Advertisement
E-Paper

বয়সকে বুড়ো আঙুল ‘বুড়ো’ জোকারের, ১৬ বছরের ছোট আলকারাজ়কে হারিয়ে সেমিতে

সেয়ানে সেয়ানে শুরু হয়েছিল জোকোভিচ-আলকারাজ় লড়াই। তবে ম্যাচের বয়স যত বেড়েছে, তত জোকোভিচের অভিজ্ঞতার কাছে পিছিয়ে পড়েছেন নাদালের শিষ্য।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:২৭
picture of Novak Djokovic

নোভাক জোকোভিচ। —ফাইল চিত্র।

নোভাক জোকোভিচ যখন পেশাদার টেনিসে পা রেখেছিলেন, তখন জন্মই হয়নি কার্লোস আলকারাজ়ের। সেই আলকারাজ় অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে আটকাতে পারলেন না ৩৭ বছরের জোকোভিচকে। শুরুটা ভাল করেও চারটি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিককে হার মানতে হল। মেলবোর্ন পার্কের কোর্টে ২৪ এবং চারের পার্থক্য হাড়ে হাড়ে টের পেলেন রাফায়েল নাদালের ২১ বছরের শিষ্য। জোকারের পক্ষে খেলার ফল ৪-৬, ৬-৪, ৬-৩, ৬-৪।

ম্যাচের সপ্তম গেমে বাঁ পায়ে সমস্যা হয় জোকোভিচের। হালকা খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখা যায় তাঁকে। মেডিক্যাল টাইম আউট নিয়ে কোর্ট ছাড়তে বাধ্য হন নবম গেমের পর। তখন জোকার পিছিয়ে ছিলেন ৪-৫ ব্যবধানে। কোর্টে ফিরে আলকারাজ়ের সার্ভিস ভেঙে সমতা ফেরাতে পারেননি। ৪-৬ ব্যবধানে প্রথম সেট জিতে কোর্টে গর্জন করেন স্প্যানিশ তরুণ। প্রতিপক্ষের সেই গর্জন নিশ্চিত জোকোভিচের আঁতে ঘা দিয়েছিল। প্রথম সেট হাতছাড়া হওয়ার পর তিনি যে টেনিস খেললেন, তার উত্তর এখনও অজানা আলকারাজ়ের।

শুরু হয় হাড্ডাহাড্ডি মেজাজে। ম্যাচে আলকারাজ়ের প্রথম সার্ভিস গেম ভেঙে ০-২ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়েছিলেন জোকোভিচ। পাল্টা জোকারের দ্বিতীয় সার্ভিস গেম ব্রেক করেন আলকারাজ়। আরও একটা মহাকাব্যিক ম্যাচ দেখার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন রড লেভার এরিনার দর্শকেরা। পর পরই জোকারের পায়ের অস্বস্তি সাময়িক সংশয় তৈরি করে। প্রথম সেট হেরে যাওয়া জোকারের কি বিদায় নিশ্চিত? কিছু ক্ষণের মধ্যেই প্রশ্নের উত্তর দিল সার্ব খেলোয়াড়ের র‌্যাকেট। দ্বিতীয় সেটের শুরুতেই আবার ভাঙলেন আলকারাজ়ের সার্ভিস। এগিয়ে গেলেন ৩-০ ব্যবধানে। হাল ছাড়ার পাত্র নন নাদালের শিষ্যও। টানা তিন গেম জিতে ৩-৩ করে ফেললেন। বেস লাইন থেকে তাঁর ফোরহ্যান্ড, সার্ভিস, ড্রপ শটের সামনে কিছুটা যেন ঝাপসা মনে হচ্ছিল জোকারের অভিজ্ঞতা! কিন্তু সবচেয়ে বেশি দিন বিশ্বের এক নম্বর জায়গা দখলে রাখা জোকোভিচকে হারানো কি এতই সহজ? পরের চারটি গেমের তিনটি এবং সেট জোকারের। ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো তখন দুলছে ম্যাচ। নেটের দু’পাশে পাল্লা দিয়ে ঝুঁকছিল লড়াইয়ের ওজন।

শুরুটা আসলে জোকোভিচ ধরতে পারেননি। নিজের খেলায় সামান্য কিছু পরিবর্তন করেছেন আলকারাজ়। পাওয়ার টেনিসের মাঝে বুদ্ধি করে গুঁজে দিচ্ছেন র‌্যাকেটের আলতো ছোঁয়া। বেস লাইন থেকে তাঁর ড্রপ ভলি নেট টপকে পড়ছিল জোকারের দিকে। শুরু থেকেই এই কৌশল নিয়েছিলেন আলকারাজ়। তাঁর খেলায় অস্ট্রেলিয়ার নিক কিরিয়সের ছোঁয়া দেখা যাচ্ছিল। বিস্মিত জোকোভিচ এক বার পয়েন্ট খুইয়েও হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানালেন আলকারাজ়ের বুদ্ধিদীপ্ত টেনিসকে। আসলে জোকোভিচ বুঝতে দেননি, তাঁর আস্তিনেও আছে লুকোনো তাস!

গোটা কোর্টকে কাজে লাগাতে শুরু করলেন জোকোভিচ। তরুণ বয়সের মতোই হরিণের মতো দৌড়লেন কোর্টে। যে কোর্ট কভারিংয়ের জন্য জোকার টেনিস মহলে বিখ্যাত, তারই কিছু ঝলক দেখালেন। শক্তিশালী সার্ভিস, ফোরহ্যান্ডের সঙ্গে মিশিয়ে দিলেন ভলি। নেটের কাছে এসে বার বার বানচাল করে দিলেন আলকারাজ়ের কৌশল। তাঁর টপ স্পিন সামলাতে পারলেন না স্পেনের তরুণ। আসতে আসতে ম্যাচ থেকে হারিয়ে যেতে শুরু করলেন। তৃতীয় সেট ৬-৩ ব্যবধানে জিতলেন জোকোভিচ। কে বলবে তিনি সপ্তম বাছাই আর তাঁর প্রতিপক্ষ তৃতীয়! প্রতি শটে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলতে শুরু করলেন। আলকারাজ়কে বাধ্য করলেন বেসিক টেনিসে ফিরতে। চ্যাম্পিয়নেরা এ ভাবে ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করেন। প্রতিপক্ষকে নিজের পছন্দের ফর্মুলায় খেলতে বাধ্য করেন। জোকারও সেটাই করলেন তিন ঘণ্টা ৪০ মিনিটের লড়াইয়ে।

জোকার অস্ট্রেলিয়ান ওপেন খেলতে এসেছেন কিট ব্যাগে সাফল্যের খতিয়ান লিখে। কোন গ্র্যান্ড স্ল্যাম কোন কোন বছরে জিতেছেন, কোন কোন বছর ট্যুর ফাইনাল জিতেছেন, লেখা আছে সব। আছে ২০২৪ সালে প্যারিস অলিম্পিক্সের সিঙ্গলসের সোনার কথাও। জুতোয় লেখা ২৪। গোটা ২০২৪ সালে ২৫ করতে পারেননি গ্র্যান্ড স্ল্যামের সংখ্যা। ২০২৫ সালের জন্য হয়তো অপেক্ষা করছিলেন টেনিস দেবতা। পায়ের অস্বস্তি সামলে আলকারাজ়ের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার যে টেনিস খেললেন, তাতে জোকারপ্রেমীরা আশাবাদী হতেই পারেন। এই রড লেভার এরিনায় ১০ বার ট্রফি জিতেছেন বিশ্বের প্রাক্তন এক নম্বর টেনিস খেলোয়াড়। ১১তম খেতাব জয় থেকে দু’টি ম্যাচ দূরে জোকোভিচ।

চতুর্থ সেটে আলকারাজ় মরিয়া চেষ্টা করলেন সমতা ফেরানোর। জোকোভিচ সুযোগ দিলে তো! আলকারাজ় কিছুটা চাপ তৈরির চেষ্টা করেন। কোর্টে এক বার পড়েও যান জোকার। পর ক্ষণেই উঠে দাঁড়ালেন চ্যাম্পিয়নের মতো। ৬-৪ ব্যবধানে চতুর্থ সেট জিতে হাসলেন শেষ হাসিও। একই সঙ্গে জিতলেন বছরের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যামের কোয়ার্টার ফাইনালও। সর্বোচ্চ পর্যায়ের টেনিস ম্যাচ জিততে যা যা করা দরকার সব কিছুই করলেন জোকোভিচ। চেষ্টার খামতি রাখেননি আলকারাজ়ও। তবু বার বার তিনি ধাক্কা খেয়েছেন জোকারের বিশাল অভিজ্ঞতার সামনে। প্রথম সার্ভ ফল্ট হওয়ার পর যিনি নিখুঁত দ্বিতীয় সার্ভ করতে পারেন, তাঁর বিরুদ্ধে নিজের সেরা টেনিস খেললে হয় না। আরও বেশি কিছু করতে হয়। সেখানেই আটকে গেলেন আলকারাজ়।

মরসুমের সেরা টেনিস খেলে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শেষ চারে পৌঁছে গেলেন জোকোভিচ। তা-ও আলকারাজ়ের মতো খেলোয়াড়কে হারিয়ে। পায়ের অস্বস্তি সামলে। ২০২৩ সালের ইউএস ওপেনের পর আর গ্র্যান্ড স্ল্যাম নেই। প্রিয় অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে রক্তের স্বাদ পেয়ে গিয়েছেন জোকার। শুক্রবার সেমিফাইনালে তাঁর লড়াই দ্বিতীয় বাছাই আলেকজান্ডার জেরেভের বিরুদ্ধে। তার পর হয়তো কিট ব্যাগ, জুতো সব বদলে ফেলতে হবে জোকোভিচকে।

আলকারাজ়ের থেকে ১৬ বছরের বড় জোকোভিচ। তাঁদের লড়াই মনে করিয়ে দিল ৩৬ বছর আগের এক লড়াইয়ের কথা। সেও ছিল গ্র্যান্ড স্ল্যামের কোয়ার্টার ফাইনাল। ১৯৮৯ সালে ইউএস ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে আন্দ্রে আগাসি মুখোমুখি হয়েছিলেন জিমি কোনর্সের। ১৮ বছরের ছোট প্রতিপক্ষকে হারাতে না পারলেও অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন খেলোয়াড় লড়াই করেছিলেন পাঁচ সেট। আগাসি জেতেন ৬-১, ৪-৬, ০-৬, ৬-৩, ৬-৪ ব্যবধানে। মার্কিন তরুণ সেই ম্যাচে পেরেছিলেন। মঙ্গলবার পারলেন না আলকারাজ়। জোকোভিচের মতো আগাসিরও গোল্ডেন গ্ল্যান্ড স্ল্যাম রয়েছে যে!

টেনিস এবং মগজাস্ত্রের মেলবন্ধন ‘বুড়ো’ জোকোভিচকে কোন পর্যায়ে পৌঁছে দিতে পারে, তা দেখা গেল মঙ্গলবার। যা দেখে বার বার উচ্ছ্বাসে লাফিয়ে উঠলেন কোচ অ্যান্ডি মারে। মেলবোর্নে রাত ১টার সময়ও তরতাজা তাঁর ‘ছাত্র’।

Australian Open 2025 Novak Djokovic Carlos Alcaraz Tennis
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy