Advertisement
E-Paper

‘শত্রু’কে এড়াতে ইডেনে সচিনের সঙ্গেও হাত মেলাননি শাস্ত্রী

ভারতীয় টিম ডিরেক্টর শনিবার রাত্তিরে সচিন তেন্ডুলকরকে একটা এসএমএস পাঠান, ‘তোর সঙ্গে মাঠে দেখা করার খুব ইচ্ছে ছিল। কিন্তু তোর কাছে গেলে যে লোকটা পাশে দাঁড়িয়েছিল তার সঙ্গেও হ্যান্ডশেক করতে হত। সেটা করব না বলেই তোর দিকে গেলাম না।’

গৌতম ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৬ ০৩:৩৭
কলকাতা ছাড়ার আগে হোটেলে ইমরান। ছবি গৌতম ভট্টাচার্য

কলকাতা ছাড়ার আগে হোটেলে ইমরান। ছবি গৌতম ভট্টাচার্য

ভারতীয় টিম ডিরেক্টর শনিবার রাত্তিরে সচিন তেন্ডুলকরকে একটা এসএমএস পাঠান, ‘তোর সঙ্গে মাঠে দেখা করার খুব ইচ্ছে ছিল। কিন্তু তোর কাছে গেলে যে লোকটা পাশে দাঁড়িয়েছিল তার সঙ্গেও হ্যান্ডশেক করতে হত। সেটা করব না বলেই তোর দিকে গেলাম না।’

সচিন নাকি উত্তরে পাঠান একটা স্মাইলি।

অথচ ভদ্রলোক শাস্ত্রীর কাছের লোক বলেই ক্রিকেট সার্কিটে পরিচিত— ইমরান খান।

রোববার শহর ছাড়ার আগে শাস্ত্রী আনন্দবাজারকে ব্যাখ্যা করলেন, ‘‘পাকিস্তানকে পেপটক দিয়ে যে টিমকে উদ্বুদ্ধ করে দিচ্ছে, সে কী করে বন্ধু হতে পারে? সে তো সে দিনের এনিমি নাম্বার ওয়ান।’’

ভারতীয়দের এটাও নজর এড়ায়নি যে, সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও ইমরান মাঠ ছাড়েননি। তিনি এগিয়ে যান পাকিস্তান নেটের দিকে। সেখানে শেষ মুহূর্তের টিপস দেন আফ্রিদির দলকে। পাকিস্তান টিমের অঘোষিত মেন্টরই যেন ছিলেন তিনি ইডেন ম্যাচে!

রোববার সকালে তাই পাকিস্তান শিবিরে যাঁকে সবচেয়ে মলিন এবং ভগ্নহৃদয় দেখাল, তিনি ইমরান। শহর ছেড়ে দিল্লি রওনা হয়ে গেলেন সকাল সাড়ে দশটার মধ্যে। কিন্তু চোখমুখের এমন অবস্থা, যেন তিনি শাহিদ আফ্রিদি। মূহ্যমান হয়ে রয়েছেন হারে। তাঁর মনে হচ্ছে পাকিস্তান কোনও লড়াই-ই দিতে পারেনি। প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ তিনি নিজের প্রিয় শাহিদ আফ্রিদির ওপর। ‘‘সবচেয়ে বড় সুযোগ ছিল ইন্ডিয়া যখন ২৩-৩। তখন আফ্রিদি কোথায় চাপটা বাড়াবে, ও সেটা উল্টে হালকা করে দিল।’’

ইমরানকে বোঝাবার কোনও উপায় নেই, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো ক্রিকেট দুনিয়ার গরিষ্ঠ অংশের উপসংহার তাঁরও মেনে নেওয়ার সময় হয়েছে যে, এই পাকিস্তানের চেয়ে ম্যান ভার্সাস ম্যান হিসেবে ভারত অনেক এগিয়ে। সৌরভ যেমন এ দিন বলছিলেন, ‘‘দুটো টিমের স্কিলের এত তফাত যে, আগামী ক’বছরেও ধোনিদের হারিয়ে পাকিস্তানের জেতার কোনও সম্ভাবনা আমি দেখছি না।’’

ইমরান অবশ্য উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করছেন কোহালির এবং মেনে নিচ্ছেন এই মুহূর্তে তিনি অবিসংবাদী বিশ্বসেরা। তেন্ডুলকর না কোহালি? ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীর নতুন তোলা এই বিতর্কে বিশ্বজয়ী পাক অধিনায়ক ভোট দেওয়া থেকে এখনও নারাজ। এই যুক্তিতে যে, সচিনের কেরিয়ার চব্বিশ বছরের। এর তো ওয়ান থার্ডও হয়নি। এটুকু অবশ্য বারবার বলছেন, এই মাপের ব্যাটসম্যান বহু বহু বছর বিশ্ব ক্রিকেটে তাঁর চোখে পড়েনি।

ইডেনের বক্সে বসে শনিবার রাতে কোহালির ব্যাটিং খুব খুঁটিয়ে দেখছিলেন যুগন্ধর দুই অধিনায়ক স্টিভ ওয় আর ইমরান! একে অপরকে বলছিলেন, দ্যাখো তো কী খুঁত খুঁজে পাচ্ছ?

অধিনায়ক হিসেবে এটাই ওঁদের প্রথম কাজ ছিল— ব্যাটসম্যানের দুর্বলতা দ্রুত বার করে ফেলা। ‘‘আমরা কোহালির কোনও দুর্বলতা খুঁজেই পেলাম না,’’ মুগ্ধ ভাবে বললেন ইমরান।

তাঁর মতে, যে কোনও ব্যাটসম্যানের রান করার সম্ভাব্য মিনার তিন স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। টেকনিক। ট্যালেন্ট। টেম্পারামেন্ট। কোহালির মধ্যে তিনটেই মজুত। শাস্ত্রী এ দিনও বারবার বলছিলেন, কোহালিকে বিচার করবেন চাপের মুখে ওর পারফর্ম করার ধারাবাহিকতা দিয়ে। ইমরান একমত, ‘‘কী কী সব স্ট্রোক খেলে ছেলেটা। যা দুর্ধর্ষ টেকনিক ছাড়া সম্ভব নয়। তার সঙ্গে প্রেশারে এত ভাল খেলে। আমি এই সমাধানে শেষ পর্যন্ত পৌঁছেছি, এই ছেলেটি এ সময়ের বেস্ট। আর যাবতীয় রেকর্ড ও ভেঙে দেবে।’’

আরবসাগরের পারের বাড়িতে তাঁর মোবাইল সুইচ অফ করে কোহালির ব্যাটিং খুঁটিয়ে দেখেছিলেন আর এক প্রাক্তন অধিনায়ক। তাঁর নাম অজিত ওয়াড়েকর। বলছিলেন, ‘‘ধোনিকে ফিল্ডিং নিতে দেখে ভয় হচ্ছিল। ওকে না কুড়ি বছর আগের আজ্জু হয়ে যেতে হয়। তবে বিরাটের কালকের ইনিংসটা দেখার পর বলছি, আমার দেখা সর্বকালের সেরা ভারতীয় দলে ও মিডল অর্ডারে থাকবে। লক্ষ্মণ, এমনকী আমার প্রিয় আজহারকেও হটিয়ে।’’ ওয়াড়েকরের ধারণা, নিউজিল্যান্ড শক এবং ইডেনে টার্নিং উইকেটের চাপ— ভারতকে বাকি টুর্নামেন্টের জন্য তৈরি করে দিল। তারাই হয়তো চ্যাম্পিয়ন হবে মনে হচ্ছে। তবে বিরাটকে দু’এক দিন বিশ্রাম দিয়ে অন্যরাও একটু রান-টান করুন। ওয়াড়েকরের মতে বিরাটের ওই ইনিংসের পর পাকিস্তানের কিছু করণীয় ছিল না।

ইমরান যে ভাবনার সঙ্গে একমত নন। তিনি মনে করেন ম্যাচে কোহালির এক দিক অজেয় থাকলেও তাঁর পার্টনারদের যথেষ্ট আক্রমণ করতে পারেনি আফ্রিদির পাকিস্তান। তার দায় সবার আগে দলের অধিনায়কের।

সৌরভও তাই মনে করেন। সিএবি প্রধান হিসেবে অজস্র অভিনন্দনে প্লাবিত হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ এ দিন ছিল না। ‘দাদাগিরি’র শুটিং ছিল যে এ দিন। তারই এক ফাঁকে সৌরভ আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘তিন ওভার আগেই পাকিস্তান ম্যাচ হেরে গেছিল। পুরো ভুল স্ট্র্যাটেজি। আফ্রিদি বল করল পেসারদের মতো জোরে। আর শোয়েব মালিক টার্নারে কোথায় অফস্টাম্পের বাইরে বল করবে, তা নয় স্টাম্প অ্যাটাক করল। কোহালি এমনিতেই ব্যাটসম্যান হিসেবে অন্য জাতের। তার ওপর এই বোলিং লাইনে স্ট্রোক মেকিংয়ের আরও সুবিধে করে দিল।’’

ইমরান দ্রুত গাড়িতে উঠে গেলেন। প্রাইভেট জেটে করে এসেছেন। কলকাতা থেকে দিল্লির উড়ানে পা দেওয়ার আগে মিনিট দশেকের দেরি করতেই পারতেন হোটেলে। কিন্তু মেজাজটাই যে সম্পূর্ণ ঘাঁটা। শাস্ত্রী যা শুনে খুব হাসছেন।

‘‘কালকে মাঠে এক বারও তাকাইনি। কথা বলিনি ইচ্ছাকৃত। কিন্তু এ জন্যই ইমরানকে বরাবর শ্রদ্ধা করে এসেছি। আজও হারতে জানে না।’’

sachin tendulkar imran khan wt20 MostReadStories
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy