রাফায়েল নাদালদের বিরুদ্ধে ভারতের ডেভিস কাপের ম্যাচ রবিবারই শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু লড়াই থামল কোথায়!
এই লড়াই কোর্টের বাইরের। যেখানে প্রতিপক্ষ খোদ সতীর্থই। লিয়েন্ডার পেজ বনাম সতীর্থদের এই ‘গৃহযুদ্ধে’ কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলছেন না। আর যত সময় গড়াচ্ছে ততই কাদা ছোড়াছুড়িটা কদর্য চেহারা নিচ্ছে।
এ বার যেমন তাঁকে ‘বিষাক্ত’ বলার পাল্টা জবাব দিলেন লিয়েন্ডার। সংবাদসংস্থাকে এক সাক্ষাৎকারে বললেন, সতীর্থদের কয়েক জন ‘প্রচণ্ড হিংসুটে’। ‘‘কেরিয়ারে এখন যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি, আমার বেশির ভাগ প্রতিদ্বন্দ্বীই হিংসেয় জ্বলছে। ওরা হয়তো বুঝতে পারছে না ১৮টা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতা বা সাতটা অলিম্পিক্স খেলা ব্যাপারটা মুখের কথা নয়। দশ জন্মেও এই জায়গায় পৌঁছতে পারবে না আমার কয়েক জন প্রতিদ্বন্দ্বী। অথচ নিজেরা পরিশ্রম করার বদলে এরা চাইছে আমায় টেনে নামাতে।’’
ইচ্ছে করে তাঁর নাম খারাপ করার চেষ্টা হচ্ছে সেটাও বলেছেন লিয়েন্ডার, ‘‘গোটাটাই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বারবার আমাকে এ ভাবে আক্রমণ করার একটাই লক্ষ্য, দেশবাসীর কাছে আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করা। যাতে মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেন লিয়েন্ডার সত্যিই খুব খারাপ ছেলে। একটা ভাবমূর্তি গড়তে সারা জীবন লেগে যায়, কিন্তু সেটা নষ্ট করতে লাগে এক সেকেন্ড।’’
একটানা এত নেতিবাচক সমালোচনায় কি লিয়েন্ডার ক্লান্ত? বিরক্ত? ‘‘আমিও তো মানুষ। তবে আজকাল আর এ সব গায়ে মাখি না। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে এ ধরনের নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা থাকবেই। তবে যাঁরা সৎ এবং খাঁটি তাঁদের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভাল বা খারাপ যাই হোক, তাঁদের আমি সম্মান করি।’’ এর সঙ্গে অবশ্য তিনি যোগ করেন, ‘‘তবে কয়েক জন আছে যাঁদের কাজই হল আমায় টেনে নামানোর চেষ্টা করে যাওয়া।’’
বক্তব্যের শেষ অংশটা আরও ভাল করে বোঝাতে লিয়েন্ডার যোগ করেন, ‘‘আমার কয়েক জন প্রতিদ্বন্দ্বী আমার রেকর্ডকে অসম্ভব হিংসে করে। নিজেরা পরিশ্রম করে সেখানে পৌঁছনোর চেষ্টা করার বদলে আমার ভাবমূর্তি নিয়ে টানাটানি চালায়। এটা বোধহয় এই জন্যই যে ওরা জানে হাজার চেষ্টাতেও ওরা আমার জায়গায় পৌঁছতে পারবে না। তাই চলো ওর ভাবমূর্তি নষ্ট করি। এক জন এখানে একটা গল্প ফাঁদবে, আর এক জন ওখানে কিছু বলবে, যা থেকে মানুষের মনে আমার সম্পর্কে একটা অদ্ভুত ধারণা তৈরি হয়।’’
লিয়েন্ডার অবশ্য জানিয়েছেন, যাঁরা ‘ঘেউ’ করছে, তাদের পাত্তা না দিয়ে তিনি নিজের কাজটা করে যাবেন— টেনিস কোর্টে আরও ভাল পারফর্ম করে যাওয়া। আর এই কাজটা করতে গিয়ে অন্যদের যাত্রাভঙ্গে তিনি বিশ্বাসী নন। লি বলেছেন, ‘‘নিন্দুকদের নিয়ে দুশ্চিন্তা করি না। তুমি নিজের খেলাটা খেলো। নিজের লেনে দৌড়ও। অন্যের লেনে ঢুকতে যেও না। ইতিহাসে আমি নিজের নাম লিখে রাখব। সারা জীবনের কঠোর পরিশ্রমের সেটাই সেরা পুরস্কার।’’
‘প্রভাবিত হই না’ বলে দাবি করলেও লিয়েন্ডার যে ভিতরে ভিতরে প্রচণ্ড আহত সেটা তাঁর পরের বক্তব্যেই পরিষ্কার। বলেছেন, ‘‘লোকে বিশ্বাস না করুক, মিডিয়া গুরুত্ব না দিক কিন্তু যাঁরা বুদ্ধিমান, যাঁরা খোজ-খবর রাখেন তাঁরা ইতিহাস বইটা এক বার দেখবেন। আর সেখানে আমি এক বার নয়, বহুবার নিজের নাম লিখেছি। ভবিষ্যতেও আরও অনেক নতুন ইতিহাস গড়ব। এটা কিন্তু কেউ বদলাতে পারবে না। কারণ ইতিহাসকে বদলানো যায় না। ইতিহাস বই জালও করা যায় না।’’
লিয়েন্ডার জানিয়েছেন, যত দিন গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে চলেছেন, তত দিন টেনিস র্যাকেট তুলে রাখার প্রশ্নই নেই। বলেছেন, ‘‘এখন সবাই প্রচারের আলোয় থাকতে চায়। সবাই হিরো হতে চায়। যারা ঘেউ ঘেউ করবে, করুক। এ ভাবে নিজেদেরই ওরা অন্যদের সামনে খারাপ ভাবে তুলে ধরবে। আমি নিজের লড়াইটা চালিয়ে যাব। যতক্ষণ না কোনও জুনিয়র এসে বলছে ‘লি আমি তো তোমাকে সব সময়ই হারাচ্ছি’, যতক্ষণ আমি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে যাব, খেলা চালিয়ে যাব। টেনিস খেলার যোগ্যতাটা নিজের দমে অর্জন করেছি। আমার জায়গায় পৌঁছতে চাইলে বাকিদেরও যোগ্যতা দিয়ে সেটা করতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy