Advertisement
E-Paper

আম্পায়ারদের মারাত্মক ভুলই বড় লজ্জা হয়ে থাকল ফাইনালে

অধিনায়কদের ক্ষমতা দেবে যাতে আরও বেশি করে প্রযুক্তির সাহায্য নিতে পারে। আমার কাছে জানতে চাইলে বলব, ইংল্যান্ডকে কখনওই ওই বাড়তি রানটা দেওয়া উচিত হয়নি। ছয় নয়, ওই ওভারথ্রোয় পাঁচ রান হওয়া উচিত ছিল।

জেফ থমসন

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৯ ০৪:৩০
কাঠগড়ায়: বিশ্বকাপ ফাইনালে বিতর্কের মুখে আম্পায়াররা। ফাইল চিত্র

কাঠগড়ায়: বিশ্বকাপ ফাইনালে বিতর্কের মুখে আম্পায়াররা। ফাইল চিত্র

আজ থেকে অনেক বছর পরে যখন এ বারের বিশ্বকাপ ফাইনালের কথা উঠবে, তখন কিন্তু আম্পায়ারদের মারাত্মক একটা ভুলের কথা বারবার ঘুরে ফিরে আসবে।

কী লজ্জা! প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেল বিশ্বকাপ ফাইনাল হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনও ম্যাচের ফলটাকে মেনে নিতে পারছি না। দীর্ঘদিন ধরে ক্রিকেট খেলেছি। নিজের জীবনে অনেক হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচের সঙ্গে জড়িয়ে থেকেছি। কিন্তু মনে পড়ছে না, কখনও এমন মারাত্মক ভুল আম্পায়ারিং দেখেছি বলে। তখনকার দিনে আম্পায়ারদের সাহায্য করার জন্য কোনও প্রযুক্তি ছিল না। কিন্তু তা সত্ত্বেও দু’একটা রান আউট, এলবিডব্লিউ বা কট বিহাইন্ডের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ছাড়া মারাত্মক কোনও ভুল কিছু হয়েছে বলে মনে পড়ে না। দুই আম্পায়ার, কুমার ধর্মসেনা এবং মারায়িস এরাসমাসের নাম সম্পূর্ণ অন্য কারণের জন্য বহুদিন সবার মনে থেকে যাবে। ধর্মসেনা বা এরাসমাসও নিশ্চয়ই নিজেদের কীর্তির জন্য গর্বিত হবে না।

আমি নিশ্চিত, আইসিসি এ বার আরও বেশি করে প্রযুক্তিকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করবে। অধিনায়কদের ক্ষমতা দেবে যাতে আরও বেশি করে প্রযুক্তির সাহায্য নিতে পারে। আমার কাছে জানতে চাইলে বলব, ইংল্যান্ডকে কখনওই ওই বাড়তি রানটা দেওয়া উচিত হয়নি। ছয় নয়, ওই ওভারথ্রোয় পাঁচ রান হওয়া উচিত ছিল। যে ফাইনালে এ রকম লড়াই হয়েছে, যে ফাইনাল দু’দু’বার টাই হয়ে গিয়েছে, সেখানে এ রকম একটা ভুল গেমচেঞ্জার হয়ে থেকে গেল। ম্যাচের রংই বদলে দিয়ে গেল আম্পায়ারদের ওই একটা সিদ্ধান্ত।

এর আগের কলামে আমি লিখেছিলাম, ইংল্যান্ডই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হবে। কিন্তু ফাইনাল দেখার পরে বলছি, নিউজ়িল্যান্ড এই ট্রফিটা জিতলে আমি সত্যিই খুশি হতাম। আমি অবশ্য ইংল্যান্ডের কৃতিত্ব ছোট করতে চাই না। বিশ্বকাপের আগেই সব নিয়ম লেখা হয়ে গিয়েছিল। আর কেউ নিশ্চয়ই ঘোর দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেনি এ রকম একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যাবে। ম্যাচে ক’টা বাউন্ডারি হয়েছে, তার উপরে বিশ্বকাপ ভাগ্য ঠিক হবে!

এই নিয়মের ফলে ফাইনালে নিউজ়িল্যান্ডকে ভুগতে হল। যদি একই পরিস্থিতিতে পড়ে ইংল্যান্ড হেরে যেত, তা হলে ইংলিশ মিডিয়া তোলপাড় ফেলে দিত চক্রান্তের অভিযোগ তুলে। কিন্তু নিউজ়িল্যান্ডের ক্রিকেটাররা মাঠে কোনও রকম বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। ঠিক এই কারণে কেন উইলিয়ামসন এবং ওর দলের ক্রিকেটারদের বারবার ধন্যবাদ দিতে হবে। ওদের এই আচরণ আবার মনে করিয়ে দিল, ক্রিকেট সত্যিই জেন্টলম্যান'স গেম। ক্রিকেট এখনও ভদ্রলোকেরই খেলা। তুমি আমাদের গর্বিত করেছ, কেন। তুমি হয়তো ট্রফিটা পাওনি, কিন্তু তার চেয়েও বড় কিছু পেয়েছ। সবার সম্মান।

ভারতের কথায় আসি। ওরা মিডল অর্ডারের সমস্যার সমাধান করতে পারল না। যার ফলে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ভুগতে হল। পুরো বিশ্বকাপ জুড়ে ব্যাটিং লাইনে চার নম্বর ধাঁধার কোনও উত্তর পেল না ভারত। এটা বুঝতে কোনও বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই যে, চার নম্বরে যে নামে, তাকে টেকনিক্যালি খুব ভাল হতে হয়। অ্যাঙ্করের ভূমিকায় ইনিংসটাকে তৈরি করতে হয়।

আমার মনে হয়, শিখর ধওয়নের বিকল্প ভারত খুঁজে পায়নি। কে এল রাহুলকে ওপেনে নিয়ে আসা হল। কিন্তু ধওয়নের সাবলীল ব্যাটিং এবং দাপুটে ব্যাটিংয়ের বিকল্প হয়ে উঠতে পারেনি রাহুল। যে কারণে রোহিত শর্মার উপরেও চাপ তৈরি হয়ে যায়। রোহিত যখন ব্যর্থ হল, রাহুলের উচিত ছিল পুরো ইনিংসটা খেলা। কিন্তু বল নড়াচড়া করলেই, রাহুলকে রীতিমতো অস্বস্তিতে দেখিয়েছে। রাহুলকে উপরে তুলে আনা আর একটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। একজন নিখাদ ওপেনারকে এই দায়িত্বটা দেওয়া উচিত ছিল। ইংল্যান্ডকে দেখুন। জেসন রয় ফিরে আসার পরে দলটাই বদলে গেল।

যা হয়ে গিয়েছে, তা নিয়ে হাহুতাশ করে লাভ নেই। ভারতকে এখন শ্রেয়স আইয়ার, শুভমন গিল, মণীশ পাণ্ডেদের তৈরি করতে হবে। আসন্ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ওদের দুই, চার, পাঁচ নম্বর জায়গায় খেলিয়ে যেতে হবে। আমি নবদীপ সাইনি আর দীপক চাহারকেও খুব তাড়াতাড়ি ভারতের হয়ে খেলতে দেখতে চাই। আমার কথা মিলিয়ে নেবেন, এই ছেলে দুটো খুব তাড়াতাড়ি মূলস্রোতে চলে আসবে।

আর একটা কোটি টাকার প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির কী হতে চলেছে? ও কি অবসর নেবে? আমি মনে করি, খেলাটার চেয়ে কেউ বড় নয়। এটা সত্যি কথা, ধোনির মতো ক্রিকেটারের বিকল্প সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না। ধোনির মতো ক্রিকেটার বহু বছরে এক জনই আসে। আবার এটাও সত্যি, সময়ের কাছে আমরা সবাই অসহায়। আপনাকে যখন যেতে হবে, তখন যেতেই হবে।

ধোনির আগে অনেক কিংবদন্তি এসেছে আর চলে গিয়েছে। ধোনির পরেও অনেক কিংবদন্তি আসবে আর চলে যাবে। সময় এলে ব্যাটনটা তুলে দিতেই হয় আর এক জনের হাতে। ধোনি নিজেও নিশ্চয়ই এটা বুঝতে পারছে। ভারতীয় ক্রিকেট এখন পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তবে আমার কথা মিলিয়ে নেবেন। ভারতের হাতে যা প্রতিভা রয়েছে, তাতে আগামী দিনগুলো উজ্জ্বল হতে চলেছে।

Cricket England New Zealand ICC World Cup 2019
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy