নাগপুরে যখন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ের লড়াই চালাচ্ছেন শ্রেয়স আইয়ারেরা, মাঠের বাইরে তখন ফের বড়সড় যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে তাঁদের ক্রিকেট বোর্ড।
প্রায় চার বছর ধরে চলা লোঢা কমিটির সুপারিশের বিরুদ্ধে যুদ্ধং দেহি মনোভাব এখনও ছেড়ে বেরোতে পারছেন না দেশের ক্রিকেট কর্তারা। বোর্ডের ক্ষমতায় ফিরেই তাই লোঢা সংস্কারের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারাকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ করে তাঁরা ফের ছুটছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালতে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, জয় শাহ পরিচালিত নতুন ক্রিকেট বোর্ড তাদের প্রথম বার্ষিক সাধারণ সভা করতে চলেছে আগামী ১ ডিসেম্বর। আর সেখানে সংস্থার গঠনতন্ত্রে বড়সড় রদবদল আনার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে। বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীদের আশা বাড়িয়ে তুলতে এই প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে, প্রেসিডেন্টের মেয়াদ এবং লোঢা সংস্কারে প্রস্তাবিত ‘কুলিং অফ’ নিয়ম পাল্টে ফেলা। লোঢা সুপারিশে বলা হয়েছিল, রাজ্য সংস্থা বা বোর্ড যে কোনও জায়গায় টানা ছ’বছর কাটিয়ে ফেললেই এক জন প্রশাসককে বাধ্যতামূলক ‘কুলিং অফ’ পর্বে যেতে হবে। আর সেই বিশ্রাম পর্ব হবে তিন বছরের। এই সময়ে রাজ্য বা বোর্ড কোনও সংস্থাতে কোনও পদেই সেই ব্যক্তি থাকতে পারবেন না। এই নিয়ম বলবৎ থাকলে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেয়াদ হবে দশ মাসের। কারণ সিএবি-তে পাঁচ বছরের উপরে তিনি কাটিয়েই ফেলেছেন। যা নিয়ে মুম্বইয়ে সৌরভ মসনদে বসার সময়েই বোর্ড কর্তাদের মধ্যে কথাবার্তা শুরু হয়ে গিয়েছিল যে, বোর্ডে কখনও কোনও পদে না থাকা কাউকে মাত্র দশ মাস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করে চলে যেতে হবে কেন? সেই আলোচনা আরও চড়া সুর নিতে চলেছে এ বার। বোর্ডের ক্ষমতা ফিরে পাওয়া ক্রিকেট কর্তারা নতুন করে আদালতে আবেদন করবেন যে, প্রেসিডেন্ট এবং সচিবের ক্ষেত্রে বোর্ডের মেয়াদটাই ধরা হোক। অর্থাৎ, সৌরভ বা সচিব জয় শাহ কত দিন তাঁদের রাজ্য সংস্থায় কাটিয়েছেন সেটাকে বাইরে রেখে হিসাব করা হোক, বোর্ডের পদে তাঁরা কত দিন কাটিয়েছেন। নতুন প্রস্তাব হল, বোর্ডের দুই সব চেয়ে প্রভাবশালী কর্তা প্রেসিডেন্ট এবং সেক্রেটারিকে বোর্ডের পদাধিকারী হিসেবে দু’টি মেয়াদ অর্থাৎ ছয় বছর কাটানোর পরেই ‘কুলিং অফে’ পাঠানো হোক।
এ দিকে, লোঢা সুপারিশ অনুযায়ী বোর্ডের নতুন গঠনতন্ত্র তৈরি হয়ে গিয়েছে। সেই গঠনতন্ত্র মেনেই সমস্ত রাজ্য সংস্থায় নির্বাচন হয়েছে। এমনকি, বোর্ডে নির্বাচনহীন পদাধিকারী চয়নও করতে হয়েছে সেই গঠনতন্ত্র মেনে। সুপ্রিম কোর্টে সিওএ সেই গঠনতন্ত্র পাশও করিয়েছে। সব জেনেও বোর্ড কর্তারা ফের দ্বারস্থ হতে চান সর্বোচ্চ আদালতের। নতুন করে আর্জি জানাতে চান যে, লোঢা সুপারিশ মেনে তৈরি হওয়া গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বোর্ড পরিচালনায় বাস্তবগত সমস্যা থেকে যাচ্ছে। ‘‘এখনকার গঠনতন্ত্র মানতে গেলে বোর্ড পরিচালনা করার মতো যথেষ্ট অভিজ্ঞ এবং পাকাপোক্ত লোকই পাওয়া যাবে না। প্রত্যেক বারই নতুন কাউকে আনতে হবে,’’ বললেন ওয়াকিবহাল কয়েক জন কর্তা। সুপ্রিম কোর্ট তাদেরই এক বার পাশ করা নিয়মকে ফের পাল্টানোর ব্যাপারে মত দেবে কি না, তা দেখার। তবে যদি কোনও ভাবে ‘কুলিংঅফ’ নিয়ে তাঁদের আর্জি শোনা হয়, তা হলে সৌরভ এবং অমিত শাহ-পুত্র জয় দু’জনেরই অন্তত তিন বছর করে প্রেসিডেন্ট এবং সচিব পদে থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হবে।