সুরেশ স্ট্যালিন
জন্ম: ১৭ জানুয়ারি ২০০১ বেঙ্গালুরু
পজিশন: স্টপার
আদর্শ: দিয়েগো মারাদোনা
বেঙ্গালুরুর ফুটপাথে এক টুকরো জায়গায় জামাকাপড় বিক্রেতা শ্যালক-কে সাহায্য করে কোনও মতে সংসার চালান তিনি। বাড়তি রোজগারের তাগিদে যখন অন্য কোনও কাজ করতে যান, তখন তাঁর স্ত্রী বসেন ভাইকে সাহায্য করতে। তাঁদের সন্তান সুরেশ স্ট্যালিন-ই এই মুহূর্তে অনূর্ধ্ব-১৭ ভারতীয় দলের রক্ষণের অন্যতম ভরসা।
ভারতীয় ফুটবলে সুরেশের নাটকীয় উত্থানের নেপথ্যে কলকাতা ময়দানের এক প্রাক্তন তারকা। তিনি— জামশিদ নাসিরি!
প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলারের খোঁজে বছর পাঁচেক আগে বেঙ্গালুরুতে গিয়েছিলেন জামশিদ। এগারো বছর বয়সি সুরেশের খেলা দেখে মুগ্ধ হয়ে যান ইস্টবেঙ্গল ও মহমেডানের প্রাক্তন তারকা। জামশিদের কথায়, ‘‘খুব রোগা একটা ছেলে ডিফেন্সে খেলছিল। ওই বয়সেই দুর্দান্ত অনুমান ক্ষমতা। রোগা হলেও প্রচণ্ড দাপটের সঙ্গে খেলছিল। ওকে টপকে গোল করাই কঠিন হয়ে গিয়েছিল বিপক্ষের স্ট্রাইকারদের। তখনই ঠিক করে নিয়েছিলাম, সুরেশকে চণ্ডীগড় অ্যাকাডেমিতে পাঠাবো। ওখানে আমার বন্ধু হরজিন্দর সিংহ কোচ। ওর হাতে পড়লে সুরেশ তৈরি হয়ে যাবে।’’
প্রথম ম্যাচ শেষ হওয়ার পরেই সুরেশকে তাঁর পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন জামশিদ। কিন্তু ছোট্ট সুরেশ জানায়, বাবা রাজি হবেন না। মজিদ বিসকার-এর প্রাক্তন সতীর্থ বলছিলেন, ‘‘প্রথমে রাজি হচ্ছিলেন না সুরেশের বাবা। বলছিলেন, আমার সামর্থ নেই এত খরচ করার। অনেক ওঁকে কষ্টে রাজি করাই। বললাম, কোনও টাকা লাগবে না। সুরেশকে গড়ে তোলার দায়িত্ব চণ্ডীগড় অ্যাকাডেমির। তার পরে আর আপত্তি করেননি।’’
আরও পড়ুন: পরিণত এই হার্দিক এখন ম্যাচউইনার
সুরেশের বাবার সম্মতি পাওয়া গেলেও সমস্যা মিটল না। চণ্ডীগড় অ্যাকাডেমিতে তেরো বছরের কম বয়সি কাউকে ভর্তি নেওয়া হয় না। সুরেশ তখন সবে এগারো। কিন্তু জামশিদ হাল ছাড়েননি। বলছিলেন, ‘‘হরজিন্দরকে কিছুতেই রাজি করাতে পারছিলাম না। ও বারবারই বলছিল, তোমার জন্য আমি সুরেশকে না হয় বারো বছর বয়সেই নেব। কিন্তু এখন ওর মাত্র এগারো বছর বয়স। তুমি আরও একটা বছর অপেক্ষা করো।’’
কী করলেন? দুই প্রধানের প্রাক্তন তারকা বললেন, ‘‘সুরেশের পরিবারের যা অবস্থা, তাতে এক বছর অপেক্ষা করা মানেই ওর ফুটবল ভবিষ্যৎ শেষ। আমার নাছোড় মনোভাব দেখে শেষ পর্যন্ত হরজিন্দর রাজি হল ওকে নিতে।’’
ঠিকানা বদলে গেল সুরেশের। বেঙ্গালুরু থেকে চণ্ডীগড় চলে এল প্রতিশ্রুতিমান ডিফেন্ডার। শুরু হল তার নতুন জীবন। বছর দু’য়েকের মধ্যেই জাতীয় দলের দরজা খুলে যায় সুরেশের সামনে।
অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের প্রস্তুতির ফাঁকে আনন্দবাজার-কে সুরেশ বলল, ‘‘জামশিদ স্যারের জন্যই আমি এই জায়গায় আসতে পেরেছি। না হলে হয়তো বেঙ্গালুরুর ফুটপাতে আমাকেও জামাকাপড় বিক্রি করতে হতো।’’ সঙ্গে যোগ করল, ‘‘জামশিদ স্যারের সাহায্য ও বাবার ক্লান্তিহীন লড়াইও আমাকে প্রেরণা জুগিয়েছে।’’
জামশিদের সঙ্গে এখনও নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে সুরেশের। প্রাক্তন তারকা বললেন, ‘‘সাফল্য পাওয়ার পর অনেকেই ভুলে যায়। কিন্তু সুরেশ একেবারেই অন্য রকম। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি সফরে বিদেশে গিয়েও নিয়মিত আমাকে ফোন করেছে। জিজ্ঞেস করছে, আমি ওর কোনও খেলা দেখেছি কি না। শক্তিশালী বিদেশি দলগুলোর বিরুদ্ধে খেলার প্রস্তুতি কী ভাবে নিতে হয়।’’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘সুরেশের সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে, শেখার ইচ্ছে।’’
সুরেশের বিশেষত্ব কী? জামশিদের বিশ্লেষণ, ‘‘মাথা ঠান্ডা রেখে খেলতে পারে। ডিফেন্ডার হলেও গোলটা খুব ভাল চেনে।’’ হাসতে হাসতে সুরেশ বলল, ‘‘দিয়েগো মারাদোনা আমার আদর্শ। তাই গোল তো আমাকে করতেই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy