Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

এমন টেনিস দশ বছরে নাদালকেও খেলতে দেখিনি

নোভাক জকোভিচের কেরিয়ার গ্র্যান্ড স্ল্যাম করার ম্যাচ প্রথম সেট জিতেও শেষমেশ ৬-৪, ৪-৬, ৩-৬, ৪-৬ হারে আমি বিন্দুমাত্র অবাক নই! কারণটা খুব সোজা। স্ট্যানিসলাস ওয়ারিঙ্কা রবিবার ক্লে কোর্ট গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালে যে অসাধারণ টেনিসটা খেলেছে, ইদানীং কালে সে রকম কিছু আমি দেখিনি। হ্যাঁ, কথাটা গত দশ বছরে ন’বার ফরাসি ওপেন চ্যাম্পিয়ন রাফায়েল নাদালের নামটা মাথায় রেখেই বলছি।

জয়দীপ মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৫ ০৩:৫১
Share: Save:

নোভাক জকোভিচের কেরিয়ার গ্র্যান্ড স্ল্যাম করার ম্যাচ প্রথম সেট জিতেও শেষমেশ ৬-৪, ৪-৬, ৩-৬, ৪-৬ হারে আমি বিন্দুমাত্র অবাক নই!

কারণটা খুব সোজা।

স্ট্যানিসলাস ওয়ারিঙ্কা রবিবার ক্লে কোর্ট গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালে যে অসাধারণ টেনিসটা খেলেছে, ইদানীং কালে সে রকম কিছু আমি দেখিনি। হ্যাঁ, কথাটা গত দশ বছরে ন’বার ফরাসি ওপেন চ্যাম্পিয়ন রাফায়েল নাদালের নামটা মাথায় রেখেই বলছি।

বরং এ-ও বলব, এত উঁচু স্ট্যান্ডার্ডের গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালও সাম্প্রতিক কালে খুব কম দেখেছি। এই মুহূর্তে চট করে যতটুকু মনে পড়ছে— গত দশ বছরে দু’টো উইম্বলডন আর একটা অস্ট্রেলীয় ওপেন ফাইনাল এ দিনের ফরাসি ওপেন ফাইনালের পাশে বসতে পারে। ওই তিনটে ফাইনালই ছিল ফেডেরার বনাম নাদালের। ওই রকম দু’জন মহান টেনিস তারকার বিরল যুদ্ধের পাশে ওয়ারিঙ্কার নাম বসে পড়া মানে আরওই পরিষ্কার, ছেলেটা এ দিন সত্যিই কোন অবিশ্বাস্য পর্যায়ের টেনিসটা খেলেছে!

বিশ্বের এক নম্বরের কাছেও এ দিন ওয়ারি‌ঙ্কার ব্যাকহ্যান্ড শটের কোনও উত্তর ছিল না। এমনিতেই সুইস ছেলেটা যা মারে প্রচণ্ড জোরে মারে। অনেকটা নাদালের মতো। টেনিসে যাকে হেভি শট বলে। তার উপর এ দিন ওয়ারিঙ্কার ব্যাকহ্যান্ড ক্রস কোর্ট, ডাউন দ্য লাইন শটগুলো সময়-সময় যেন অপার্থিব দেখিয়েছে। বিশেষ করে ব্যাকহ্যান্ড ডাউন দ্য লাইন শটে বারবার কোর্টটাকে ‘ওপেন’ করে দিয়ে ওয়ারিঙ্কা নিজের মর্জি মতো দৌড় করিয়ে এক-এক সময় নাকানিচোবানি খাইয়েছে জকোভিচের মতো দুর্ধর্ষ কোর্ট কভারিং যার, তাকেও!

নতুন চ্যাম্পিয়নকে অভিনন্দন জোকারের। রবিবার। ছবি: এএফপি।

তা-ও ওয়ান হ্যান্ডেড ব্যাকহ্যান্ডে। যেখানে এখন টেনিস অ্যাকাডেমিতে আট বছরের বাচ্চাকেও দু’হাতে ব্যাকহ্যান্ড মারতে শেখানো হয়। আর পেশাদার সার্কিটে তো ডাবল হ্যান্ডেড ব্যাকহ্যান্ডের ছড়াছড়ি। একটা ফেডেরার, একটা দিমিত্রভ আর এই ওয়ারিঙ্কা হল সেখানে বিরল প্রজাতি। কিন্তু এক হাতে মারা ব্যাকহ্যান্ড এখনও কী ম্যাজিক তৈরি করতে পারে সেটাও তো দেখা গেল!

ওয়ারিঙ্কার হয়তো এটা কেরিয়ারের মাত্র দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্ল্যাম। কিন্তু মনে রাখবেন ওর সাকসেস পার্সেন্টেজ কিন্তু একশোয় একশো। দু’টো ফাইনাল খেলে দুটো খেতাব। তার চেয়েও বড় কথা, গত বছরের গোড়ায় ওয়ারি‌ঙ্কা যখন অস্ট্রেলীয় ওপেন চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, তখন মেলবোর্নেও জকোভিচকে হারিয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনালে। তা ছাড়া শেষ দু’বছরে আরও তিনটে গ্র্যান্ড স্ল্যামে জকোভিচকে পঞ্চম সেটে টেনে নিয়ে গিয়ে তবেই হেরেছে ওয়ারিঙ্কা। যার মানে দু’জনের হেড-টু-হেডে জকোভিচ এ দিনের আগে পর্যন্ত যতই ১৭-৩ এগিয়ে থাকুক না কেন, ব্যবধানটা মোটেই ওয়ারিঙ্কার টেনিস স্কিলের সঠিক মাপকাঠি নয়।

রবিবার ফিলিপ শাতিয়ের কোর্ট যার জ্বলন্ত সাক্ষী!

প্রথম সেট জকোভিচ জিতলেও টিভিতে ওর বডি ল্যাংগুয়েজ দেখে আমার কেমন যেন মনে হচ্ছিল, কেরিয়ার গ্র্যান্ড স্ল্যাম ম্যাচ খেলতে নামার চাপে ভুগছে। তার উপর ছিল প্যারিসের ১৪-১৫ ডিগ্রি থেকে আচমকা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠা গরমে টানা তিন দিন গ্র্যান্ড স্ল্যাম সেমিফাইনাল-ফাইনালের মতো মেগা ম্যাচ খেলার শারীরিক ধকল। পেশাদার সার্কিটে জকোভিচের অসাধারণ স্ট্যামিনাকে যতই ফেরারির ইঞ্জিনের সঙ্গে তুলনা করা হোক যে, রেসের মতোই ম্যাচ যত এগোয় জকোভিচেরও দম বাড়তে থাকে। কিন্তু এ দিনটা ছিল ব্যতিক্রম। নইলে চতুর্থ সেটে ৩-০ এগিয়েও ৪-৬ হেরে কেরিয়ার গ্র্যান্ড স্ল্যাম খোয়ানোর পাত্র নয় জকোভিচ। ওই সময় ওকেও কিন্তু ক্লান্ত দেখিয়েছে।

তবে এর পরেও জকোভিচের কেরিয়ার গ্র্যান্ড স্ল্যামের পক্ষেই আমি বাজি ধরব। আগাসি সবচেয়ে বেশি বয়সে এই বিরল নজির গড়েছিল। তখন ও ২৯ পেরিয়ে গিয়েছে। জকোভিচ গত মাসেই ২৮-এ পা দিলেও এখনও যে রকম ফিট আর ফর্মে আছে, তাতে আগামী দু-তিন বছরও ও-ই ফরাসি ওপেনে ফেভারিট হিসেবে নামবে। তার মধ্যে একবার কি অন্তত জিতবে না? আমি কিন্তু যথেষ্ট আশাবাদী।

তবে অনেকে যে রবিবার রাত থেকেই প্রশ্ন তুলছেন, রোলাঁ গারোয় এ বার ওয়ারিঙ্কার অদ্ভুত প্রিন্টেড শর্টসও ওর ট্রফি জয়ের পিছনে একটা ফ্যাক্টর, তাদের সঙ্গে আমি একমত নই। বলা হচ্ছে, ওয়ারিঙ্কার ওই রকম চকরাবকরা শর্টস কোর্টে বিপক্ষের একাগ্রতায় ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। বলের মুভমেন্ট অনুসরণে সমস্যা ঘটিয়েছে। কিন্তু উইম্বলডন ছাড়া বাকি তিন গ্র্যান্ড স্ল্যামেই রঙিন পোশাক পরে খেলা অনেক বছর ধরেই চালু। তা হলে ওয়ারিঙ্কার দোষটা কোথায়? তবে একান্ত ব্যক্তিগত ভাবে আমি টেনিসে রঙিন পোশাকেরও একটা ন্যূনতম ‘ড্রেস কোড’ থাকার পক্ষে।

যদিও আমি বিশ্বাস করি না ওয়ারিঙ্কার অদ্ভুত প্রিন্টেড শর্টসের কাছে জকোভিচ হেরেছে! ও হেরেছে ওয়ারিঙ্কার ব্যাকহ্যান্ডের কাছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE