Advertisement
E-Paper

হাইজাম্পে সাফল্য এসেছে সোমা দত্তর, আসেনি সম্মাননা

ছোটবেলা থেকেই ছোটাছুটি। ষাট পেরিয়ে গিয়েছেন। তবুও অক্লান্ত সোমা দত্ত। ডুয়ার্সের বীরপাড়ার চা বাগানে জন্ম, বেড়ে ওঠা। তার পরে দীর্ঘ পথ পেরিয়ে স্কুলের চাকরি জীবন। তারই মধ্যে হাইজাম্প, লংজাম্প, ১০০ মিটার দৌড়— কত প্রতিযোগিতাতেই না পুরস্কার পেয়েছেন! মেডেলে ঘর ভর্তি। ক’দিন আগে মালয়েশিয়ায় এশিয়ান প্যাসিফিক মাস্টার্স মিটে হাইজাম্পে সোনা পেয়েছেন। লংজাম্পে রুপো পেয়েছেন। ১০০ মিটার দৌড়ে ব্রোঞ্জ জিতেছেন। শিলিগুড়ির সেই ক্রীড়াবিদ তথা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা সোমা দত্ত, তাঁর খেলাধুলোর জীবনের নানা কথা শোনালেন কিশোর সাহাকেষাট পেরিয়ে গিয়েছেন। তবুও অক্লান্ত সোমা দত্ত। ক’দিন আগে মালয়েশিয়ায় এশিয়ান প্যাসিফিক মাস্টার্স মিটে হাইজাম্পে সোনা পেয়েছেন। লংজাম্পে রুপো পেয়েছেন। ১০০ মিটার দৌড়ে ব্রোঞ্জ জিতেছেন। শিলিগুড়ির সেই ক্রীড়াবিদ তথা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা সোমা দত্ত, তাঁর খেলাধুলোর জীবনের নানা কথা শোনালেন কিশোর সাহাকে

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:১৩
শিলিগুড়ির ক্রীড়াবিদ তথা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা সোমা দত্ত।

শিলিগুড়ির ক্রীড়াবিদ তথা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা সোমা দত্ত।

প্রশ্ন: প্রবীণদের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় জেতার জন্য অভিনন্দন। কেমন লাগছে?

উত্তর: দারুণ অভিজ্ঞতা। এবার প্রতিযোগিতা হয়েছিল মালয়েশিয়ার পেনাঙে। ৭ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর। এশিয়ান প্যাসিফিক মাস্টার্স মিট। সেখানেই হাইজাম্পে সোনা জিতেছি। লংজাম্পে রুপো পেয়েছি। ১০০ মিটারে তেমন ভাল করতে পারিনি। ব্রোঞ্জ পেয়েছি সেটায়। বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে জিতে জাতীয় পতাকা ওড়ানোর অনুভূতিই আলাদা।

প্র: আপনার অ্যাথলেটিকসের শুরু কবে?

উ: ছোটবেলা থেকেই আমি ছোটাছুটিতে অভ্যস্ত। স্কুল পর্যায়েও খেলাধূলা করতাম। একটা সময়ে শিলিগুড়ির মধুমিতার সঙ্গে ডাবলসও খেলেছি। তবে অ্যাথলেটিকসই আমার পছন্দের। মাস্টার ডিগ্রির পরে স্কুলের চাকরিতে যখন ঢুকলাম তখনও চর্চা ছাড়িনি।

প্র: আপনার অনুপ্রেরণা কে?

উ: শিলিগুড়িতে প্রয়াত পানু দত্ত মজুমদারের কথা প্রথমেই বলব। তিনি যেভাবে উৎসাহ দিয়েছেন তা জীবনে ভোলার নয়। শুধু তিনিই নন। ওঁর স্ত্রী, ছেলে এখনও সব সময় আমার পাশে থাকেন। সহযোগিতা করেন। সোনা জিতে আমি পানুদার স্ত্রীকে মানে বৌদিকে ফোন করেছিলাম। কী যে খুশি হয়েছেন, কী বলব! আমার মেজদি সন্ধ্যাদি খো খো কবাডি কেলত দারুণ। ও ভীষণ উৎসাহ দিত।

প্র: আপনার বাবা, মা খেলাধুলায় বাধা দেননি?

উ: একেবারেই না। বাবা কুমুদিনীকান্ত দত্ত চা বাগান এলাকার পোস্টমাস্টার ছিলেন। ছোটাছুটি হোক বা খেলাধূলা। তিনি উৎসাহ দিতেন বরাবরই। মা তো আমাকে কখনও বাধাই দেননি। আমাদের পরিবার বেশ বড়। আমরা ৫ বোন, ৩ ভাই। সবাই কমবেশি খেলাধূলায় ছোট থেকেই যুক্ত। খেলায় আগ্রহ সবারই।

প্র: স্কুলের চাকরি করে দেশ-বিদেশের প্রতিযোগিতায় নামার সাহস পেলেন কী ভাবে?

উ: সে এক গল্প। এবিটিএ-এর অনেক প্রতিযোগিতা হত। প্রথম থেকেই আগ্রহ ছিল। শিলিগুড়ির এবিটিএ-এর নেতা তমাল চন্দ আমাকে খুব উৎসাহ দিতেন। তিনিই আমাকে প্রবীণদের প্রতিযোগিতায় দার্জিলিং তথা উত্তরবঙ্গের হয়ে প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দিতে বলতেন। অনেক জায়গায় তিনিই নিয়ে গিয়েছেন। প্রতিযোগিতাগুলির ক্ষেত্রে তেমন কোথাও হার মানিনি। জিতেই ফিরেছি বলা যায়। আর উৎসাহও আরও বেড়েছে।

প্র: প্রথম আপনাকে নিয়ে হইচই হয় কবে?

উ: তেমনভাবে কোনদিনই হয়নি। তবে ২০১১ সালে শিলিগুড়িতে রাজ্য মিট হয়েছিল প্রবীণদের। সেখানে অ্যাথলেটিকসে দুর্দান্ত ফল করার সুবাদে অনেকে উৎসাহ দিয়েছিলেন। যতদূর মনে পড়ে ১০০ মিটার, হাইজাম্প, লংজাম্পে আমার ধারে কাছে কেউ ছিলেন না। এর পরে চণ্ডীগড়ের প্রতিযোগিতায় সোনা পেয়েছি। সেখানেই ঠিক হয় মালয়েশিয়ায় প্রতিনিধিত্ব করতে যাব।

প্র: এ ধরনের প্রতিযোগিতায় নিজের খরচে যাতায়াত করতে হয়। সেই টাকা জোগাড় করেন কী ভাবে?

উ: খুব কষ্ট হয়। অবসরবাবদ পাওয়া টাকা প্রায় শেষ। চেয়েচিন্তে যাই। এবার কেউ ৫ হাজার, কেউ ১০ হাজার করে দিয়েছে। তাতেও কুলোয়নি। সংসার খরচের জন্য জমানো একটা টাকা তুলে নিয়ে গিয়েছি।

প্র: শিলিগুড়িতে মহকুমা ক্রীড়া পরিষদ রয়েছে। ক্রীড়াপ্রেমীরাও রয়েছেন। কেউ সাহায্য করেন না?

উ: কয়েকজন যথাসাধ্য করেন। নান্টু পাল, পানুদার ছেলে ভাস্কর। কিন্তু পরিতাপের বিষয় ক্রীড়া পরিষদ আমাকে কোনদিন গুরুত্বই দেয়নি। শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য়ের কাছে আবেদন করেছি। নবান্নে চিঠি দিয়ে সাহায্য চেয়েছি। নেতা-মন্ত্রীদের দোরে দোরে ঘুরেছি। বিদেশে একটা প্রতিযোগিতায় যেতে কী পরিমাণ খরচ হয় তা বলে বোঝানো যাবে না। সেখানে একটা পদক জেতা অত সহজ নয়। তবুও প্রবীণদের কেন যে আর্থিক সাহায্য জোটে না, বুঝি না। সে জন্য মাঝেমধ্যে একা বসে কাঁদি। ভাবি আর কোথাও প্রতিযোগিতায় নামব না। কিন্তু, পদকগুলির দিকে তাকালে চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। জেদ চেপে যায়। ভাবি ভিক্ষা করে হলেও খেলা চালিয়ে যাব।

প্র: আপনি এর পরে কোন প্রতিযোগিতায় নামবেন?

উ: ২০২২ সালে জাপানের কানসাইয়ে ইন্টারন্যাশনাল মাল্টি স্পোর্টস অ্যাথলেটিকস কমপিটিশন হবে। সেখানে যেতে হবে। সেটায় যাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে। আমার কোচ জীবন চক্রবর্তী মারা গিয়েছেন অনেক আগেই। কিন্তু বলে গিয়েছেন, ‘‘এ দেশে বয়স্কদের খেলায় উৎসাহ দেওয়ার লোকের বড়ই অভাব। তাই ভেঙে পড়বি না। দাঁতে দাঁত চিপে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’’

প্র: দেশের আসরে সোনা জিতলেন। শিলিগুড়িতে কেউ সংবর্ধনা দিতে ডেকেছে?

উ: কেউ না। সে জন্যই তো চোখ জলে ভিজে যায়। কলকাতার কথা ছেড়ে দিলাম। আমি যে সোনা পেয়েছি তা শিলিগুড়ি তো বটেই, গোটা উত্তরবঙ্গের গর্ববোধ হওয়া উচিত। কিন্তু, কেউ যদি একটা ফুল না দেয় জোর করে তো বলতে পারি না। বয়স্করা কোনও প্রতিযোগিতা জিতলে বিদেশে তাঁদের খোলা জিপে নিয়ে মহামিছিল হয়। যাতে বয়স্করা শরীরচর্চায় উৎসাহ পান। এখানেও তা একদিন হবেই। কিন্তু, কবে হবে তা কে জানে!

Soma Dutta Athletics সোমা দত্ত
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy