ছিল ৯০-৩। হয়ে গেল ৯৯ অল আউট।
এ পর্যন্ত পড়ে ক্রিকেটের কোনও হযবরল মনে হলেও আদৌ তা নয়। সত্যি সত্যিই এমন ঘটল!
নাগপুরের বিদর্ভ ক্রিকেট সংস্থার পুরনো স্টেডিয়ামে বাংলার ব্যাটিংয়ে ধস নামল এ ভাবেই। ন’রানের মধ্যে পড়ল সাত উইকেট! মাত্র সাড়ে পাঁচ ওভারে। শেষ পাঁচ উইকেট পড়ল তিন রানের মধ্যে।
এই সেই নাগপুর, যেখানে ভারতের ২৯ রানে ন’উইকেট পড়েছিল। সচিন তেন্ডুলকর ১১১ করে আউট হওয়ার পরই ভারতীয় ব্যাটিংয়ে অভাবনীয় ধস নেমেছিল। সেই নাগপুরেই এ আবার এক ধস। সে দিন জামথায় নতুন স্টেডিয়ামে পাঁচ উইকেট নিয়ে ভিলেনের ভূমিকায় ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ডেল স্টেইন। এ দিন তাঁর জায়গা নেন ২৫ বছরের মুম্বইকর শার্দূল ঠাকুর। যাঁর নামেই লুকিয়ে রয়েছে বাঘের হিংস্রতা।
গ্রিনটপ উইকেট। সকালের কুড়ি ডিগ্রি সেলসিয়সে যে খুব স্যাঁতসেঁতে ছিল, তা বলা যায় না।
উইকেটের যা অবস্থা ছিল, তাতে যে প্রথম সকালে বল পড়ে বেশ নড়চড়া করবে, তা আগেই আন্দাজ করেছিল বাংলা শিবির। দু’দিন আগে নাগপুর থেকে ফোনে তা বলেও ছিলেন ক্যাপ্টেন মনোজ তিওয়ারি। তার প্রস্তুতিও নিশ্চয়ই নেওয়া ছিল। কিন্তু যে আশঙ্কাটা ছিল, সেটাই হল। শার্দূল ঠাকুর আর ধবল কুলকার্নিদের দাপটে থরহরিকম্প বাংলার ব্যাটিং বীররা। বল যা মুভ করাতে শুরু করলেন দুই পেসার, তাতেই তছনছ হয়ে গেল বাংলা।
কলকাতায় বসে হতাশ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ‘‘কী আর বলব, ভাল টিমের বোলারদের বিরুদ্ধে এ রকম হল। ম্যাচের আগে তো সব রকম ভাবে চেষ্টা করেছি ছেলেদের তৈরি রাখার। কিন্তু যারা মাঠে নেমে খেলবে, তারাই যদি না পারে আর কী করা যাবে।’’ নাগপুর রওনা হওয়ার দু’দিন আগে সৌরভ নিজে চারজন জুনিয়র ক্রিকেটারকে ডেকে অনেকক্ষণ ধরে অনেক কিছু বুঝিয়েছিলেন। গত দু’দিনে ভিভিএস লক্ষ্মণকেও নাগপুরে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন দলের ছেলেদের সাপোর্ট দেওয়ার জন্য। কোনও কিছুই কাজে লাগল না। সৌরভ মঙ্গলবার রাতে এটিকে-র খেলা দেখে বেরিয়ে ফোনে বললেন, ‘‘এত কিছু করার পরও যদি ওদের যদি এই হাল হয়, তা হলে আর কী বলব। তবে ওরা নিশ্চয়ই দারুণ বল করেছে। ভাল টিম মুম্বই। ভাল খেলবেই।’’ ভিভিএস লক্ষ্মণকে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করলেও ফোন ধরলেন না। নীরব ক্যাপ্টেন মনোজ তিওয়ারিও।
এ দিন সকাল থেকে ব্যাট করে ৩০ ওভারে ৯০-৩ তুলেছিল বাংলা। সাড়া জাগিয়ে রঞ্জি ট্রফি শুরু করা ওপেনার অভিমন্যু ঈশ্বরন চতুর্থ ওভারেই আউট। এ দিনই প্রথম ফার্স্ট ক্লাস ক্যাপ পাওয়া আর এক ওপেনার অভিষেক রামনও বিদায় নিলেন তার কয়েক ওভার পরেই। দুই ওপেনারই শার্দূলের থাবায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেলেন। শুধু ওপেনাররাই নন। শার্দূল-হানায় ভাঙল বাংলার মেরুদণ্ডও।
দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য দুই ব্যাটসম্যান সুদীপ চট্টোপাধ্যায় ও ক্যাপ্টেন মনোজ তিওয়ারি। তাঁরা দলকে তিরিশ ওভারে ৯০-৩-এ পৌঁছেও দেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এর মধ্যে এমন কিছু অঘটন নেই। এমনটা হতেই পারে, হয়েছেও। শুরুর ঝটকা এর আগে বহুবার সামলেছেন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরা।
কিন্তু এর পরেই যা হল, তা অবিশ্বাস্য। অভাবনীয়। শুরু হল ধস নামা। যে কোনও পাহাড়ি ধসের চেয়েও যা দ্রুত, আকস্মিক।
পরের সাড়ে পাঁচ ওভারে বাংলার ব্যাটসম্যানরা শুধু এলেন আর গেলেন। মনোজকে দিয়ে যে যাওয়া-আসা শুরু। শেষ পাঁচ ব্যাটসম্যানের রান যথাক্রমে ০,১, ২, ০, ০। ৯৯ রানের মাথায় ফিরে গেলেন শেষ চার ব্যাটসম্যান।
বাংলা এই ৯৯ রানেই খতম।
যে উইকেটে এই ধ্বংসলীলা চালালেন শার্দূল, সেই উইকেটে পঞ্চাশ রান দিয়ে এক উইকেট অশোক দিন্দার। মুকেশ কুমার, অমিত কুইলারা বরং দুটো করে উইকেট নিয়ে বাংলাকে ক্ষীণ লড়াইয়ে রাখলেন। দিন্দা বুধবার সকালে কী খেল দেখাবেন, সেটাই দেখার।
দিনের শেষে মুম্বই ১৬৪-৫। ওপেনার কৌস্তুভ পওয়ারের ৭৮-এ ভর করে। সৌরভ অবশ্য এখনও আশাবাদী, ‘‘কাল আমাদের বোলাররা ভাল বল করলে আর দ্বিতীয় ইনিংসে শ’তিনেক তুলতে পারলে ম্যাচে আমরা থাকব।’’
এ ভাবেই আশায় বেঁচে এখন সিএবি প্রেসিডেন্ট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy