Advertisement
E-Paper

অশ্বিনই খেলছেন, পয়া মাঠে ইংল্যান্ড ফিরিয়ে আনছে সেই মইনকেও

মনোরম পরিবেশে  বিরাট কোহালি অবশ্য নতুন কোনও প্যাকেজ উপহার দিতে চান না তাঁর প্রতিপক্ষ অধিনায়ককে। শেন ওয়ার্নের কাউন্টি মাঠে সিরিজে সমতা ফেরানোর টেস্টে কোহালি তাঁর আস্তিনের সেরা স্পিন-অস্ত্রকেই নামাচ্ছেন— আর অশ্বিন। 

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৮ ০৪:০৭
চনমনে: চতুর্থ টেস্ট শুরু হওয়ার আগের দিন কোহালি। বুধবার। রয়টার্স

চনমনে: চতুর্থ টেস্ট শুরু হওয়ার আগের দিন কোহালি। বুধবার। রয়টার্স

শেন ওয়ার্নের কাউন্টি মাঠে চক্কর দিতে গিয়ে মাঝেমধ্যে গুলিয়েই যাবে। ক্রিকেট মাঠ নাকি প্যাকেজ ট্যুর নিয়ে ঘুরতে আসা কোনও ট্যুরিস্ট স্পট?

ড্রেসিংরুমের উল্টো দিকে মাঠের মধ্যে দিয়েই যে উঠে গিয়েছে পাঁচতারা হোটেল, তা আগেই লেখা হয়েছে। বুধবার সেখানে গিয়ে আরও চমকে উঠতে হল। হোটেলের মধ্যে দিয়ে ঢুকে দ্বিতীয় তলে প্রেস বক্স। একই ফ্লোরে আবার হোটেলে থাকতে আসা অতিথিদের রুমও আছে। তাঁদের জন্য ক্রিকেট উপলক্ষে নানা রকম আকর্ষণীয় অফারও দেওয়া হয়েছে।

এমন অদ্ভুত অভ্যর্থনাও আর কোনও মাঠে এসে পাওয়া যায় কি না সন্দেহ। একের পর এক বিভাগগুলো সাজানো। ক্রিকেট, রেস্তোরাঁ, হোটেল, গল্ফ, স্পা, ফিজিয়ো, ওয়েডিংস অ্যান্ড ইভেন্টস, মিটিংস অ্যান্ড কনফারেন্সেস। কার কোনটা দরকার সেই মতো জিজ্ঞেস করে উপযুক্ত বিভাগে পৌঁছে যান।

এমন মনোরম পরিবেশে বিরাট কোহালি অবশ্য নতুন কোনও প্যাকেজ উপহার দিতে চান না তাঁর প্রতিপক্ষ অধিনায়ককে। শেন ওয়ার্নের কাউন্টি মাঠে সিরিজে সমতা ফেরানোর টেস্টে কোহালি তাঁর আস্তিনের সেরা স্পিন-অস্ত্রকেই নামাচ্ছেন— আর অশ্বিন।

যদিও টেস্টের আগের দিনের মহড়াতেও অশ্বিনকে দেখে একশো শতাংশ ফিট মনে হল না। নেটে বোলিং করার সময়ে কয়েক বার বল মাটি থেকে তুলতে গিয়ে খুব স্বচ্ছন্দে নীচু হতে পারছিলেন না। খুব বেশিক্ষণ বল করলেন না। সেটা অবশ্য হতেই পারে কারণ পাঁচ দিনের ম্যাচ খেলতে নামার আগের দিন বেশি ধকল নেওয়ার প্রথা ক্রিকেট থেকে উঠেই গিয়েছে। সচিন তেন্ডুলকরের মতো কোহালিকেই যেমন ম্যাচের আগের দিন নেটে ব্যাট করতে দেখা গেল না। শুধু বাউন্ডারির সামনে এসে ছুড়ে দেওয়া বল খেললেন কয়েকটা। সেই সময়েও ব্যাট এবং বলের মিলনের যে আওয়াজ বেরোচ্ছিল, শুনে মনে হচ্ছিল ‘সাউন্ড অফ মিউজিক’।

কিন্তু অশ্বিনের ক্ষেত্রে কোহালি ফর্মুলা প্রয়োগ করা যাবে কি না, সেটা ভেবে দেখার। কারণ, টুকরো টুকরো কতগুলো ছবি ভারতীয় অনুশীলনে দেখা গেল তাঁকে ঘিরে, যা খুব স্বস্তির ছবি কি না বলা কঠিন। যেমন অনুশীলনের শুরুতে অনেকটা সময় তিনি দূরে দাঁড়িয়ে থাকলেন। একটা সময়ে দীর্ঘ আলোচনা করতে দেখা গেল হেড কোচ রবি শাস্ত্রী এবং বোলিং কোচ বি অরুণের সঙ্গে। একটু পরে সেই আলোচনায় যোগ দিলেন অধিনায়ক কোহালিও। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছিল, সেরা স্পিন অস্ত্রের কাছ থেকে শেষ বারের মতো জেনে নেওয়া হচ্ছে, পারবে তো?

এই আলোচনার পরেই দেখা গেল অশ্বিন বোলিং শুরু করলেন। কিছুক্ষণ হাত ঘোরানোর পরে নেটে ব্যাট করতে ঢুকলেন। একটু দূরে তখন দাঁড়িয়ে রবীন্দ্র জাডেজা। যাঁকে তৈরি রাখা হচ্ছিল বিকল্প হিসেবে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে অশ্বিন তাঁকে ছিটকে দিলেন প্রথম একাদশের দৌড় থেকে। চার বছর আগে কোহালির অভিশপ্ত ইংল্যান্ডে সফরে এখানে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে খেলেছিলেন জাডেজা। দুই ইনিংস মিলিয়ে পাঁচটি উইকেট নিলেও দল বিশ্রী ভাবে দুরমুশ হয় ২৬৬ রানে।

সেই ম্যাচের স্কোরকার্ড খুব ভাল ভাবেই মনে আছে কোহালির। গড়গড় করে বলে দিতে পারলেন, দু’দলের হয়েই স্পিনাররা বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে ছয় উইকেট নিয়ে কোহালিদের শেষ করে দিয়েছিলেন মইন আলি। যাঁকে সেই সময়ে অনিয়মিত অফস্পিনারের বেশি কিছু বলা যেত না। মইন এ বারে ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। কাউন্টিতে ডাবল সেঞ্চুরি, পাঁচ উইকেট সব রকম ভেল্কি দেখিয়েও সুযোগ পাচ্ছিলেন না। এ বার পয়া মাঠে তাঁর জন্য ফের টেস্টের দরজা খুলে যাচ্ছে। বাইশ গজে সবুজের আভা থাকলেও এখানে বল ঘুরতে পারে ভেবে দু’দলই স্পিনার রাখতে চাইছে। ইংল্যান্ড কার্যত দুই স্পিনার নিয়ে নামছে— আদিল রশিদ এবং মইন আলি।

সম্ভবত স্পিনের ইতিহাসের কথা মাথায় রেখে অশ্বিনকে বাইরে রাখার ঝুঁকি নিতে চান না কোহালিও। সাংবাদিক সম্মেলনে এসে তিনি বলে দিলেন, ‘‘অশ্বিন গত কাল নেটে অনেকক্ষণ বল করেছে। ওর কোনও অসুবিধা হচ্ছে না। টেস্ট ম্যাচ খেলার মতো ফিট হয়ে গিয়েছেও।’’ ইংল্যান্ড দলে বাঁ হাতির সংখ্যা বেশি। অ্যালেস্টেয়ার কুক ভারতীয় বোলারদের মধ্যে দু’জনের বিরুদ্ধে বার বার আউট হচ্ছেন। অশ্বিন এবং ইশান্ত শর্মা। কিন্তু ট্রেন্ট ব্রিজে কোহালিদের জয় এতটাই হিসেব ওলটপালট করে দিয়েছে যে, এক-এক সময় মনে হচ্ছে, সিরিজে ২-১ এগিয়ে রয়েছে কারা? ইংল্যান্ড না ভারত? পিছিয়ে থাকা একটা দলের দিকে এ ভাবে পেন্ডুলাম হেলে পড়তে আর কখনও দেখা যায়নি।

কোহালির দল এবং ফর্মুলা তৈরি। ইংল্যান্ডের প্রথম একাদশ ঘিরে বরং বেশি তর্ক আর প্রশ্ন। জনি বেয়ারস্টো নিজে চেয়েছিলেন উইকেটকিপিং করতে। জো রুট জানিয়ে দিলেন, ট্রেন্ট ব্রিজে আঙুলে চোট পাওয়া বেয়ারস্টো টেস্ট ম্যাচে কিপিং করার মতো সম্পূর্ণ সুস্থ হননি। তাই জস বাটলারই কিপিং করবেন। বেয়ারস্টো খেলবেন বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবে। ইংরেজ সাংবাদিকেরা রুটকে একের পর এক প্রশ্ন করে গেলেন বেয়ারস্টো নিয়ে। সেটা থামতে না থামতেই জানতে চাওয়া হল— অলি পোপের উপরে কি খুব তাড়াতাড়ি আস্থা হারিয়ে ফেলা হল? পোপকে বসিয়েই মইন আলিকে খেলানো হচ্ছে। গত কাল প্র্যাক্টিস না করা ক্রিস ওকসও খেলতে পারবেন না। তাঁর জায়গায় ফিরছেন বাঁ হাতি স্যাম কারেন। বাঁ হাঁটুতে চোট থাকায় বেন স্টোকস স্বাভাবিক ছন্দে বল করতে পারবেন কি না, সংশয় রয়েছে।

সিরিজে পিছিয়ে থেকেও যেন এগিয়ে ভারত। মজার খেলা ক্রিকেট!

India England Test Cricket Ashwin Moin Ali
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy