কেন টস জিতে ব্যাটিং
প্রশ্নটা আমার স্বয়ং ধোনিকে করতে ইচ্ছে করছে। ও বরাবর রান তাড়া করতে ভালবাসে। কিন্তু গত দু’টো ম্যাচ ধরে দেখছি, ধোনি টস জিতে ব্যাটিং নিচ্ছে। বিশেষ করে মোহালিতে ওর ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত দেখে অবাকই হয়েছি। সবাই জানে, মোহালির মাঠে রান তাড়া করাটা তুলনায় সহজ। বরং ওখানে প্রতিপক্ষকে টার্গেট দেওয়া খুব কঠিন। একটা কারণ হতে পারে ধোনি হয়তো ভেবেছে, পঞ্জাব অনেকগুলো ম্যাচে জেতেনি। বড় রান তুলে ওদের চাপে ফেলবে। কিন্তু ও সবের প্রয়োজন ছিল না। পুণে কিন্তু এ দিন লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়ল ওই টস জিতে এমএসের সিদ্ধান্তের জন্য। ফাফ-স্মিথ-ধোনি-পিটারসেন, এমন স্বপ্নের ব্যাটিং লাইন আপ থাকতে রান তাড়া করবে না পুণে? কেন ব্যাটিং অর্ডারে নিজে উপরে নয়
এটাও একটু অদ্ভুত। এমএস নিশ্চয়ই জানে যে, টি-টোয়েন্টিতে টিমের মধ্যে ও সেরা প্লেয়ার। তা হলে কেন এত নীচে নামছে? আজ দেখলাম, চারে থিসারা পেরিরা গেল। একটা যুক্তি আছে যে, তখন ফাফ দু’প্লেসি ব্যাট করছিল যে কি না রান রেট বাড়াতে পারছিল না। থিসারা বাঁ হাতি, এমএস হয়তো ভেবেছিল ও গিয়ে একটা দশ বলে পঁচিশ করে দেবে। কিন্তু মনে হয়, ও নিজে গেলেও সেটা করতে পারত। সবাই জানে, এমএস হাতে একটু সময় পেলে কী করতে পারে না পারে। গুজরাতের বিরুদ্ধে শেষ ওভারে কুড়ি যে তুলল পুণে, তুলল কে? এমএস-ই তো!
জেতার স্কোরের হিসেব স্কোর
গত দু’টো ম্যাচ ধরেই হচ্ছে। এটা মানতেই হবে যে, পুণে দুর্দান্ত ব্যালান্সড কোনও টিম নয়। ওরা এমন একটা টিম যাদের ব্যাটিংটা খুব ভাল। কিন্তু ব্যাটিংটাই যাদের শক্তি, তারা কত রান বিপক্ষকে টার্গেট দেবে, সেই হিসেবে গণ্ডগোল করলে তো মুশকিল। দু’প্লেসি ৬৭ করল কিন্তু মাত্র ১২৫ স্ট্রাইক রেট রেখে! ও ৫৪ বল খেলেছে। মানে ন’ওভার। একটা টি-টোয়েন্টি ম্যাচের প্রায় অর্ধেক। তা হলে সে কেন একশো চল্লিশ স্ট্রাইক রেটে অন্তত শেষ করবে না? দু’প্লেসি যদি রবিবার সেটা করত, পুণে ১৮০-তে শেষ করত। কে বলতে পারে, ম্যাচটাও তখন জিতত না? আসলে পুণের সবচেয়ে অসুবিধে হয়ে যাচ্ছে কেভিন পিটারসেনের জন্য। কেপি-কে তিন নম্বরে পাঠাচ্ছে ওরা। কিন্তু পিটারসেন বিস্ফোরণ ঘটাতে পারছে না বলে বাকিরাও বুঝতে পারছে না যে কী করা উচিত? ম্যাচ পিছু গোটা কুড়ি-পঁচিশ রান করে কম তাই থেকেই যাচ্ছে। ধোনিকে সবার আগে ঠিক করতে হবে, কত তোলা দরকার? নিজেদের একটা টার্গেট ঠিক করে নিতে হবে। সেটা যদি অসুবিধে হয়, একটাই রাস্তা। রান তাড়ায় যাও।
ক্যালকুলেটেড রিস্ক যখন ফাটকা
ধোনিকে নিয়ে এটা বরাবর বলা হয় যে, ও নাকি ফাটকা খেলে। ঘটনা হল, এমএস ধোনি ফাটকা খেলে না। সবই ওর এত দিন ক্যালকুলেটেড রিস্ক ছিল। ধারণার বাইরে গিয়ে দুমদাম কারও হাতে বল তুলে দেওয়া, বা কাউকে হঠাৎ ব্যাটিং অর্ডারে আগে পাঠানো— ফাটকা কিন্তু নয় ওগুলো। ধোনি জানত, কাকে দিয়ে কী করাতে যাচ্ছে। জানত, কাকে দিয়ে কতটা হবে। বলতে চাইছি, ওর হাতে একটা সেট টিম ছিল যাদের প্রত্যেকের ক্ষমতা ওর জানা। কিন্তু পুণে-তে সেটা কাজ করছে না। রবিবার চার নম্বরে থিসারাকে পাঠাল ধোনি। কিন্তু ও কি জানত, থিসারা ওখানে কাজে দেবে কি দেবে না? মাঝে একটা ওভার আচমকা থিসারাকে নিয়ে এল, আর শ্রীলঙ্কা অলরাউন্ডার পনেরো দিয়ে চলে গেল। আসলে এই টিমে তিন চার জনের বেশি কারও সঙ্গে কখনও সে ভাবে খেলেনি ধোনি। ওর পক্ষে তাই জানা সম্ভব নয় কোন পরিস্থিতিতে থিসারাকে পাঠালে কাজ দেবে আর কোথায় স্মিথকে নামানো উচিত। আরে, ধোনি যে কি না টিম কম্বিনেশন ভাঙতেই চায় না সে কি না এ দিন তিন-তিনটে বদল করল টিমে! এতেই তো বোঝা যাচ্ছে কোনটা সেরা এগারো ওর এখনও জানা নেই। পুরনো ক্যালকুলেটেড রিস্কগুলো তাই এখন ফাটকা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
ডেথ বোলারের অভাব
একটু ভুল হল। বলা উচিত, ভাল বোলিং ইউনিটেরই অভাব টিমটায়। ইশান্ত শর্মা যে দিন ভাল বল করবে, উইকেট পাবে। যে দিন করবে না, বেধড়ক মার খাবে। কোনও ধারাবাহিকতা নেই। ইরফান পাঠানকে অলরাউন্ডার বলে আর মনে করি না। মুরুগান অশ্বিন ভাল প্রতিভা, কিন্তু ডেথে ওকে ব্যবহার করার সময় আসেনি। পুরো চাপটাই চলে যাচ্ছে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের উপর। অশ্বিনকে দিয়ে এ দিন পাওয়ার প্লে-র মধ্যে করাল ধোনি, আবার পরে করাল। কিন্তু এটা বুঝতে হবে যে অশ্বিনের হাতে চারটেই ওভার। আর কত ভাবে ওকে ব্যবহার করা সম্ভব? টি টোয়েন্টি অন্তত পাঁচ জন ভাল বোলার লাগে। ধোনিকে খুব তাড়াতাড়ি খুঁজে বার করতে হবে ওর সেরা পাঁচ কে। ইরফান পাঠানকে দলে নিয়ে এক ওভারের বেশি বল না করানোর মতো বিলাসিতা এখন আর দেখানো সম্ভব নয়।
মার্কশিটে ধোনি ৬.৫/১০
আরও পড়ুন:
আইপিএলের সময়সূচি
আইপিএলের পয়েন্ট টেবল