তিন বছরে তিনটে টিম বদলেছেন। আইএসএলে তাঁর মতো সাফল্য খুব কম ফুটবলারের ঝুলিতেই আছে। শুক্রবার দুপুরে পুণে সিটির টিম হোটেলে বসে আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে প্রবল আবেগপ্রবণ হয়ে উঠলেন এডেল বেটে।
প্রশ্ন: আপনি সম্ভবত একমাত্র ফুটবলার যিনি আইএসএলের দু’টো ট্রফিই জিতেছেন?
বেটে: এটা একটা অসাধারণ অনুভূতি। শুধু মুখে বললে ভিতরের আনন্দটা বুঝতে পারবেন না। আমি এটিকে এবং চেন্নাইয়ান দু’টো টিমের কাছেই কৃতজ্ঞ। সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ ফুটবলারদের কাছে। ওরা নিখুঁত ভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন না করলে দু’টো কেন, একটাও ট্রফি জিততে পারতাম না।
প্র: কোন ট্রফিটা বেশি স্পেশ্যাল?
বেটে: (হাসতে হাসতে) দু’টোই তো আইএসএল ট্রফি, তাই না? সত্যি বললে, দু’টো ট্রফিই আমার খুব কাছের। তবে দেখবেন, যে কোনও ব্যাপারেই প্রথম সাফল্যের একটা আলাদা মজা হয়। তাই এটিকে-র হয়ে জেতা ট্রফিটা চিরকাল আমার কাছে খুব স্পেশ্যাল হয়ে থাকবে।
প্র: আপনি যে টিমেই পা রাখেন, চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায়। লাকি ম্যান?
বেটে: ভাগ্য অবশ্যেই একটা বড় ভূমিকা পালন করে। তবে সেটা এতটাও নয় যে, কোনও একজন ফুটবলারের উপস্থিতিতে গোটা টিমের গ্রহ-নক্ষত্র বদলে যাবে। ফুটবল হল টিম গেম। প্রত্যেক ফুটবলারের সমান অবদান থাকে টিমের সাফল্যে। উল্টে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। দু’বারই এমন টিমের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়েছি, যারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
প্র: শোনা যায় আপনি নাকি এটিকে ছেড়েছিলেন হাবাসের জন্য?
বেটে: (গম্ভীর মুখে) একেবারেই নয়। আমার পুণে সিটিতে আসার প্রধান কারণই তো হাবাস। তা হলে এটা কী করে বলছেন আপনি?
প্র: এটিকে-তে প্রথম দিকে দলে সুযোগ না পাওয়ার একটা ক্ষোভ তো কোচের উপর ছিলই আপনার?
বেটে: (খানিকক্ষণ চুপ) কোন ফুটবলার চাইবে দিনের পর দিন বেঞ্চে বসে থাকতে? ছ’জন বিদেশি খেলানোর কোটায় আমার জায়গা হত না। একটা আফসোস ছিল ভিতরে। তবে সেটা পেশাদার জগতে টেকে না। আমার এখনও মনে আছে ফাইনালের সেই রাত। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাউহাউ করে কেঁদেছিলাম! একটাই কথা মনে হয়েছিল তখন। বেটে ফেলনা বস্তু নয় (ছলছলে চোখ)।
প্র: তা হলে বলছেন এটিকে ছাড়ার কারণ হাবাস নন?
বেটে: না। এখন যে জায়গায় আমি দাঁড়িয়ে, সেখানে নতুন চ্যালেঞ্জ আমাকে উদ্বুদ্ধ করে। এটিকে এবং চেন্নাইয়ান আসাধারণ অভিজ্ঞতা আমার কাছে। কিন্তু আমি নতুন চ্যালেঞ্জের খোঁজ করছিলাম। তাই এ বার পুণে সিটিতে আসা। তা ছাড়া হাবাসের সঙ্গে কাজ করতে আমার ভাল লাগে। ওঁর কোচিং স্টাইল আমাকে দারুণ উদ্বুদ্ধ করে। একজন পেশাদার কোচ এবং পুণে সিটির মতো উচ্চাকাঙ্ক্ষী ক্লাবে খেলার সুযোগ পেয়ে আমি দারুণ খুশি। হাবাস সেই মানুষ যাঁকে আমি অন্ধের মতো বিশ্বাস করি। তাই উনি যখন ডাকলেন একবারের জন্যেও ভাবিনি।
প্র: এটিকে কোচ হাবাস আর পুণে সিটি কোচ হাবাসের মধ্যে কোনও পার্থক্য খুঁজে পেলেন?
বেটে: হাবাস বড় ট্যাক্টিশিয়ান। এ বছর উনি একটা নতুন দলের দায়িত্ব নিয়েছে। কিন্তু ওঁর ফুটবল-দর্শনে কোনও বদল হয়নি। সেই অ্যাটাকিং ফুটবলই ওঁর শক্তি। পার্থক্য বললে একটাই— কোচ হিসেবে উনি আরও পরিণত হয়েছেন।
প্র: কিন্তু পুণে সিটির রেজাল্ট তো সেটা বলছে না।
বেটে: সেটা কোচের দোষ নয়। আমরাই সুযোগ তৈরি করতে পারছি না। কোচ নিজের সেরাটাই দিচ্ছেন।
প্র: পুণের সমস্যা কোথায় হচ্ছে?
বেটে: ওই যে বললাম, সুযোগ তৈরি হচ্ছে না। শুধু পরিকল্পনা করলে চলবে না। মাঠে সেটা কার্যকর করতে হবে। তা ছাড়া ডিফেন্সটাকেও আরও আঁটোসাঁটো বানাতে হবে।
প্র: নিজের প্রাক্তন টিম এটিকে-কে এ মরসুমে কত নম্বর দেবেন?
বেটে: কোনও টিমই কোনও টিমের চেয়ে ভাল নয়। পয়েন্ট টেবল সব সময় আসল গল্পটা বলে না। তবু বলছি— এটিকে এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে ধারাবাহিক টিম।
প্র: কোচ পরিবর্তন কিংবা মার্কি সমস্যা লেগেই আছে এটিকে-তে। তবু তারা শীর্ষে। রহস্য কী?
বেটে: এই রহস্য ফাঁস করার জন্য জেমস বন্ড লাগবে না। কেন না বিশ্বে সাফল্য-মন্ত্র একটাই। যখন টিম ম্যানেজমেন্ট, কোচ এবং ফুটবলাররা একটা মঞ্চে একটা উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে, তখন এটিকে মডেল তৈরি হয়।
প্র: তিন বছরে তিনটে টিম। কোনটা বেশি স্মরণীয়?
বেটে: কলকাতার কাছে ফুটবল হল প্রাণ। ওই উন্মাদনাটা মিস করি। চেন্নাইয়েও ফুটবল আছে। কিন্তু কলকাতার সঙ্গে তুলনা চলে না। আর পুণে তো এই ব্যাপারে ধারেকাছেই আসে না। কলকাতা আমার কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
প্র: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? অবসর নিয়ে কিছু ভেবেছেন?
বেটে: আমি এখনও আমার সেরাটাই খেলছি। কেন আপনি কি সেটা সেটা মনে করেন না? এখনই অবসরের চিন্তা করতে যাব কেন?
প্র: এ বার আইএসএলে সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ কাকে মনে হচ্ছে?
বেটে: সব টিমই ভাল খেলছে। তবে আশা করছি, এ বছর নতুন টিম চ্যাম্পিয়ন হবে। আর সেটা হল পুণে সিটি। (একটু থেমে) অবাক লাগছে তো! একটা কথা মনে রাখবেন। পয়েন্ট টেবলে আমরা সবার নীচে থাকলেও, টুর্নামেন্ট কিন্তু এখনও শেষ হয়নি।
প্র: তা হলে আপনার হ্যাটট্রিক হয়ে যাবে।
বেটে: একদম ঠিক। ওই লোভেই তো পুণেয় আসা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy