এ ভাবেই আটকে গেল ভারত। ছবি: এপি
সব খতম হো গয়া!
ভারতের অলিম্পিক্স হকির কোয়ার্টার ফাইনাল শেষ হওয়ার হুটার বাজতেই আমার প্রথম অনুভূতি এটাই।
সব শেষ হয়ে গেল!
রিও থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরে ভোপালে টিভির সামনে রবিবার রাতে আমি। সেই কবে হকি ছেড়েছি। কিন্তু আমাদের সময় অলিম্পিক্স থেকে বিদায় নিলে প্রথমেই যে মানসিক অবস্থাটা প্রত্যেক প্লেয়ারের ভেতর হত সেটা ও-ই— জীবনের সব কিছু হারিয়ে গেল!
বাহাত্তরে মিউনিখের সেমিফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হারার পরে আমাদের ড্রেসিংরুমে আধঘণ্টা কেউ কারও সঙ্গে কথা বলিনি। গেমস ভিলেজে ফিরে গোটা দল ডিনার করেনি। তিয়াত্তর বিশ্বকাপ ফাইনাল সাডেনডেথে হেরে যাওয়ার পরে গোবিন্দ আর গণেশ ড্রেসিংরুমে কেঁদে ভাসিয়েছিল। সেই রাতেও আমরা কেউ খাইনি।
সর্দার-সৃজেশরা বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে প্রথম কোয়ার্টারে এগিয়ে গিয়েও হাফটাইমের পরে তিন গোল খেয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরে কী করেছে আমার পক্ষে জানা সম্ভব নয়। তবে কান্নাকাটি করেছে বলে আমার মনে হয় না। আসলে সত্তরের দশকেও অলিম্পিক্স বা বিশ্বকাপ হকিতে ভারত নামত সোনা জিততে। রুপো বা ব্রোঞ্জের জন্যও নয়। সেই সময়ও আমাদের দেশে হকি প্রথম স্পোর্ট ছিল, ক্রিকেট দুই নম্বরে। আপামর দেশবাসী তো বটেই, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে ফিল্মের নায়ক, ব়়ড় শিল্পপতি— সবাই অলিম্পিক্সে আমাদের হকি ম্যাচের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। বিরাট প্রত্যাশা রাখতেন।
এখন অন্য ছবি। ভারত আট বছর আগে অলিম্পিক্স হকিতে যোগ্যতা পায়নি। এ দিন অলিম্পিক্সে নকআউট ম্যাচ খেলল ভারতীয় হকি দল ছত্রিশ বছর বাদে। এখন আমাদের হকি দলের কাছে সোনা তো দূরের কথা, পদকের আশা করে না কেউ অলিম্পিক্সে। সেখানে আকাশদীপদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়বে এ দিনের হারের পরে, এতটা মনে করা হয়তো বাড়াবাড়ি। তবে ভারতের এই পারফরম্যান্সে আমি খুশি তাও বলব না। সুযোগ যখন একটা এসেই পড়েছিল, রূপেন্দ্র-সুনীলদের উচিত ছিল সেটার আরও অনেক বেশি সদ্ব্যবহার করা। অন্তত সেমিফাইনাল উঠতে পারলে ঠিক ছিল। তা হলে ব্রোঞ্জেরও একটা সম্ভাবনা থাকত।
কিন্তু অত দূর হবে কী করে? সৃজেশের গোলকিপিং, জমাট ডিপ ডিফেন্স আর পেনাল্টি কর্নারে মোটামুটি সাফল্য বাদে রিওর দলে হয়ে বলার মতো আর কী ছিল! মাঝমাঠে সর্দার সেই পিভট হয়ে উঠতে পারেনি এ বার। রামনদীপ বাদে কারও স্টিকে বিশ্বমানের টাচ নেই। আকাশদীপ এ দিন গোলটা ভাল করেছিল, কিন্তু গোটা টুর্নামেন্টে ভারতের ফিল্ড গোলের সংখ্যা খুব কম। বল পজেশন যত বেশি পারো রাখো বলে গোটা অলিম্পিক্স আনন্দবাজারে আমার কলামে চেঁচিয়ে গেলাম। কোথায় কী? এ দিনও বেলজিয়াম হাফটাইমের পরে প্রায় আশি ভাগ বল পজেশন নিজেরা রেখে ভারতের ডিপ ডিফেন্সে ফাটল ধরাল। আর সেই ফাঁকফোকর দিয়ে প্রচণ্ড স্পিডে অপারেট করে গোলগুলো তুলে নিল।
বছরের পর বছর বিদেশি কোচের হাতে ভারতীয় দলের দায়িত্ব দিয়ে তা হলে কী হল? ছেলেদের ভাল ফিটনেসের পিছনে তো টিমের ট্রেনার। কোচের কাজ তো দলের খেলায় নতুনত্ব আনা। ডাচ কোচ অল্টমান্সের থেকে সে রকম কোনও স্ট্র্যাটেজি দেখতে পাইনি। বিদেশি কোচের জায়গায় আমাদের দেশের কৌশিক বা হরেন্দ্র এখনও সর্দারদের কোচ থাকলেও হয়তো রিওতে এ রকম রেজাল্ট হত টিমের। ছ’টা ম্যাচে দু’টো তো মাত্র জিতেছে ভারত। তিনটে হার আর বারো দেশের সবচেয়ে তলায় থাকা কানাডার সঙ্গেও ড্র।
এরা অলিম্পিক্স পদক জেতার দল হতে পারে না!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy