Advertisement
০৫ মে ২০২৪
রজারের রাজকীয় গ্র্যান্ড স্ল্যাম যাত্রা, অপেক্ষা উনিশের

হেরো থেকে সেরা ‘হিরো’

উইম্বলডনে রেকর্ড অষ্টম খেতাব জয়ের লক্ষ্যে নামার লগ্নে তাঁর নাটকীয় টেনিস যাত্রার দিকে ফিরে তাকিয়ে মনে হবে যেন হলিউড থ্রিলার চলছে।

চার বছরে ১৮টির মধ্যে ১২টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন ফেডেরার। ছবি: এপি

চার বছরে ১৮টির মধ্যে ১২টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন ফেডেরার। ছবি: এপি

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৭ ০৪:০৫
Share: Save:

দুনিয়ার সর্বকালের সেরা টেনিস খেলোয়াড় বলা হয় তাঁকে। কিন্তু একটা সময় ছিল, যখন রজার ফেডেরারের জীবনে জয়ের চেয়ে হারের সংখ্যা ছিল বেশি। যখন তাঁর মনে হতো, তিনি শুধুই পরাভূত এক ক্রীড়াবিদ। কখনওসখনও এমনও মনে হয়েছে যে, টেনিসই ছেড়ে দেবেন!

উইম্বলডনে রেকর্ড অষ্টম খেতাব জয়ের লক্ষ্যে নামার লগ্নে তাঁর নাটকীয় টেনিস যাত্রার দিকে ফিরে তাকিয়ে মনে হবে যেন হলিউড থ্রিলার চলছে। এক বার নিজেই তো খোলামেলা ভাবে স্বীকার করেছিলেন, ‘‘একটা সময় ছিল যখন আমার জীবনে জয়ের চেয়ে হারই ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। সেই দিনগুলো খুবই কঠিন ছিল।’’

শুরুর সেই দিনগুলো কতটা কঠিন ছিল বোঝাতে গিয়ে ফেডেরার যোগ করছেন, ‘‘আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলতে গিয়ে প্রায় প্রত্যেক জায়গাতেই প্রথম রাউন্ডে হেরে যেতাম। মনে হতো কেউ যেন কানের কাছে বলছে, তুমি শুধু বাসেলেই ভাল, বিশ্বের অন্য কোথাও নয়।’’

এমন নয় যে, ফেডেরার প্রতিভাবান ছিলেন না। ১৬ বছর বয়সে তিনি জুনিয়র উইম্বলডন জেতেন। তবে মানসিকতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন ছিল। ছেলেবেলায় ম্যাচ হেরে গেলেই তিনি কাঁদতেন। আম্পায়ারের চেয়ারের পিছনে লুকিয়ে পড়তেন। ‘‘আমার যখন ১২ বছর বয়স, অসহ্যকর হয়ে উঠেছিলাম,’’ কয়েক বছর আগে বলেছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন: কেরিয়ারের রেকর্ড ৮৫০তম জয় রেকর্ড দিয়ে শুরু নাদালের

কিশোর বয়সে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগও উঠছিল তাঁর বিরুদ্ধে। কখনও র‌্যাকেট ভেঙে ফেলছেন, কখনও আম্পায়ারের সঙ্গে তর্ক করছেন। এক বার সুইস সার্কিটের একটি টুর্নামেন্টে ম্যাচ ছেড়ে দিয়েও চলে যান আম্পায়ারের সঙ্গে তর্কাতর্কি করে। চড়া আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে সময় লেগেছিল ফেডেরারের। অন্যদের চেয়ে কী ভাবে তিনি নিজেকে আলাদা দেখতে চান? জিজ্ঞেস করায় ফেডেরার বলেছিলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে সাফল্য ধরে রাখতে পেরেছিলাম, এটা দেখতে পেলেই সব চেয়ে খুশি হব।’’ আর কিছু? ফেডেরার বলছেন, ‘‘লোকে যদি প্রশ্ন করে, আমি কি খেলাটাকে পাল্টে দিতে পেরেছিলাম, তা হলে যেন উত্তরটা হয়, হ্যাঁ। যদি কেউ জানতে চায়, আমি কি জনপ্রিয় ছিলাম, যেন উত্তরটা হয়, হ্যাঁ।’’

অল ইংল্যান্ড ক্লাবে জুনিয়র চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে জুনিয়র যুক্তরাষ্ট্র ওপেনও জেতেন ফেডেরার। বসে পড়েন ইভান লেন্ডল, জন ম্যাকেনরো, বিয়র্ন বর্গদের সঙ্গে একই সারিতে। কিন্তু দ্রুতই বুঝতে পারলেন, বড়দের সার্কিটের সমীকরণ কতটা আলাদা। পরবর্তীকালে যিনি রেকর্ড সময় ধরে বিশ্বের এক নম্বর থেকেছেন, একটা সময় তিনি ছিলেন বিশ্বের ৭০২ নম্বর। ১৯৯৮ সালে এটিপি ট্যুরে তাঁর প্রথম ম্যাচ জেতেন ফেডেরার। তখন কে জানত, এই ছেলেই জিতবে এক হাজারের উপর বেশি ম্যাচ!

র‌্যাঙ্কিংয়ে ৪০০ নম্বরের মধ্যে ঢুকে পড়ার সুবাদে এর পর সুইস ইন্ডোর্স টুর্নামেন্টে ওয়াইল্ড কার্ড পেলেন তিনি। সেখানে প্রথম খেললেন আন্দ্রে আগাসির বিরুদ্ধে। এক ঘণ্টার মধ্যে হেরে বিদায় নিলেও তারকা দর্শনের স্বাদ পেলেন প্রথম বার। এর পর খুব দ্রুতই তিনি ঢুকে পড়লেন ১০০জনের মধ্যে। আরও ঘন-ঘন তারকাদের সঙ্গে খেলা পড়তে থাকল। ‘‘আমি খুব নার্ভাস থাকতাম তারকাদের সঙ্গে খেলা নিয়ে।’’ কে বলছেন? না, দুনিয়ার জনপ্রিয়তম টেনিস তারকা!

২০০১ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম এটিপি ট্রফি জয়। কিন্তু স্মরণীয় মুহূর্ত এল পাঁচ মাস পরে। যখন আদর্শ পিট সাম্প্রাসকে হারিয়ে দিলেন ফেডেরার। সেই সময় সব চেয়ে গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাব থাকা সাম্প্রাস হেরে বলে গেলেন, ‘‘নতুন অনেকে উঠে আসছে টেনিসে। কিন্তু রজার তাদের মধ্যেও স্পেশ্যাল।’’ সে বার কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে গেলেও মঞ্চটা তৈরি হয়ে গেল। ২০০৩ থেকে ২০০৭, এই চার বছরে ১৮টির মধ্যে ১২টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতলেন ফেডেরার। বাসেলের সেই কাঁদুনে ছেলে জয় করল বিশ্ব!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE