প্রশ্ন: লিয়েন্ডার পেজের কাছে সাত নম্বর অলিম্পিক্স খেলার অর্থ কী? টানা চব্বিশ বছর অলিম্পিয়ান থাকতে পারার?
লিয়েন্ডার: অলিম্পিক্স গেমসে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করার গৌরব। জাতীয় পতাকার হয়ে লড়াইয়ে নামার সুযোগ পাওয়া। দেশের প্রতিনিধিত্ব করাটা আমাকে সব সময় অফুরন্ত আনন্দ দেয়। গ্রেট জয়। সেটা শুধু অলিম্পিক্সেই নয়। ডেভিস কাপ, এমনকী এটিপি ট্যুরেও। যদিও পেশাদার টেনিস ট্যুরে আমরা প্লেয়াররা ইন্ডিভিজুয়ালি খেলে থাকি। কিন্তু আমার অনুভূতিটা সেখানেও দেশের হয়েই খেলছি!
উনিশশো বিরানব্বইয়ে বার্সেলোনা অলিম্পিক্স আমার কাছে স্পেশ্যাল কারণ ওটাই আমার প্রথম অলিম্পিক্স। রমেশ কৃষ্ণনের ডাবলস পার্টনার ছিলাম। আমাদের মধ্যে বিশ্বাসের উপর ভর রেখে দারুণ একটা পার্টনারশিপ গড়ে উঠেছিল। দু’জনের মধ্যে গভীর বন্ধুত্বও গড়ে উঠেছিল বিশ্বাসের জোরেই। ছিয়ানব্বইয়ে আটলান্টা অলিম্পিক্স আমার সেরা, যে-হেতু ওখানেই আমি সিঙ্গলসে ব্রোঞ্জ পদক জিতেছি। যেটা সেই সময় ভারতের পঁয়ষট্টি বছর পর অলিম্পিক্সে জেতা কোনও ব্যক্তিগত পদক ছিল। আর রিও আমার কাছে উত্তেজনার এ জন্য যে, এটা আমার সাত নম্বর অলিম্পিক্স। যেটার চিন্তাও আমি কোনও দিন করিনি। চব্বিশটা বছর কেটে গিয়েছে আর আমি সেই ঢেউয়ের সঙ্গে থেকে গিয়েছি।
প্র: বর্তমান পরিস্থিতিতে রিওতে ডাবলসে পদক জেতার ব্যাপারে আপনি ঠিক কতটা আশাবাদী?
লিয়েন্ডার: রোহন আর আমি দু’জনেই ডাবলস সার্কিটে ভাল খেলছি। রোহনের শেষ বারো মাস খুব ভাল গিয়েছে। বিশ্বের প্রথম দশে উঠে এসেছে। আমি শেষ পাঁচটা গ্র্যান্ড স্ল্যামের চারটেতে মিক্স়ড ডাবলস চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এই সে দিন ফরাসি ওপেনের মিক্সড খেতাব আমাকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। হ্যাঁ, অলিম্পিক্সে পুরুষ ডাবলসে খুব কঠিন লড়াই। সব দেশই তাদের সেরা সিঙ্গলস আর ডাবলস তারকা খেলাবে। যা-ই হোক, আমাদের জুটিও খুব ভাল। আর আমরাও মেডেলের জন্য লড়ব।
প্র: কিন্তু অলিম্পিক্স দল নির্বাচনের ঠিক আগের দিন আপনাকে না চেয়ে সাকেত মিনেনিকে পার্টনার চেয়ে রোহন বোপান্নার এআইটিএকে চিঠি দেওয়াটাকে আপনি এখনও কী চোখে দেখেন? যদিও এ ব্যাপারে শেষ পর্যন্ত জয় আপনার হয়েছে, তা সত্ত্বেও।
লিয়েন্ডার: এআইটিএ আর নির্বাচক কমিটি দেশের সেরা দলই অলিম্পিক্সে খেলবে বলে একেবারে ঠিক করেছে। আর সে জন্য রোহন আর আমাকে বেছেছে। তবে বন্ধ ঘরের ভেতরের আলোচনা নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না। রিওতে আমাদের পদক জিততে হলে রোহন আর আমার মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস ফের গড়ে তোলা দরকার।
প্র: বোপান্নার সঙ্গে আপনার সাম্প্রতিক সম্পর্ক কেমন? মাঠে আর মাঠের বাইরেও।
লিয়েন্ডার: দু’জন পেশাদারের একে অন্যের প্রতি যতটা থাকা দরকার আমরাও একে অন্যকে তেমনই সম্মান করি। আমাদের দু’জনের মধ্যে বন্ধুত্বও ততটাই।
প্র: বলা হচ্ছে, আপনার আর বোপান্নার পার্টনারশিপে জয়-হারের হিসেব ২-২। সেখানে বোপান্না-মিনেনি জুটির হিসেব ২-০। তা হলে পরের জুটির অলিম্পিক্সে যেতে চাওয়াটা অন্যায্যের কীসের?
লিয়েন্ডার: আমার মনে হয় হিসেবটা আর এক বার ঠিকঠাক দেখা দরকার। ২০০৭ থেকে ২০১৫-এ ডেভিস কাপে আমি আর রোহন একসঙ্গে ডাবলস খেলেছি চার বার। তিনটে জিতেছি। একমাত্র শেষ ম্যাচে চেকদের কাছে হেরেছি। সার্বিয়াকেও ওয়ার্ল্ড গ্রুপ প্লে-অফে হারিয়েছি আমরা। সেখানে রোহন-সাকেত জুটি গত দু’বছরে তিনবারই জোনাল ডেভিস কাপে খেলে দু’টো জিতেছে, একটা হেরেছে।
প্র: রিওতে বোপান্না অ্যাডভান্টেজ কোর্টে আপনার কতটা যোগ্য সঙ্গী হয়ে উঠতে পারবেন বলে আপনি মনে করেন? যেখানে ডাবলসে আপনারা দু’জনেই মূলত ডিউস কোর্ট প্লেয়ার।
লিয়েন্ডার: একজন ভাল প্লেয়ার বাঁ দিক বা ডান দিক— দু’কোর্টেই নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। আমি বাঁ দিকের কোর্টে খেলে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছি।
প্র: রিওর প্রস্তুতি হিসেবে আপনি আর বোপান্না কি উইম্বল়ডনে জুটি বাঁধার কথা ভাবছেন?
লিয়েন্ডার: আম রা পরের মাসে চণ্ডীগড়ে ডেভিস কাপে একসঙ্গে খেলব। উইম্বলডনে হয়তো আমরা একসঙ্গে বসে অলিম্পিক্সের আগে ওয়ার্ম আপ হিসেবে দু’-একটা এটিপি টুর্নামেন্টে জুটি বেঁধে খেলা যায় কি না তার রাস্তা খোঁজার চেষ্টা করব।
প্র: কোথাও কোথাও এখনও জল্পনা চলছে, নিজের পছন্দের পার্টনার না পাওয়ায় অলিম্পিক্স ডাবলস থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন বোপান্না। যেটা সত্যি ঘটলে আপনার রেকর্ড সংখ্যক অলিম্পিক্স খেলা হবে না। সে ক্ষেত্রে আপনার পদক্ষেপ কী হতে পারে?
লিয়েন্ডার: আমি বিশ্বাস করি না এর পরেও রোহন নিজের কথার খেলাপ করবে বলে। এআইটিএ-কে ও কিন্তু নির্বাচকদের সিদ্ধান্ত মেনে নিচ্ছে বলে নতুন চিঠি দিয়েছে। মিডিয়ার মাধ্যমে গোটা দেশের কাছে একই স্টেটমেন্ট দিয়েছে।
প্র: আপনি কি এ-ও বিশ্বাস করেন যে, রিওতে নির্বাচিত সানিয়া-বোপান্না জুটির তুলনায় সানিয়া-লিয়েন্ডার জুটি মিক্সড ডাবলসে বেশি কার্যকরী হতে পারত?
লিয়েন্ডার: এআইটিএ-র নির্বাচক কমিটি ওই জুটি বেছেছে। তার পরে কী হলে কী হতে পারত এই সব ভেবে আর কী লাভ!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy