বিশ্বকাপে আরও এক বার এমসিজি-তে নামতে চলেছে ভারত। মাসখানেক আগে এই মাঠেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুঁড়িয়ে দিয়ে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ জিতেছিল ধোনিরা। যার পর থেকে ভারতকে ক্রমশ আরও, আরও বেশি অপ্রতিরোধ্য দেখিয়েছে!
অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট আর ত্রিদেশীয় সিরিজের ব্যর্থতার পর বিশ্বকাপে নেমেই টিমের এই তাক লাগানো ভোলবদল প্রত্যেক ভারত-সমর্থক তারিয়ে উপভোগ করেছেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, অন্য টিমগুলোর মতোই টুর্নামেন্টের নকআউট পর্বে পৌঁছে ভারতের উপরেও সমান চাপ থাকবে। বিশেষ করে কাপটা ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া যেখানে টিমের লক্ষ্য। ধোনিরা জানে, এখন একটা ভুল মানেই এত দিনের ভাল পারফরম্যান্স গড়াগড়ি যাবে ধুলোয়। স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে।
এখান থেকে প্রতিবারই মাঠে নেমে নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিতে হবে। তবে যেটা ভারতের পক্ষে যাচ্ছে, সেটা হল টিম এই পরীক্ষার সামনে আগেও পড়েছে। ক্যাপ্টেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি এমন পরিস্থিতি বেশ কয়েক বার সামলেছে। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সসম্মানে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে মাথা উঁচু করে বেরিয়েছে। আমরা পারি, আমরা পারব এই আত্মবিশ্বাসটা নকআউট ম্যাচগুলোয় থাকা টিমের জন্য ভীষণ জরুরি। কারণ এই পর্যায়ে পৌঁছে ক্রিকেটারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে নিজের উপর আস্থা-সহ চিন্তাভাবনাগুলোকে ইতিবাচক রাখা। তবে আমি নিশ্চিত, এই ভারত চাপের মুখে মাথা ঠান্ডা রাখতে পারবে।
কোয়ার্টার ফাইনালে সামনে বাংলাদেশকে পেয়ে ভারত খুশি-ই হয়েছে। অনেকে বলবেন, আরে খেলতে হচ্ছে তো বাংলাদেশের মতো টিমকে! কিন্তু মনে রাখবেন, ভারত এই বিশ্বকাপে অসাধারণ খেলেছে বলেই কোয়ার্টার ফাইনালে তুলনায় সহজ প্রতিপক্ষের সামনে। এখন প্রশ্ন, আজ এমসিজি-তে ভারতের জেতার সম্ভাবনা কতটা? আমি বলছি নব্বই শতাংশ। আর সেটা বাংলাদেশ টিমকে ওদের প্রাপ্য সম্মান দিয়েই বলছি।
অনেকে ২০০৭ টানছেন। ঠিক আট বছর আগে বাংলাদেশের কাছে হেরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে মাথা হেঁট করে ফিরেছিল ভারত। কিন্তু আমার কাছে সেটা ছিল স্রেফ একটা দুঘর্টনা। যার পুনরাবৃত্তির কোনও সুযোগ আমি দেখছি না। আপনারা হয়তো মনে মনে বলছেন, ‘নেভার সে নেভার ইন লাইফ,’ জীবনে কোনও কিছুই অসম্ভব নয়। কিন্তু তবু বলব, সে বারের পরিস্থিতি ক্রিকেট মাঠে আবার উদয় হলে আমি অপরিসীম আশ্চর্য হব! কারণ শুধু প্রতিভার বিচারেই নয়, ফর্মের দিক থেকে আর অভিজ্ঞতায় ভারত এই বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি উঁচুদরের টিম। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিংসব বিভাগে যারা দুর্দান্ত!
তবে বাংলাদেশও অবিশ্বাস্য উন্নতি করেছে। বিশেষ করে বোলিংয়ে। এর আগে আর কোনও বিশ্বকাপে বাংলাদেশের আক্রমণে এমন ধার দেখেছি বলে আমি তো মনে করতে পারছি না। ইংল্যান্ডকে হারানোর পিছনে আর নিউজিল্যান্ডের কালঘাম ছুটিয়ে দেওয়ায় বোলারদের দাপটটাই আসল ছিল। নিউজিল্যান্ড ম্যাচে ফিল্ড প্লেসিং একটু ঠিকঠাক করলে ম্যাচটা ওরা জিততেও পারত। নিজেদের পারফরম্যান্সে গর্ব করাই উচিত বাংলাদেশের। তবে ওরাও জানে, কোয়ার্টার ফাইনালে অসম্ভব শক্তিধর টিমের পাল্লায় পড়তে হচ্ছে।
এমসিজি-র আয়তনটা কিন্তু বড় ফ্যাক্টর হবে। বিশাল মাঠটা বাংলাদেশের ছেলেদের দক্ষতা আর ফিটনেসকে পরীক্ষায় ফেলবে। এখানে গ্যাপগুলো অনেক বড়। বাউন্ডারিও বড়। দড়ি পার করে বল মাঠের বাইরে পাঠানো সহজ হবে না। প্রশ্ন হল, পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে নিজেদের খেলায় পরিবর্তন আনার ক্ষমতা টিমটার আছে কি না।
মেলবোর্নে মাঝে মাঝে বৃষ্টি হচ্ছে। আজও বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে। সঙ্গে এমসিজি-র পিচ বাংলাদেশকে আরও পরীক্ষার মুখে ফেলতে পারে। এই অবস্থায় টস ওদের জন্য খুব জরুরি। ভারত কিন্তু আগে ব্যাট করলে রানের বন্যা বইয়ে ম্যাচটা ওদের হাতের বাইরে নিয়ে চলে যেতে পারে!
ভারতের এই দলটার এমনই ক্ষমতা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy