Advertisement
E-Paper

ওকে নিয়ে এত নাচানাচি কেন আমের প্রশ্নে রোহিত অগ্নিশর্মা

ধমকের পর ধমক চলছে, যার উত্তরোত্তর তীব্রতার সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে চরম তাচ্ছিল্য। ভ্রূ কুঁচকোনো, কপালের ভাঁজে চূড়ান্ত অসূয়ার কাটাকুটি। প্রশ্নকর্তা প্রথমে থতমত, শেষে রোষের লাভাস্রোতে পড়ে নিশ্চুপ।

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৬ ০৪:২৭
এখন টিম ইন্ডিয়ার মেজাজ।শহরে হরভজনের শক্তি প্রদর্শন। দর্শক হার্দিক।ছবি: উৎপল সরকার

এখন টিম ইন্ডিয়ার মেজাজ।শহরে হরভজনের শক্তি প্রদর্শন। দর্শক হার্দিক।ছবি: উৎপল সরকার

পারলে পাকিস্তান পেসারকে এখনই ছিঁড়ে ফেলেন রোহিত শর্মা!

ধমকের পর ধমক চলছে, যার উত্তরোত্তর তীব্রতার সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে চরম তাচ্ছিল্য। ভ্রূ কুঁচকোনো, কপালের ভাঁজে চূড়ান্ত অসূয়ার কাটাকুটি। প্রশ্নকর্তা প্রথমে থতমত, শেষে রোষের লাভাস্রোতে পড়ে নিশ্চুপ। দোষ তাঁকে কোনও ভাবে দেওয়া যায় না। প্রশ্ন যথাযথ এবং প্রাসঙ্গিক। আর তো মোটে দশ দিন। কে না জানে, মোটে‌ দশ দিন পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আবার এশিয়ার ‘অ্যাসেজ’। আবার ভারত বনাম পাকিস্তান। মহম্মদ আমের নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ এখন হবে না তো কবে হবে?

রোহিত গুরুনাথ শর্মা বুঝিয়ে দিলেন, ও সব অন্তত তাঁর সামনে হবে না। মহম্মদ আমেরকে নিয়ে নাচানাচি তিনি সহ্য করবেন না।

‘‘কীসের আমের ভাই? কী এমন করেছে যে এত নাচানাচি করছেন আপনারা?’’ পাকিস্তান পেসারের নাম শোনামাত্র ঝাঁঝিয়ে উঠলেন ভারতীয় ওপেনার। মধ্য কলকাতার অভিজাত হোটেলের প্রাক্-বিশ্বকাপ ভারতীয় টিমের ওপেন সেশনে ঢুকেছিলেন হাসতে-হাসতে। কিন্তু তখন ও সব কোথায়? দেখে তো মনে হল, কেউ গলা দিয়ে তেতো কুইনাইন নামিয়ে দিয়েছে। ‘‘একা ও-ই কি দারুণ বল করছে? বাকি পাঁচটা বোলার করছে না? আপনারা ওকে নিয়ে পড়ে আছেন,’’ বলতে থাকেন উত্তেজিত রোহিত। ‘‘কত কথাই না শুনছি আমেরকে নিয়ে। কেউ কেউ তো দেখছি ওয়াসিম আক্রমের পাশে বসিয়ে দিচ্ছে। আমার তো মনে হয় না ওকে নিয়ে এত কিছু বলার আছে। এক বছর খেলতে দিন। তার পর দেখা যাবে ওকে নিয়ে আদৌ কোনও কথা বলার প্রয়োজন আছে কি না! যাক গে, থাক। যা বলতে চাই, সেটা আমার মুখ দিয়ে বার করাবেন না!’’

সামনে বসা জনা পাঁচ-সাত মিডিয়া প্রতিনিধি ততক্ষণে বিস্ময়ের প্রস্তরমূর্তি।

বিস্ময় যুক্তিযুক্ত। ক্রিকেট-কারাবাস থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত পাক পেসার অধুনা এতটাই ক্রিকেট বিশ্বে প্রভাব ফেলছেন যে, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বিতার কাঁটাতারকেও অদৃশ্য দেখাচ্ছে মাঝে মাঝে। গোটা এশিয়া কাপে অতীতের পাকিস্তানের লড়াকু ঐতিহ্যের একক প্রতিনিধি হয়ে থাকা। শের-ই-বাংলায় মাত্র আশি রান হাতে নিয়ে দুঁদে ভারতীয় ব্যাটিং লাইন আপের শিরদাঁড়া ধরে ঝাঁকিয়ে দেওয়া। প্রথম দু’ওভারে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে নিশ্চিত জয়ের স্টেশন থেকে এক ঝটকায় বিরাট কোহালিদের খাদের অতলের দিকে একা ঠেলে দেওয়া। সে দিন ডুয়েলটা অসীম ধৈর্যে বিরাট কোহালি জিতে গিয়েছিলেন। ভারতও জিতেছিল। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে যা প্রায় বিরল দৃশ্য, মীরপুর সেটা দেখেছিল সে দিন। দেখেছিল, যুদ্ধের মধ্যে কোহালির এগিয়ে গিয়ে আমেরকে বাহবা দিয়ে আসা। দেখেছিল, কী ভাবে ম্যাচ শেষে আমের-আপ্লুতায় ডুবে যাচ্ছেন বিরাট থেকে ধোনি। সেখানে রোহিত এমন বললেন? বাক্-রুদ্ধ হয়ে পড়া স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া।

মিডিয়ার একাংশে যার পর জল্পনা চলল, আমেরের বিরুদ্ধে দুম করে ফেটে পড়ে আদতে কী বোঝাতে চাইলেন রোহিত? এটা কি শুধুই মীরপুরে আমেরের কাছে হেরে যাওয়ার ক্ষোভ? নাকি কাপ-যুদ্ধের আগে আমেরকে অন্য বার্তা দিয়ে রাখা যে, এ বার আর সুমধুর সম্প্রীতি নয়? মুম্বইকরকে জিজ্ঞেস করে উত্তর পাওয়া যায়নি। পাক পেসারের নির্বাসন থেকে ফেরা তাঁর অপছন্দের কারণ কি না জানতে চাওয়ায়, আবার তাচ্ছিল্য দেখালেন রোহিত। বললেন, ও সব তাঁর মাথা ঘামানোর ব্যাপার নয়। ঘামানও না। শহরে উপস্থিত পাকিস্তান ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত একজনকে জিজ্ঞেস করা হল এমন বিস্ফোরণ নিয়ে। একটু চুপ থেকে বললেন, ‘‘এ সব চলতে থাকে। আর ক’দিনেই তো আবার ম্যাচ আছে।’’

অথচ এ দিন একটা সময় পর্যন্ত উত্তেজনার কোনও ব্যাপারই ছিল না। ভারতীয় টিমের পক্ষ থেকে চার জনকে পাঠানো হয়েছিল। প্রথম জন, এক কথায় রকস্টার। দ্বিতীয় জন, নীরব ক্রিকেট সাধক। এবং তৃতীয়— স্বয়ং মিস্টার এক্সপিরিয়েন্স।

হার্দিক পাণ্ড্য। অজিঙ্ক রাহানে। হরভজন সিংহ।

রোহিত। ছবি: উৎপল সরকার

ক্যানভাসে নিস্তরঙ্গ ছবিই তৈরি হচ্ছিল টানা, উত্তেজনার লেশমাত্র ছিল না কোথাও। ব্যাটিং-বোলিং তো বটেই, হার্দিক পাণ্ড্যর কানের দুল থেকে ক্যারিবিয়ান ধাঁচের আলস্য মিশ্রিত কণ্ঠস্বর— মিডিয়ার সবই লোভনীয় মনে হবে। বডোদরার ছেলে কথাবার্তাতেও ডাকাবুকো। নইলে কেউ বলে, আমি ভারতের জাক কালিস হতে চাই? কেউ বলে যে, ‘‘স্বপ্ন তো দেখতে হবে। আমারটাই দেখুন। গত বছর যে সময় আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের দশ লক্ষের অফার পেলাম, তার পরের বছরই আমি ঢাকায়। দেশের হয়ে এশিয়া কাপ খেলছি। বড় কিছু করতে হলে স্বপ্ন দেখতে হবে। জাক কালিসের মতো আমাকেও হতে হবে।’’ ভারতের ক্রিকেট-আকাশের নতুন তারা নৃশংস ক্রিকেট-মানসিকতারও প্রামাণ্য ছেড়ে যান যখন বলেন, ‘‘গ্যালারিতে যখন হিটে বল উড়িয়ে ফেলি, বেশ লাগে।’’

হরভজন আবার সম্মোহনে জড়িয়ে দেবেন। যখন বলবেন, ‘‘আমি যত দিন খেলাটাকে ভালবাসব, খেলে যাব। চল্লিশ, পঞ্চাশ, বয়স যা-ই হোক না কেন।’’ ২০১১ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন টিমে ছিলেন, পাঁচ বছর পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ টিমেও আছেন। টার্বুনেটর বলে দেন, ‘‘আমার কাছে ক্রিকেট হল স্কিল প্লাস উইল। প্রতিভার সঙ্গে ইচ্ছের যোগফল। লোকে যখন জিজ্ঞেস করে, কাল ভারত জিতবে তো, এখনও চেগে যাই। আসলে জীবনে একমাত্র ক্রিকেটটাই আমি পারি। আর কিছু নয়।’’

আর অজিঙ্ক রাহানে? তাঁর কথা শুনলে শ্রদ্ধা জন্মাতে বাধ্য। প্রথম এগারোয় নিয়মিত নন, খুব দ্রুত যে হবেন তারও নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু তাতে কোনও অসুবিধে নেই মরাঠির। বরং অক্লেশে বলে দেন, ‘‘কম্বিনেশনটাই আসল। সেটা তো টিম পেয়েছে। খুব সহজে ওটা হয় না। আমার অপেক্ষা করতে অসুবিধে নেই।’’ রাহানের মনে হয়, এগারোয় থাকা না থাকার সঙ্গে ক্রিকেট-উন্নতির কোনও যোগাযোগ নেই। ‘‘আমি তো নেটে ব্যাট করি ম্যাচে করছি ভেবে। ডাগআউটে বসে ভাবি, মাঠে থাকলে আমি কী করতাম।’’ আরও একটা কথা বলেন রাহানে। বলেন, টিমমেটদের জন্য জল নিয়ে যেতে তাঁর কোনও অসুবিধে নেই। কারণ ওটাও সমান দেশাত্মবোধক, দেশের কাজে লাগছে!

পুরোটাই ফুরফুরে মেজাজ। পুরোটাই রোহিত শর্মা ঢোকার আগে পর্যন্ত। যিনি ঢোকার পর আবহ সম্পূর্ণ পাল্টে গেল।

‘‘ওকে (আমেরকে) বারবার বোঝাতে হবে ও অতটাই ভাল। বারবার।’’

‘‘একদিন ভাল করেছে, করেছে। ও নর্ম্যাল বোলার। এমন নয় যে আমের সবাইকে একাই উড়িয়ে দেয়।’’

‘‘আমেরকে বাদ দিয়ে বুমরাহকে নিয়ে প্রশ্ন করা উচিত আপনাদের। কী খেলছে ছেলেটা!’’

ধর্মশালায় শেষ পর্যন্ত ভারত-পাক হোক বা না হোক। শাহিদ আফ্রিদিদের ভারতে আগমন নিয়ে যতই ধোঁয়াশা থাক। ক্রিকেটের চিরকালীন মহাযুদ্ধের হানাহানির উত্তাপ কিন্তু আগাম এনে ফেললেন রোহিত শর্মা।

ভুল। রোহিত ‘অগ্নিশর্মা’!

rohit sharma Mohammad Aamer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy