নিজস্বী: কলকাতা ফুল ম্যারাথনের প্রতিযোগীদের সঙ্গে নিজের ছবি তুলছেন সচিন তেন্ডুলকর। রবিবার রেড রোডে। —নিজস্ব চিত্র।
ভক্তদের দিলেন প্রেরণা। নিজের প্রেরণা পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে নিলেন আশীর্বাদ! আর মহিলাদের এগিয়ে চলার উৎসাহ দিয়ে বলে গেলেন, ‘‘আপনারাই দেশের মেরুদণ্ড।’’ চুম্বকে এটাই রবিবারের কলকাতায় সচিন তেন্ডুলকরের দিনলিপি।
রেড রোডে ব্লেড রানার আফজল খানকে কলকাতা ফুল ম্যারাথনের মঞ্চে তুলে নিয়ে বললেন, ‘‘শরীরচর্চা না করার জন্য কত অজুহাত! অথচ এই লোকটার সে সব দরকার হয় না। ব্লেড রানার আফজল খান আপনি সকলের প্রেরণা।’’
ঘণ্টা খানেক পরে সেই সচিন আলিপুরে পুলিশ-ক্রীড়ায় অতিথি হিসেবে গিয়ে মঞ্চে প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে আপ্লুত। তিনি বললেন, ‘‘আপনার সঙ্গে এক মঞ্চে থাকতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি।’’ পিকে-র কপালে ক্ষতচিহ্ন দেখে জানতে চাইলেন আঘাতের কারণ। সব শুনে দেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবল ব্যক্তিত্বকে ‘লিটল মাস্টার’-এর পরামর্শ, ‘‘ক্রীড়া জগতে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে প্রেরণা দিয়েছেন আপনি। আপনার মতো প্রেরণা না থাকলে এই জায়গায় হয়তো আসা হত না। সুস্থ থাকুন। চলাফেরা করবেন সাবধানে।’’
ঘড়ির কাটায় সকাল পাঁচটা। রবিবারের কাকভোরে তখনও পুরোপুরি ঘুম ভাঙেনি কলকাতার। কিন্তু সচিন ঠিক হাজির হয়ে গিয়েছিলেন রেড রোডে কলকাতা ফুল ম্যারাথনের স্টার্টিং পয়েন্টে। ম্যারাথনে যোগ দিতে আসা অ্যাথলিটরা তখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন দৌড়ের। ভেসে আসে সচিনের গলা, ‘‘কেমন আছ কলকাতা। আমি ভাল আছি।’’ ম্যারাথন শুরু হওয়ার পরেও প্রিয় তারকাকে হাতের সামনে পেয়ে থমকে দাঁড়িয়ে পড়েন অ্যাথলিটরা। শুরু হয়ে যায়, সেলফি ও গ্রুপফি তোলার হুড়োহুড়ি। যা দেখে সচিন এ বার বলতে শুরু করে দেন, ‘‘আরে, শুরুতেই থেমে গেলে চলবে নাকি!’’ শুনে নিমেষে পাতলা হয়ে যায় ভিড়।
কিন্তু গোল বাধল ঘণ্টা খানেক পরে। যখন দশ কিলোমিটার ও পাঁচ কিলোমিটার দৌড় শুরু করতে ফের মঞ্চে উঠলেন সচিন। এ বার আর সচিনের কথায় ভিড় সরতে চায় না। সকলেই ছুঁয়ে দেখতে চান তাঁদের স্বপ্নের নায়ককে। কেউ আবার অটোগ্রাফের জন্য এগিয়ে দেন সচিনেরই আত্মজীবনী। যা দেখে এ বার মঞ্চের এক কোণে বসে পড়েন মুম্বইকর। যোগদানকারীদের হাত থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে তুলে দেন সেলফি। দেন দেদার সই। দৌড় ভুলে রেড রোড তখন মুখরিত ‘সচিন, সচিন’ স্লোগানে। হাসতে হাসতে সচিনও বলে ওঠেন, ‘‘প্রচুর বাচ্চাকে দৌড়াতে দেখছি। বড়রা ওদের খেলাধুলোর মূলস্রোতে তুলে আনুন। ভারতের স্বাস্থ্য ও ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখতে ফিটনেসটা কিন্তু জরুরি।’’
সচিন থাকবে আর ক্রিকেট থাকবে তা হয় নাকি! উঠে আসে শনিবার পৃথ্বী শ-দের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার প্রসঙ্গ। যা শুনে সচিনের প্রতিক্রিয়া, ‘‘দুর্দান্ত কৃতিত্ব। কোনও বড় স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করতে লাগে টিমওয়ার্ক। ছোটদের দলটা সেটাই করে দেখাল। শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুতিটা এত জোরদার ছিল যে গোটা টুর্নামেন্টেই ভারতকে অন্যদের চেয়ে আলাদা লেগেছে।’’ তার পরেই সাফল্যের কারণ হিসেবে বলেন, ‘‘রাহুলের (দ্রাবিড়) অবদানটা বিশাল। সঙ্গে পরশ (মামরে), অভয় (শর্মা)-ও দুর্দান্ত কাজ করেছে। বোর্ডও গত পনেরো বছর ধরে সেরা পরিকাঠামো দিচ্ছে। মাঠে তার প্রতিফলন দেখছি দুরন্ত ফিল্ডিং, ব্যাটিং, বোলিংয়ে।’’
এর পরেই ময়দান ছেড়ে আলিপুরে পুলিশ-ক্রীড়ায় অতিথি হিসেবে আগমন প্রাক্তন ভারত অধিনায়কের। সেখানেও প্রতিযোগীদের উৎসাহ দিয়ে বলে গেলেন, ‘‘মাঠ শেখায় পিছিয়ে গিয়েও ফের সামনে ফিরে আসার লড়াই। সে ভাবেই লড়াই হোক বার্ষিক ক্রীড়ায়।’’ পুলিশের মহিলা অ্যাথলিটদের দেখে এর পরেই মহিলাদের উৎকর্ষ বৃদ্ধির কথা বলেন এ দেশের শততম শতরানকারী। বলেন, ‘‘ঘর-সংসার, পেশা সামলে যে দায়বদ্ধতা আপনারা দেখান, তাতে আপনাদের পুরো নম্বর দিতেই হবে। ক্রিকেটে অলরাউন্ডার কথাটা থাকলেও আমরা নিছকই ক্রিকেটার। জীবনের প্রকৃত অলরাউন্ডার আপনারাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy