মৌমা দাস। নিজস্ব চিত্র।
এ রকম সচরাচর দেখা যায় না। দেশের সেরাদের তালিকায় থেকেও কাউকে বলতে শোনা যায় না তিনি জাতীয় দলে ডাক পেলেও খেলবেন না। এই জায়গায় মৌমা দাস ব্যতিক্রম। জাতীয় টেবিল টেনিসে রানার-আপ হয়েও মৌমা এখনই দেশের হয়ে খেলতে চান না। কারণ, তাঁর মনে হচ্ছে, তিনি এখনও সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলার জন্য তৈরি নন।
সামনে একগুচ্ছ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা রয়েছে। দেশের দ্বিতীয় সেরা মহিলা টেবল টেনিস খেলোয়াড়ের সামনে আবার আন্তর্জাতিক মঞ্চে ফেরার হাতছানি। কিন্তু মৌমা সাফ জানাচ্ছেন, এখনই জাতীয় দলে ডাক পেলে সবিনয় প্রত্যাখ্যান করবেন! কেন ফেরাবেন দেশের ডাক? মৌমা জানাচ্ছেন, ‘‘জাতীয় প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হলেও আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার মতো ফিটনেস আমার নেই। এখন আমার জীবনের অগ্রাধিকার মেয়ে অদিত্রী। পাশাপাশি খেলাও চালিয়ে যেতে চাই। ধাপে ধাপে এগোতে হবে আমাকে। সাড়ে তিন বছরে টেবিল টেনিস বদলেছে। মা হওয়ার পর ওজন বেড়েছে। শরীরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এখনও বেশিক্ষণ ট্রেনিং করতে পারছি না। কোচেদের পরামর্শ অনুযায়ী এগনোর চেষ্টা করছি। যখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলার মতো ফিট হব, অনুশীলন করতে পারব তখন নিশ্চয় আবার দেশের হয়ে খেলব।’’
মা হওয়ার পর সাড়ে তিন বছরের বিরতি। তার পর টেবিল টেনিসে ফিরেছেন। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেকে পরখ করতে নেমে রানার-আপ। দেশের হয়ে খেলতে না চাইলেও খেলা এখানেই থামতে চান না মৌমা। বাংলার ক্রীড়াজগত দেখেছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ফিরে আসা। এ বার সাক্ষী থাকল মৌমার ফিরে আসার। ২০০১ সালে প্রথম বার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। ২০২২ সালে তিনিই রানার-আপ। তাঁর এক সময়ের সতীর্থরা অনেকেই এখন অবসর জীবনে পা রেখেছেন। কেউ কেউ কোচিং করাচ্ছেন। মৌমার সে সবে আগ্রহ নেই। খেলা চালিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য তাঁর। কোচিং করানো বা প্রশাসনিক পদে আসা— এ সব তাঁর কল্পনাতেও নেই।
নিজেকে তৈরি করতে আরও বেশি প্রতিযোগিতায় খেলতে চান। এক দম নিচু স্তর থেকে নিজেকে পরখ করতে চান ৩৮ বছরের মৌমা। সেই লক্ষ্যে জাতীয় প্রতিযোগিতায় রানার-আপ হওয়ার পরেও হাওড়ার একটি প্রতিযোগিতাতে অংশগ্রহণ করবেন ১৪ মে থেকে। কোচেদের পরামর্শ মতো বাড়াচ্ছেন অনুশীলনের সময়।
২০০৪ সালের পর ২০১৬ সালে অলিম্পিক্স খেলেছেন মৌমা। সেই ফিরে আসার থেকেও এ বারের ফিরে আসায় বেশি উৎসাহিত তিনি। কারণ সে সময় নিয়মিত খেলার মধ্যেই ছিলেন। এ বার ফিরেছেন দীর্ঘ বিরতির পর। এই বিরতিতেই বদলে গিয়েছে খেলার ধরন। মৌমা বলছেন, ‘‘জাতীয় প্রতিযোগিতায় গিয়ে দেখলাম নতুন ধরনের রাবার ব্যবহার করছে অনেকে। চিরাচরিত লাল-কালো রাবার নয়। কালোর সঙ্গে অন্য রঙের রাবার। এই রাবার নাকি অনেক বেশি কার্যকর বিভিন্ন শট মারার ক্ষেত্রে। মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ুর বেশ কিছু খেলোয়াড় নতুন রাবার ব্যবহার করছে। বিশেষ করে তামিলনাড়ুর অনেকেই। এই সময় অনেকে যেমন খেলা ছেড়ে দিয়েছে, তেমন নতুন অনেকেও এসেছে। তাদের খেলার সঙ্গে পরিচিত হওয়া জরুরি। গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে যাব ভেবেছিলাম। কিন্তু একটা একটা ম্যাচ করে ফাইনাল খেলেছি। এই সাফল্য আমাকে নতুন করে উৎসাহিত করেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy