার হওয়ার জন্য সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মানোর প্রয়োজন নেই।’’ যোগ করেন, ‘‘বাবার আকস্মিক প্রয়াণের পরে ও কিন্তু চাইলেই দেশে ফিরতে পারত। বাবা ছিল ওর প্রিয় বন্ধু। ওঁকে হারানোর পরে ওর মনের মধ্যে কী চলতে পারে তার আন্দাজ করতে পেরেছিলাম। কিন্তু দেশে ফিরে এলে এই ম্যাচটি কি ও খেলতে পারত? অস্ট্রেলিয়ায় থেকে গেল বলেই না বাবার ইচ্ছা পূরণের সুযোগ পাচ্ছে।’’

সিরাজের অভিষেক ম্যাচ তাঁর ক্যাম্পের খুদে ক্রিকোটারদের দেখানোর জন্য জায়ান্ট স্ক্রিন বসিয়েছেন প্রাক্তন রঞ্জি ট্রফি ক্রিকেটার সাইবাবা। বলছিলেন, ‘‘সিরাজের কাহিনি প্রত্যেককে অনুপ্রাণিত করে। আমি চাই খুদে ক্রিকেটারেরাও শিখুক, মনের জোর কোথায় পৌঁছে দিতে পারে।’’

হায়দরাবাদ দলের অধিনায়ক ও সিরাজের রাজ্য দলের সতীর্থ তন্ময় আগরওয়ালও উচ্ছ্বসিত বন্ধুকে টেস্ট দলে দেখার জন্য। সিরাজ ও তন্ময় বহু দিনের বন্ধু। ২০১৮ সালে বিজয় হজারে ট্রফির সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক হওয়ার পাশাপাশি রঞ্জিতেও প্রচুর উইকেট ছিল সিরাজের। এ বারের আইপিএলে ৯ ম্যাচে ১১ উইকেট পেয়েছেন তিনি। প্রথম বোলার হিসেবে আইপিএলে দু’টি মেডেন ওভার আদায় করে নেন কেকেআরের বিরুদ্ধে। আট রানে তিন উইকেট নেন তিনি। তন্ময়ের কথায়, ‘‘প্র্যাক্টিস শেষ হয়ে গেলেও একা একা একটি স্টাম্প বসিয়ে বল করে যেত সিরাজ। ওকে কখনও ছুটি নিতে দেখিনি। বিশ্রামের দিনেও বাড়িতে থাকত না। বলত, বসে থাকলে বাবার স্বপ্নপূরণ কে করবে?’’ তন্ময় আবেগাপ্লুত ভাবে যোগ করেন, ‘‘সিরাজ একদম বদলায়নি। ওর বাবার মৃত্যুর দিনেই ওকে ফোন করি। ও তখন সিডনিতে। জানতে চাই, ফিরবে কি না। পরিষ্কার জানিয়ে দেয়, আমি ফিরে এলে বাবা কি খুশি হত? বলেছিল, আমি জানি, দেশের প্রতিনিধিত্ব করলে বাবার আত্মা সব চেয়ে বেশি শান্তি পাবে।’’

অস্ট্রেলিয়ায় এত দিন সিরাজ নিজেকে অনুশীলনে ডুবিয়ে দিতেন। তন্ময়ের কথায়, ‘‘বাবার মৃত্যুর আঘাত থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ক্রিকেটকেই আঁকড়ে ধরেছে সিরাজ। ওর মধ্যে যে মরিয়া মনোভাব তৈরি হয়েছে, সেটা আমাদেরও অনুপ্রাণিত করে। প্রস্তুতি ম্যাচেই দেখা গিয়েছে সিরাজের দক্ষতা। সিরাজকে বলব, হায়দরাবাদ দলের প্রত্যেকে তোমার জন্য প্রার্থনা করছে। নিজের সেরাটা দিয়ে এসো বন্ধু।’’

শুধু হায়দরাবাদ নয়, বক্সিং ডে-তে মেলবোর্নে ক্রিকেট বিশ্বের নজর থাকবে নিজ়ামের শহরের নতুন ছোটে নবাবের দিকে।

Mohammed Siraj India Australia Test
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy