Advertisement
E-Paper

কোহালি ও সচিনের তুলনা উস্কে দিলেন রবি

শাস্ত্রী নিজে ইংল্যান্ডে বেশ সফল ক্রিকেটার। কপিল দেবের দলের হয়ে এখানে ১৯৮৬-তে সিরিজ জিতে গিয়েছেন। ভারতীয় ক্রিকেটের তিনি পরিচিত লড়াকু ক্রিকেটার হিসেবেই।

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৮ ০৪:০৫
সচিন তেন্ডুলকরের সঙ্গে বিরাট কোহালির তুলনা টেনে আনলেন রবি শাস্ত্রী।

সচিন তেন্ডুলকরের সঙ্গে বিরাট কোহালির তুলনা টেনে আনলেন রবি শাস্ত্রী।

হ্যারল্ড লারউডের কাউন্টিতে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন ঘটিয়ে সচিন তেন্ডুলকরের সঙ্গে বিরাট কোহালির তুলনা উস্কে দিলেন রবি শাস্ত্রী। ভারতীয় দলের হেড কোচ বলে দিলেন, প্রস্তুতির দিক থেকে কোহালির মতো সিংহহৃদয় ক্রিকেটার তিনি দেখেননি।

শাস্ত্রী প্রথম এই মন্তব্য করেন ট্রেন্ট ব্রিজ টেস্ট জিতে স্কাই স্পোর্টসে। যারা ইংল্যান্ডে এই সিরিজের সম্প্রচারক। ভারতের হেড কোচ বলে দেন, ‘‘প্রস্তুতি এবং ভিসুয়্যালাইশেনের দিক থেকে আমি বলব, কোহালি অনেকের চেয়ে এগিয়ে। এই ব্র্যাকেটে আমি সচিন তেন্ডুলকরকেও রাখতে চাই।’’ এখানেই না থেমে শাস্ত্রী যোগ করেন, ‘‘ক্রিকেটের প্রতি কোহালির আবেগ একমাত্র সচিনের সঙ্গেই তুলনীয়।’’ সত্যিই কি তিনি সচিনের আবেগ এবং দায়বদ্ধতার সঙ্গে তুলনা করলেন কোহালির? ম্যাচ জেতার বেশ খানিক্ষণ পরে যখন পাওয়া গেল শাস্ত্রীকে, তখনও তাঁর গলায় একই রকম স্বাভাবিকতা। বললেন, ‘‘যা বলার ভেবেচিন্তেই বলেছি। বিরাটের প্রস্তুতি, আবেগ এবং এনার্জির সঙ্গে অন্য কারও তুলনা করা সত্যিই কঠিন।’’ তার পরেই তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘ইংল্যান্ডে এসে আগের বারে ও রান করতে পারেনি। এ বারে কী রকম প্রতিজ্ঞা নিয়ে ফিরে এসেছে, সকলেই দেখতে পাচ্ছে। তিনটে টেস্ট হয়েছে, তার দু’টোতে ও দুই ইনিংস মিলিয়ে দু’শো রান করেছে। আর কোথায় এই রানগুলো করেছে? না, ইংল্যান্ডে যেখানে কঠিনতম পরিবেশ অপেক্ষা করে ব্যাটসম্যানদের জন্য।’’ সচিনের সঙ্গে তুলনা? শাস্ত্রী বলছেন, ‘‘প্রস্তুতি এবং দায়বদ্ধতার দিক থেকে কোহালিকে দেখে আমি মুগ্ধ। সব সময় আরও চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিরাটের ব্যাপারে যেটা আমাকে সব চেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে, তা হচ্ছে, সব সময় বাড়তি পরিশ্রম করার ইচ্ছা। ব্যাটিং করতে ভালবাসে। ক্রিকেট নিয়ে আবেগপ্রবণ। হাড় ভাঙা পরিশ্রম করে যাচ্ছে। বর্তমানটা নিয়েই ভাবে, অতীতে কী হয়েছে বা ভবিষ্যতে কী হবে তা নিয়ে ভাবতে যায় না। প্রস্তুতি এবং আগে কী হতে যাচ্ছে তা নিয়ে ভাবার ক্ষেত্রে একমাত্র সচিনের সঙ্গে ওর তুলনা চলতে পারে।’’

শাস্ত্রী নিজে ইংল্যান্ডে বেশ সফল ক্রিকেটার। কপিল দেবের দলের হয়ে এখানে ১৯৮৬-তে সিরিজ জিতে গিয়েছেন। ভারতীয় ক্রিকেটের তিনি পরিচিত লড়াকু ক্রিকেটার হিসেবেই। তবুও এই দলের লড়াকু মানসিকতা নিয়ে তিনি মুগ্ধ। বলে ফেলছেন, ‘‘আমি ছেলেদের বলেছিলাম, দায়বদ্ধতা দেখাও। ওরা সেটা দেখিয়েছে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে, সিরিজ রক্ষা করতে গেলে ট্রেন্ট ব্রিজে জিততেই হবে, এমন অবস্থায় ছেলেরা যে মানসিকতা দেখিয়েছে, তা অসাধারণ। আর কিছু চাওয়ার থাকতে পারে না।’’

কোহালির বিশেষত্ব কী? জিজ্ঞেস করায় শাস্ত্রী বললেন, ‘‘বর্তমানে থাকে। ট্রেন্ট ব্রিজে দুই ইনিংসে ও করেছে ৯৭ ও ১০৩। আমার দেখা দু’টো অন্যতম সেরা ইনিংস। কিন্তু বাজি রেখে বলতে পারি, এই স্টে়ডিয়াম ছেড়ে বেরনোর সময়ে বিরাটের কাছে ওই দু’টি ইনিংস অতীত হয়ে গিয়েছে। ও আবার নতুন করে স্টান্স নিতে শুরু করে দিয়েছে। সাউদাম্পটনে ও যাবে এটাই ধরে নিয়ে যে, ও শূন্য ব্যাটিং।’’

ট্রেন্ট ব্রিজে ২০ উইকেটের মধ্যে ১৯টি নিয়েছেন ভারতীয় পেসাররা। মাইকেল হোল্ডিং থেকে শুরু করে ডেভিড গাওয়ার, প্রত্যেকে চমকে উঠছেন ভারতীয় পেসারদের গতি দেখে। একটি তুলনা এখানে খুব জনপ্রিয় হয়েছে। ভারত ও ইংল্যান্ডের পেসারদের গতির তুলনা করে দেখানো হয়েছে যে, যশপ্রীত বুমরারা গতিতে অনেক এগিয়ে অ্যান্ডারসনদের থেকে। ট্রেন্ট ব্রিজ টেস্টের ফয়সালা নির্ধারণে সেটা যথেষ্ট ভূমিকা নিয়েছে বলে অনেকের মনে হচ্ছে। শাস্ত্রীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ভারতের এই পেস আক্রমণ কি অন্য প্রজন্মের চেয়ে এগিয়ে? হেড কোচের জবাব, ‘‘প্রচুর মাইলে এগিয়ে। এ রকম আগ্রাসী বোলিং আক্রমণ আর কখনও
আসেনি ভারতের।’’

ইংল্যান্ডের মাটিতে অন্যতম বড় জয় তুলে নিলেন কোহালিরা। পঞ্চম দিনে সকালে আসতে হলেও বেশিক্ষণ তাঁদের সংগ্রাম করতে হয়নি। সব চেয়ে চোখে পড়ার মতো ব্যাপার হচ্ছে, মাত্র একটি উইকেট পড়া বাকি থাকলেও প্রায় হাজার খানেক দর্শক এসেছিলেন ফয়সালা দেখতে। অ্যান্ডারসন প্রথম ওভার বেঁচে যাওয়ায় প্রত্যেক বলে দর্শকেরা হাততালি দিয়ে তাঁকে উৎসাহিত করছিলেন। সম্পূর্ণ ফিট না থাকা অশ্বিনই শেষ উইকেট নিলেন। কুড়ি উইকেটের মধ্যে স্পিনারের নেওয়া একমাত্র উইকেট। ট্রেন্ট ব্রিজে ভারতের প্রত্যাবর্তনের দিনে সব চেয়ে বেশি করে আলোচিত হচ্ছে স্পিনের দেশ কী ভাবে একের পর এক আগ্রাসী পেসার তুলে আনছে। শাস্ত্রী মনে করিয়ে দিতে ভুলছেন না, ‘‘চোট-আঘাতের জন্য আমরা সকলকে পাইনি। ভুবনেশ্বরের চোট ছিল। বুমরাকে প্রথম দু’টো টেস্টে পাওয়া যায়নি।’’ তার পরেই দ্রুত যোগ করছেন, ‘‘তবু আমরা ঠিক করে নিয়েছিলাম, অজুহাত দেব না। যা আমাদের হাতে আছে তাই নিয়েই খেলব। আমাদের দেশে যখন অন্যরা যায়, আমাদের ইচ্ছা মতো উইকেট বানালে অনেক কথা ওঠে। এখানে যেমন পিচ দেওয়া হচ্ছে, আমরা খেলছি। আমার কথা হচ্ছে, তা হলে ভারতে গিয়ে তোমরাও কথা বলো না।’’ ২০৩ রানের এই জয় কত বড়? জিজ্ঞেস করায় শাস্ত্রীর জবাব, ‘‘আমি যে চার বছর ধরে দায়িত্বে আছি, তার মধ্যে এটা সেরা। ওয়ান্ডারার্সেও আমরা জিতেছিলাম পিছিয়ে থাকা অবস্থায়। কিন্তু এখানে সব দিক দিয়ে অনেক নিখুঁত পারফরম্যান্স হয়েছে। যেমন ব্যাটিং, তেমন বোলিং, তেমনই দুর্দান্ত স্লিপ ক্যাচিং।’’ শাস্ত্রীকে জিজ্ঞেস করা হল, ০-২ পিছিয়ে পড়া অবস্থায় দেশে যে সমালোচনা হয়েছিল তার কি উত্তর দেওয়া গেল? হেড কোচের স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে জবাব, ‘‘দেশে কী হচ্ছিল? আমরা সত্যিই জানি না। খুব সমালোচনা হচ্ছিল বুঝি? আমরা কিছুই জানি না কারণ কোথায় কী বেরোচ্ছে আমরা কেউ পড়ি না।’’

দু’টো দৃশ্য খুব চোখে লেগে থাকবে ট্রেন্ট ব্রিজের টেস্ট থেকে। এক) জেতার পরেও দারুণ কিছু উৎসব করতে দেখা গেল না ভারতীয় দলকে। এমনকি, অধিনায়ক বিরাট কোহালিকে পর্যন্ত স্মারক স্টাম্প নিতে দেখা গেল না। কে এল রাহুল একটা স্টাম্প নিয়ে বিরাটকে দিতে গেলেন কিন্তু প্রেস বক্স থেকেও দেখা গেল তিনি সেটা ফিরিয়ে দিলেন। অর্থাৎ, অধিনায়ক ১-২ করা নয়, সিরিজ জেতাকেই পাখির চোখ করছেন। এবং দুই) ম্যাচের সেরার শ্যাম্পেন জিতে ড্রেসিংরুমে ফিরে তা শাস্ত্রীর হাতে তুলে দিলেন অধিনায়ক কোহালি। দেখেই বোঝা গেল, কোচের সঙ্গে সম্পর্কের সমীকরণ বা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা কতটা। এই ইংল্যান্ডেই এক বছর আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সময়ে অনিল কুম্বলের সঙ্গে সম্পর্ক পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিল ক্যাপ্টেন কোহালির।

ভারতীয় দলে শুধু জয়ের ধ্বজাই উড়ছে না। শাস্ত্রীর প্রত্যাবর্তনে ফিরে এসেছে সুখী সংসারের হাওয়াও!

Cricket Ravi Shastri Virat Kohli Sachin Tendulkar Trent Bridge Bridge রবি শাস্ত্রী বিরাট কোহালি সচিন তেন্ডুলকর
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy