Advertisement
E-Paper

সাইয়ের শৃঙ্খলায় বদলেছে লাভলি ও আলির জীবন

যে ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ার পরে দেশ জুড়ে হইচই পড়ে গিয়েছিল, সেটি দেখে কেন টুইট করেছিলেন পাঁচটি অলিম্পিক্সে সোনাজয়ী নাদিয়া? ‘পারফেক্ট টেন’ নিজেই তা জানিয়েছেন জেসিকা খান (লাভলি) ও মহম্মদ ইজাজউদ্দিন (আলি)-কে।  

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:৫১
বিস্ময়: সেই বিখ্যাত ভল্ট। গার্ডেনরিচে পাড়ার মাঠেই চলছে আলি-লাভলির অনুশীলন। সোমবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

বিস্ময়: সেই বিখ্যাত ভল্ট। গার্ডেনরিচে পাড়ার মাঠেই চলছে আলি-লাভলির অনুশীলন। সোমবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

জিমন্যাস্টিক্সের কিংবদন্তি নাদিয়া কোমানেচির একটা ‘অসামান্য’ টুইট বদলে দিয়েছে ওদের জীবন। গার্ডেনরিচ বন্দর এলাকার শ্রমিক বস্তির অস্থায়ী ছাউনির ঘর থেকে দুই কিশোর-কিশোরী লাভলি আর আলি এখন সল্টলেক সাই ট্রেনিং সেন্টারের আবাসিক শিক্ষার্থী।

যে ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ার পরে দেশ জুড়ে হইচই পড়ে গিয়েছিল, সেটি দেখে কেন টুইট করেছিলেন পাঁচটি অলিম্পিক্সে সোনাজয়ী নাদিয়া? ‘পারফেক্ট টেন’ নিজেই তা জানিয়েছেন জেসিকা খান (লাভলি) ও মহম্মদ ইজাজউদ্দিন (আলি)-কে।

কয়েক দিন আগে নাদিয়ার মনের কথা ফোন করে তাঁর সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে কয়েক হাজার মাইল দূরের বাংলার দুই অচেনা জিমন্যাস্টকে। ‘‘ভিডিয়োতে দেখা লাভলির মুখ নাদিয়াকে তাঁর ছোটবেলার কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল। ছোটবেলায় ওর মতোই দেখতে ছিলেন নাদিয়া। দু’টো ছবি পাশাপাশি রেখে অবাক হয়ে যান তিনি। আর আলির শরীরের নমনীয়তা দেখে মনে হয়েছিল ঠিক মতো পরিচর্যা পেলে অনেক দূর যাবে,’’ জানানো হয় নাদিয়ার সংস্থার পক্ষ থেকে।

লাভলি বা আলি দু’জনেরই ফোন ছিল না তখন। তাদের নাচের কোচের নম্বর জোগাড় করে ফোন করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের নাদিয়া-অ্যাকাডেমি থেকে। যাঁর নাচের স্কুলে তোলা ভিডিয়ো দেখে রোমানিয়ার সোনার মেয়ে চমকে গিয়েছিলেন, ক্রিসমাসের ছুটিতে সাই থেকে এ দিনই বাড়িতে আসা সেই দুই ছাত্র-ছাত্রীকে পাশে বসিয়ে কোচ শেখর রাও বলছিলেন, ‘‘আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে কল করা হয়েছিল নাদিয়ার অ্যাকাডেমি থেকে (কল রেকর্ডও করে রেখেছেন তিনি)। প্রথমে অচেনা ফোন বলে ধরিনি। বারবার ফোন আসার পরে ধরি। তখন ‘নাদিয়ার অ্যাকাডেমির ব্যাক অফিস থেকে বলছি’, বলে একজন জানান, কেন লাভলিকে পছন্দ হয়েছিল নাদিয়ার।’’ শেখর যোগ করেন, ‘‘আমাকে ওরা পরামর্শ দিয়েছিল, ‘‘নাদিয়া চান লাভলি ফ্লোর এক্সারসাইজ এবং আন ইভন বার ইভেন্টে জোর দিক। আর আলি রিং ও ভল্ট ইভেন্টে প্রশিক্ষণ নিলে ভাল করবে। ভাল কোনও জায়গায় ভর্তি করে ‘টেকনিক্যালি পারফেক্ট’ করার পরমর্শ দিয়েছিল ওঁর সংস্থা।’’

প্রায় তিন মাস হয়ে গেল ঝুপড়ি ঘরের দুই বাসিন্দা সাইয়ের হস্টেলে থেকে দু’বেলা অনুশীলন করছেন কোচ চন্দ্রশেখরের কাছে। পুষ্টিকর খাবার, সঠিক অনুশীলন ও নিয়ম মেনে জীবনধারণ দু’জনকে অনেক ঝকঝকে করেছে, স্বীকার করছেন বাবা-মায়েরা।

পাড়ার নাচের স্কুলের প্রত্যেক দিনের প্রশিক্ষণ, নাচের প্রতিযোগিতায় নামার দিনগুলো ভুলে গিয়ে কেমন লাগছে সাইয়ের শৃঙ্খলিত জীবন?

সোমবারই বার্ষিক পরীক্ষায় পাশ করে অষ্টম শ্রেণিতে ওঠা লাভলি বলছিল, ‘‘অনেক কিছু শিখতে পারছি। যেমন কী ভাবে দৌড়ে গিয়ে ফ্লোরে ইভেন্ট শুরু করতে হয়, সেই স্টেপিং শিখেছি। এগুলো জানতাম না। স্যররা আলাদা করে শেখাচ্ছেন ব্যালেন্সিং বিমে কী ভাবে কসরত দেখালে বেশি পয়েন্ট পাওয়া যায়।’’ নবম শ্রেণির ছাত্র আলির মন্তব্য, ‘‘রিং অ্যাপারেটাস তো জীবনে কখনও ব্যবহার করিনি। সেটা সাইতে শিখছি। আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিক্সের চারটি ইভেন্টই করাচ্ছেন স্যর। এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাই না। যত কষ্টই হোক, সাইতে থাকব। পদক জিতে দেশের মুখ উজ্জ্বল করব।’’

ওদের কী ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান বর্তমান কোচ চন্দ্রশেখর? তিনি বলছেন, ‘‘ওরা নাচত। ভল্ট দিত। সেটা নাচের জন্য দেখতে ভাল। কিন্তু জিমন্যাস্টিক্সের নিয়ম মেনে কিছুই করত না। চারটি ইভেন্টেই অনুশীলন করাচ্ছি। আগে টেকনিক্যালি নিখুঁত করতে হবে। জাতীয় স্তরে জুনিয়র বা যুব বিভাগে নামাতে হবে।’’ যোগ করেন, ‘‘দু’জনের শেখার ইচ্ছে আছে।’’ আর প্রণতি নায়েক, মন্দিরা ঘোষ হাজরার মতো দেশের সেরা জিমন্যাস্টদের তুলে আনা মেয়েদের জাতীয় দলের কোচ মিনারা বেগমের মন্তব্য, ‘‘ওদের সব চেয়ে বড় গুণ খুব সাহসী। সাহস না থাকলে জিমন্যাস্ট হওয়া যায় না।’’

নিয়মিত কোচের মোবাইলে নাদিয়া-সহ বিশ্বসেরা জিমন্যাস্টদের ভিডিয়ো দেখলেও দু’জনেরই ইচ্ছে দীপা কর্মকারকে কাছ থেকে দেখার। লাভলির মন্তব্য, ‘‘নাদিয়া আন্টির সঙ্গে দেখা করা সম্ভব নয়। দীপা দিদিকে একবার দেখতে চাই।’’ যা শুনে উজ্জ্বল হয় আলির মুখও।

Nadia Comaneci Gymnastics SAI
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy