র্যান্টির গোলেই আশা শেষ বাগান টিডি-র। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
চা, মিষ্টি, কেক, ঠান্ডা পানীয়।
পুরনো দিনের বাংলা গান।
হাসি-ঠাট্টা, রসিকতা।
সব আছে।
মঙ্গলবার সন্ধেয় সুভাষ ভৌমিকের বাড়িতে যদি কিছু নিখোঁজ থাকে, তার নাম ফুটবল! কলকাতা লিগ শেষ হওয়ার পর যা আপাতত উধাও হয়ে গিয়েছে।
নিউ আলিপুরের বাসিন্দার বাড়ি ঢুকে আবিষ্কার করা গেল, গৃহকর্তা বেশ চনমনে। শুনছেন তো বটেই, নিজেও আপনমনে পুরনো বাংলা গান গুনগুন করছেন। ছেলে অর্জুনের সঙ্গে চলছে হাসি-ঠাট্টা, রসিকতা। পুরোদস্তুর মেজাজে তিনি।
ভূুল।
‘ভোম্বলদা’-র ট্রফি ক্যাবিনেটে কলকাতা লিগ ঢুকতে-ঢুকতেও ঢোকেনি। তাই আসিয়ানজয়ী কোচের ভেতরটা মোটেই আর পাঁচটা দিনের মতো নেই। ফুটবল নিয়ে আজ যে কোনও কথাই নেই সুভাষের। অস্ফুটে একবার বলেও ফেললেন, “এই বছর ফুটবল নিয়ে আমি আর কোনও কথা বলব না।”
যন্ত্রণায়? কে জানে!
সুভাষ কিছু বলুন না বলুন, তাঁকে ঘিরে হইচই কি আর বন্ধ থাকবে? কলকাতা ময়দানে তাঁর উপস্থিতি মানেই তো সাধারণ ফুটবলপ্রেমী থেকে শুরু করে মিডিয়ার উপচে পড়া ভিড়। এ দিনও একের পর এক প্রশ্নবাণ উড়ে গেল। কলকাতা লিগ শেষে তা নিয়ে পর্যালোচনা। কিন্তু সুভাষ এ দিন যেন টলবেন না কিছুতেই। “নিজের শর্তে বাঁচতে ভালবাসি। যখন মনে হয়েছিল কথা বলব, বলেছি। এখন চাই না। তাই বলব না,” নিউ আলিপুরের বাড়ির ড্রয়িংরুমের চেয়ারে বসে বলে দিলেন বাগান টিডি। কোকো ঠিকঠাক হেডটা নিলে লিগ হয়তো...।
প্রায় ঘণ্টাখানেক তাঁর সঙ্গে কাটিয়েও এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি সুভাষ। তবে জানা যাচ্ছে, এ দিন ইস্টবেঙ্গল-টালিগঞ্জ অগ্রগামীর খেতাব নির্ণায়ক ম্যাচটা টিভি-তে দেখেছেন। ম্যাচটা রেকর্ডও করে রেখেছেন। কিন্তু সেটা নিছক অভ্যাসবশত। এ বারের কলকাতা লিগের ছোট-বড় সব ম্যাচই রেকর্ডিং করে রাখেন তিনি।
আসলে সুভাষের বাইরেটা দেখে বোঝার উপায় নেই তাঁর অন্তরের যন্ত্রণাটা! এ মরসুমের প্রথম ডার্বি হারের পর থেকেই তাঁর কথা বলার উপর সবুজ-মেরুনের নিষেধাজ্ঞা। তাই ৩১ অগস্টের ডার্বির পর থেকে তিনি না সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হচ্ছেন, না কোনও কথা বলছেন। কলকাতা লিগে মোহনবাগানের রানার্স হওয়ার দিনেও সেই ট্র্যাডিশন বজায় রাখলেন টিডি।
আর বাড়িতে? ‘গায়ে পড়া’ অতিথির প্রবেশাধিকার আছে। তবে সুভাষের মুখে টাঙানো থাকবে ‘কথা বলব না’-র সাইন বোর্ড!
বোয়া-কাতসুমিদের টিডি ফুটবল নিয়ে কোনও কথা বলতে না চাইলেও, মোহনবাগান সচিব অঞ্জন মিত্র শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবকে। “ইস্টবেঙ্গলকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য শুভেচ্ছা। এ বার চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াই খুব হাড্ডাহাড্ডি হল। এটা কলকাতা ফুটবলের জন্য ভাল,” নিউটাউনের ফ্ল্যাটে বসে বলছিলেন অঞ্জনবাবু।
সচিব বললেন বটে, তবে এত কাছাকাছি এসেও লিগ হাতছাড়া হওয়ার আফসোস এবং ট্রফিহীন থাকার যন্ত্রণাটা লুকিয়ে রাখতে পারলেন না বাগান-কর্তারা। অঞ্জনবাবুর যখন অফসোস, “ইস, মহমেডান ম্যাচটা যদি জিতে থাকতাম!” তখন বাগান সহ-সচিব সৃঞ্জয় বসু বলছিলেন, “একটা সপ্তাহ-ই সব শেষ করে দিল। দুর্ভাগ্য ছাড়া কিছু বলার নেই।” বলতে বলতে বার বার ভেঙে আসছিল গলা। স্বগতোক্তির মতো বলতে থাকেন, “টানা পাঁচ বার লিগ জেতার অভিনন্দন ইস্টবেঙ্গলকে। কিন্তু আমরাও তো মাঝের দু’টো ম্যাচ বাদ দিলে খুব খারাপ খেলিনি। ফুটবলারদের চেষ্টাতেও কোনও ত্রুটি ছিল না।”
আর কী বলবেন বাগান কর্তারা? চার বছর ক্লাব তাঁবুতে কোনও বড় ট্রফি ঢোকেনি। না আই লিগ, না ফেড কাপ, না কলকাতা লিগ। এ বারও কাপ আর ঠোঁটের দূরত্বটা থেকেই গেল। এর শেষ কবে? ক্লাব তাঁবু থেকে পাড়ার চায়ের দোকানসর্বত্র শুধুই আফসোস আর হতাশা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy