Advertisement
E-Paper

সুব্রত সাহসী নন, তাই প্রথম ম্যাচে পাশ সুভাষ

সুভাষ ভৌমিক আর সুব্রত ভট্টাচার্য সোমবার যুবভারতীতে দু’বার ফটোসেশনের জন্য সময় দিলেন চিত্রসাংবাদিকদের। ম্যাচের আগে এবং পরে দু’বার হাত মেলালেন। দু’বারই মোহনবাগান রিজার্ভ বেঞ্চের দিকে এগিয়ে যান সুব্রত। সুভাষ আবার একটা চাটির মতো ‘ভালবাসার মোড়কে’ সুব্রতর মাথায় টোকা মারলেন খেলা শেষে। সাংবাদিক সম্মেলনে এসেও দু’জনেই একে অপরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৪ ০৩:০৫
শিল্টনের ‘পিটার’ হয়ে ওঠা।

শিল্টনের ‘পিটার’ হয়ে ওঠা।

মোহনবাগান-১ (জেজে-পেনাল্টি)
টালিগঞ্জ-০

সুভাষ ভৌমিক আর সুব্রত ভট্টাচার্য সোমবার যুবভারতীতে দু’বার ফটোসেশনের জন্য সময় দিলেন চিত্রসাংবাদিকদের।

ম্যাচের আগে এবং পরে দু’বার হাত মেলালেন। দু’বারই মোহনবাগান রিজার্ভ বেঞ্চের দিকে এগিয়ে যান সুব্রত। সুভাষ আবার একটা চাটির মতো ‘ভালবাসার মোড়কে’ সুব্রতর মাথায় টোকা মারলেন খেলা শেষে। সাংবাদিক সম্মেলনে এসেও দু’জনেই একে অপরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এমনকী সুব্রত যখন বলছেন, “এই মোহনবাগানে অন্তত চার-পাঁচ জন ফুটবলার বদলাতে হবে। না হলে কিছুই হবে না,’ তখনও সুভাষ সংযমী--“উনি ওনার কথা বলেছেন।”

ক্লাব পর্যায়ে দুই সফলতম ফুটবলমস্তিষ্কের লড়াই দেখতে মুখিয়ে ছিল ময়দান। সপ্তাহের কাজের প্রথম দিনেও হাজার পঁচিশেক বাগান সমর্থক যুবভারতীতে। ভিভিআইপি বক্সে সবুজ-মেরুন কর্তাদের ভিড়। চিমা-ব্যারেটো-শিবাজী-কম্পটনের মতো প্রাক্তনরা হাজির। গ্যালারিতে কাঠবোর্ডের বিশাল চিংড়ি, সবুজ-মেরুন অসংখ্য মুখ, ব্যান্ড, তাসাবাদ ছিল না কিছুই। মরসুমের প্রথম মাচ, তা-ও আবার স্থানীয় লিগ। সেখানে অতীতে এ রকম দৃশ্য দেখা গিয়েছে কি না, গবেষণা হতে পারে।

সুব্রত হারলেন। সুভাষ জিতলেন। তা সত্ত্বেও পিকে বনাম অমল দত্ত স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে চাননি।!

সুভাষ বিনয়ী হতে পারেন। কিন্তু রঘু নন্দী হতে যাবেন কোন দুঃখে! টানা পঁয়ত্রিশ ম্যাচ অপরাজিত ছিলেন টালিগঞ্জ অগ্রগামী কোচ হিসাবে। হঠাৎ-ই তাঁর সাজানো বাগানে ঢুকে পড়েছেন ‘মোহনবাগানের ঘরের ছেলে’ এবং প্রথম ম্যাচেই হেরেছেন। ময়দানের ‘জায়ান্ট কিলার’ হিসেবে স্বীকৃত রঘুর গলা তাই আরও তীক্ষ্ম। “সুব্রত ভট্টাচার্য কীসের বড় কোচ? কোকো-বিদেমির মতো দু’জন পজিটিভ বিদেশি স্ট্রাইকার হাতে থাকতে ন’জন নিয়ে ডিফেন্স করে গেল? এক পয়েন্টের খেলা খেলতে গিয়ে তিন পয়েন্ট দিয়ে এল! আরে, ওই দু’জনকে সামনে রাখলেই জিতত টালিগঞ্জ। আমি থাকলে কিন্তু মোগনবাগানকে হারাতাম।” টিভিতে খেলা দেখে বলছিলেন সদ্য প্রাক্তন টালি-কোচ।

ছোট দলের বড় কোচ রঘু বহুবার হারিয়েছেন ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানকে। তাঁর যুক্তি ফেলে দেওয়ার মতো নয়। আসলে মুখে যাই বলুন, ম্যাচটার আগে সুভাষ এবং সুব্রত দু’জনেই চাপে ছিলেন। শুরুর টিম ফর্মেশন-ই সেটা ধরা পড়ে যাচ্ছিল। সুব্রত দল নামিয়েছিলেন এক স্ট্রাইকারে। ৪-১-৪-১। একেবারে রক্ষণাত্মক মেজাজ। আর সুভাষ? চার ডিফেন্ডারের সামনে বল ‘হোল্ড’ করার জন্য আরও দু’জন শৌভিক চক্রবর্তী আর শেহনাজ সিংহ। অগোছাল টালিগঞ্জকে যেন একটু বেশিই সমীহ করলেন তিন বারের আই লিগ জয়ী কোচ। ফলে প্রথমার্ধে খেলাটা বিরক্তিকর হল। কাতসুমি, মণীশ, শেহনাজ, সাবিথরা প্রচুর পাস খেললেন। সবই নির্বিষ স্কোয়ার পাস। না আছে বৈচিত্র, না আছে লক্ষ্য। বিপক্ষের ডিফেন্স ভাঙার মতো কার্যকর পাস দূরবিন দিয়ে খুঁজতে হচ্ছিল। সুভাষের টিমের মরসুমের প্রথম গোলটা অবশ্য বিরতির মিনিট তিনেক আগেই এল। পেনাল্টি থেকে। জেজে-কে নিজেদের বক্সে ফেলে দিয়েছিলেন টালিগঞ্জের দীপক মণ্ডল। জেজেই স্পটকিকে বল জালে রাখেন।


যুদ্ধের শেষে মৈত্রী। সোমবার যুবভারতীতে।

এক গোলে এগিয়ে গিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য সুভাষ অনেক সাহসী হলেন। ফর্মেশন বদলে বলবন্ত সিংহকে নামিয়ে চলে গেলেন ৪-৩-৩-এ। পিছিয়ে পড়া সুব্রত অত সাহস দেখাতে পারেননি। শুধু একের বদলে জোড়া স্ট্রাইকার পাঠালেন বাগান বক্সে। ম্যাচটা একটু বেশি গতি পেল, দিল কিছুটা চোখের সুখ। গোলের মুখও খুলল। বাগানের সাবিথ এবং বলবন্ত এমন দু’টো সুযোগ নষ্ট করলেন যা ক্ষমার অযোগ্য। উল্টো দিকে কোকো ফরোয়ার্ডে তাঁর সঙ্গী হওয়ায় টালিগঞ্জের বিদেমিও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন। ওই সময় শিল্টন পালের নিরাপদ দস্তানা না থাকলে সুভাষের হাল এক দিন আগের আর্মান্দো কোলাসোর মতো হতেই পারত। কোকো ও বিদেমির দুটো ভাল শট বাঁচান বাগানের গোলকিপার-অধিনায়ক।

তা সত্ত্বেও প্রথম ম্যাচে বাগান পাস করে গেল জেজের সৌজন্যে। সুভাষের টিমটার গড় বয়স চব্বিশ। ফিটনেস ভাল। কোচের স্ট্র্যাটেজি মেনে খেলার চেষ্টাও আছে। চার বছর পর ক্লাব তাঁবুতে ট্রফি ঢুকবে কি না সেটা নিয়ে এত তাড়াতাড়ি ভবিষ্যদ্বাণী না করলেও এটা বলা যায় টিমটা দাঁড়িয়ে যাবে সোনি নর্ডিরা এসে গেলে। সুভাষও ম্যাচের পর বলছিলেন, “প্রথম ম্যাচ সব সময়ই কঠিন হয়। সেটা জেতায় আমি খুশি। আবার অন্য কারণে অখুশিও। প্রচুর ভুলভ্রান্তি আমার চোখে পড়েছে। সেগুলো শুধরোতে হবে।”

তাঁদের তীব্র সমালোচক সুব্রতর টিমকে হারানোর পর সবুজ-মেরুন কর্তাদের উচ্ছ্বসিত দেখালেও সুভাষ তাই জিতেও বাস্তবের জমিতে। বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আসা নিউ আলিপুর নিবাসী কোচ জানেন দুই প্রধানে কোচের টিআরপি চড়চড় করে বাড়ে ডার্বি জিতলে আর ট্রফি পেলেই।

যুবভারতীতে হাজির চিমা-ও বললেন, “বেশ কিছু দুর্বলতা চোখে পড়ল মোহনবাগানের। দু’-তিনটে ম্যাচ না গেলে এই টিম সম্পর্কে ধারণা করা মুশকিল।” ব্যারেটোও এক সিডি বাজালেন।

টালিগঞ্জ ম্যাচ উতরে যাওয়াটা তাই সুভাষের কাছে ছিটেফোঁটা বৃষ্টির মতোই। চার বছর ট্রফি না জেতার মরুভূমিতে মরুদ্যান গড়ে তোলার উপযুক্ত বৃষ্টি কিন্তু মোটেই নয়!

মোহনবাগান: শিল্টন, সতীশ, কিংশুক, ধনচন্দ্র, শৌভিক ঘোষ, শেহনাজ, শৌভিক চক্রবর্তী (লালকমল) কাতসুমি, মণীশ (বলবন্ত), সাবিথ (তীর্থঙ্কর), জেজে।

ছবি: উৎপল সরকার

mohanbagan wins subrata subhash ratan chaktaborty sports news sport news latest news online news latest online news latest sport news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy