Advertisement
E-Paper

আলি-লাভলির উত্থানেও প্রশ্ন প্রতিভা খোঁজা নিয়ে

প্রাক্তন ‘পারফেক্ট টেন’ নাদিয়া কোমানেচি যদি ‘অসামান্য’ বলে আলি-লাভলিকে নিয়ে টুইট না করতেন, কেউ কি তাঁদের খোঁজও পেত?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:১৯
আলি ও লাভলি।—ছবি সংগৃহীত।

আলি ও লাভলি।—ছবি সংগৃহীত।

হঠাৎ করে এ রকম সময় যে তাঁদের পরিবারে আসতে পারে, তা বোধহয় ভাবতেই পারেননি খিদিরপুরের দুই পরিবার। যাঁদের দুই কিশোর-কিশোরী আলি (মহম্মদ ইজ়াজুদ্দিন) ও লাভলি (জেসিকা খান) এই মুহূর্তে গোটা দেশের নজরে। যাঁদের শূন্যে তাক লাগানো ডিগবাজি জিতে নিয়েছে গোটা দেশের হৃদয়।

কিন্তু রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যাওয়া যুগলের এই ঘটনা তুলে দিয়েছে কিছু প্রশ্নও। যেমন, প্রাক্তন ‘পারফেক্ট টেন’ নাদিয়া কোমানেচি যদি ‘অসামান্য’ বলে আলি-লাভলিকে নিয়ে টুইট না করতেন, কেউ কি তাঁদের খোঁজও পেত? এ রাজ্যে প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের চিহ্নিত করার জন্য কি যথেষ্ট উদ্যোগ বা যথার্থ প্রক্রিয়া আছে? নাকি এখনও বেশির ভাগ প্রতিভা আড়ালেই থেকে যায়?

ভিডিয়ো প্রকাশিত হওয়ার দিন পাঁচেক পরে এ দিন কলকাতায় পূর্বাঞ্চলীয় সাই ঘোষণা করেছে, এই দুই খুদে প্রতিভাকে তাদের অধীনে রেখে প্রশিক্ষণ দেবে। পূর্বাঞ্চলের ডিরেক্টর মনমীত সিংহ গোয়েন্ডি এ কথা ঘোষণা করেন। নেপথ্যে কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী কিরেন রিজি়জুর নির্দেশ।কিন্তু সত্যিটা হচ্ছে, আলি-লাভলির ভিডিয়ো এঁরা কেউ প্রথমে খেয়াল করেননি।

না কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী, না সাইয়ের কোনও কর্তা। নাদিয়া কোমানেচির মতো কিংবদন্তি ভিডিয়োটি টুইট করেছেন দেখেই প্রতিক্রিয়া দিতে শুরু করেন সকলে। যা দেখে প্রশ্ন উঠছে, যদি কোমানেচিরও চোখ এড়িয়ে যেত তা হলে কী হত? আদৌ কি আলি ও লাভলিকে খুঁজে পেত বাংলা বা ভারতের ক্রীড়াজগৎ?

দুই পরিবারের যদিও মনে হচ্ছে তাঁরা দিবাস্বপ্ন দেখছেন। তাঁরা এর জন্য ধন্যবাদ দিচ্ছেন খিদিরপুরের এই যুগলের নাচের প্রশিক্ষক কে শেখর রাওকে। তিনিই এই দু’জনের এমন দুঃসাহসিক ডিগবাজি দেওয়ার ভিডিয়ো তুলে আপলোড করে দিয়েছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাঁর দুই ছাত্রছাত্রী কী ভাবে এই চমক দিল জানতে চাইলে শেখরবাবু বলেন, ‘‘আলি-লাভলির সব চেয়ে বড় গুণ হল খুব দ্রুত নাচের স্টেপগুলো তুলে নিতে পারত। তাই গত ছ’মাস ধরে ওদের আমি জিমন্যাস্টিকস শেখাতাম। যাতে আরও নিখুঁত হতে পারত।’’

আপনি কি তা হলে জিমন্যাস্টিক্সও শেখান? শেখর এ বার বলেন, ‘‘ছোটবেলায় নিজে জিমন্যাস্টিক্স শিখেছিলাম। কিন্তু বড় হতে পারিনি ওই খেলায়। তাই আলি-লাভলির ভয়ডরহীন কিছু নাচের স্টেপ দেখার পরে মনে হয়েছিল, নিজের শেখা জিমন্যাস্টিক্সের কিছু খুঁটিনাটি ওদের শেখাতে পারলে ছেলেমেয়ে দু’টো আরও ভাল করবে। তাই আমার ক্লাসেই ওদের তালিম দিতাম।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘সেখানেও দেখলাম বাচ্চা দু’টো জিমন্যাস্টিক্সে ভল্টের মতো কঠিন ব্যাপারও সহজে রপ্ত করে ফেলছে। তাই ভেবেছিলাম, একটা ভিডিয়ো তুলে আপলোড করলে, অনেকে ওদের চিনবে। কিন্তু সেটা যে সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে নাদিয়া কোমানেচি পর্যন্ত পৌঁছে যাবে, তা ভাবিনি।’’

আলি-লাভলির মতো যে সব ক্রীড়া-প্রতিভা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে লুকিয়ে থাকলে তাদের খুঁজে পাওয়ার রাস্তা কী?সাইয়ের পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা মনমীত সিংহ গোয়েন্ডি বলছেন, ‘‘আমরা প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস নাগাদ কাগজে বিজ্ঞাপন দিই ট্রায়ালের জন্য। সেখানে যারা দক্ষতা দেখায় আমরা সেই সব বাচ্চাদের নিই।’’ যারা সেই বিজ্ঞাপন দেখতে পায় না, বা খবরের কাগজ পড়ে না, তাদের ক্ষেত্রে? সাই কর্তার জবাব, ‘‘এই দায়িত্ব সাংবাদিক, ক্রীড়া-সংগঠক সকলের। আমাদের কাছে আলি-লাভলির মতো প্রতিভার খবর এলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে তার ট্রায়াল নিয়ে সাইয়ে অন্তর্ভুক্ত করি।’’

বোঝাই যাচ্ছে, আমেরিকা, চিন বা রাশিয়ার মতো প্রতিভা খুঁজে বার করার প্রক্রিয়া নেই এখানে। বরং কর্তারা বসে থাকেন অন্য মাধ্যম থেকে তাঁদের কাছে খবর এসে পৌঁছনোর জন্য। প্রতিভাকে খুঁজে আনার জন্য দায়িত্বে কারা রয়েছেন? পূর্বাঞ্চলীয় সাইয়ের প্রধান গোয়েন্ডি বলেন, ‘‘জিমন্যাস্টিক্সের জন্য সাত জন কোচ রয়েছেন। তাঁরাই আমাদের স্পটার। বিভিন্ন ক্লাবের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে, তাঁরা প্রতিভা তুলে আনেন।’’

বেঙ্গল জিমন্যাস্টিক্স অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ) এ ক্ষেত্রে কী কাজ করছে? রাজ্য জিমন্যাস্টিক্স সংস্থার সচিব প্রণব বসুকে ফোন করা হলে তাঁর ফোন বেজেই গিয়েছে। রাজ্যের দুই বিস্ময় প্রতিভাকে নিয়ে তাঁদের দিক থেকে কোনও সাড়াও পাওয়া যায়নি। কলকাতা বা গোটা রাজ্যে স্কুলের খেলাধুলোর মহল বা মানও আগের মতো নেই। আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতার সেই চল আর দেখা যায় না। রাজ্য জিমন্যাস্টিক্স সংস্থার প্রেসিডেন্ট পুলিশ কর্তা দেবাশিস রায়কে ফোনে ধরা হলে তিনি বলছেন, ‘‘প্রতিভা অন্বেষণের জন্য আমাদের শিবির হয় ক্লাবগুলিকে নিয়ে। ভাবা হচ্ছে, এই প্রতিভা অন্বেষণ শিবিরগুলোর কথা প্রচার করে আরও বেশি ছেলেমেয়েকে সেখানে টেনে আনা। এ ছাড়া স্কুলভিত্তিক শিবির করেও প্রতিভা খুঁজে আনার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।’’

জিমন্যাস্টিক্সে খুব ছোটবেলা থেকে তালিম শুরু করতে হয়। লাভলি অর্থাৎ জেসিকার বয়স ১১। আলি অর্থাৎ ইজ়াজুদ্দিনের বয়স ১২। আর তাঁদের যিনি খুঁজে বের করলেন সেই রোমানিয়ার নাদিয়া কোমানেচি যখন ১৯৭৬ মন্ট্রিয়ল অলিম্পিক্সে ‘পারফেক্ট টেন’ করেন, তখন তাঁর বয়স ছিল ১৫। আবিষ্কারের মধ্যেই তাই আতঙ্ক, রত্ন খুঁজে পেতে দেরি হয়ে গেল না তো?

Vault Nadia Comăneci West Bengal Ali Lovely
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy