Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
চলো ছেলেরা এখানেই খেল খতম করে দিই

ঘূর্ণি আর শাস্ত্রীয় গর্জনে অতিথি সৎকারে তৈরি ভারত

মহারাষ্ট্রকে যদি একান্নবর্তী পরিবার ধরা হয়, তা হলে সংসারের বড়-মেজ-ছোটকে ক্রমপর্যায়ে সাজিয়ে নেওয়া খুব কঠিন হবে না। মুম্বই। পুণে। নাগপুর। শেষের শহরে রাতের দিকে পা দিলে, এয়ারপোর্ট থেকে মসৃণ হাইওয়ে ধরে এগোলে, বড়র সঙ্গে পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্যের চোরাগোপ্তা সাদৃশ্য কোথাও কোথাও পাওয়া যাবে।

টিম ইন্ডিয়ার শপথ গ্রহণ।

টিম ইন্ডিয়ার শপথ গ্রহণ।

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়
নাগপুর শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:০৭
Share: Save:

মহারাষ্ট্রকে যদি একান্নবর্তী পরিবার ধরা হয়, তা হলে সংসারের বড়-মেজ-ছোটকে ক্রমপর্যায়ে সাজিয়ে নেওয়া খুব কঠিন হবে না। মুম্বই। পুণে। নাগপুর। শেষের শহরে রাতের দিকে পা দিলে, এয়ারপোর্ট থেকে মসৃণ হাইওয়ে ধরে এগোলে, বড়র সঙ্গে পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্যের চোরাগোপ্তা সাদৃশ্য কোথাও কোথাও পাওয়া যাবে।

মুম্বই অবশ্যই অনেক বেশি অভিজাত। আরবসাগরের উপর দিয়ে ছুটে যাওয়া বিশালাকায় সি-লিঙ্ক রোড এখানে নেই। ফ্যাশন স্ট্রিটের উচ্ছল যৌবন এখানে পাওয়া যাবে না। কিন্তু এই শহরেরও নিজস্ব কিছু আকর্ষণ আছে, যা নিজের মতো সুন্দর, নিজের মতো অভিজাত এবং বৈচিত্রে শহরটাকে কোথাও বুড়োটে মেরে যেতে দেয়নি। নাগপুরের প্রাণকেন্দ্রে ঢুকলে চোখে পড়ে দামী হোটেলের চাকচিক্য, ডমিনোজ-সিসিডির আধিক্য। আবার একই সঙ্গে এখানে আঠারোশো শতকের দুর্গ আছে, যা ইতিহাসের ছাত্রের ভাল লাগার কথা। বিজ্ঞান চাইলে পাবেন রামন সায়েন্স সেন্টার। পশুপ্রেমী হলে আপনার জন্য ব্যাঘ্র প্রকল্প আছে। আর যদি হন নিখাদ ক্রিকেট-পর্যটক, তা হলেও রসনাতৃপ্তির অভাব হবে না। মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ের ঐতিহ্য না থাকলেও নাগপুরের জামথা ক্রিকেট স্টেডিয়ামকে কেউ কেউ দেশের সেরা বলে থাকেন। আর এটা বোর্ড প্রেসিডেন্ট শশাঙ্ক মনোহরের শহরও বটে। মুম্বইয়ের সঙ্গে চোখে লাগার মতো বৈমাত্রেয়সুলভ ব্যাপার বরং দুটো জায়গায়।


সেরা অস্ত্রের সঙ্গে শাস্ত্রী। বাইশ গজ পরীক্ষায় ক্যাপ্টেন কোহলি। সোমবার নাগপুরে। ছবি: পিটিআই

শীতে আর পিচে।

আরবসাগর তীরবর্তী বলে শেষ নভেম্বরের মুম্বইয়েও যা সম্ভব নয়, তা এখানে সম্ভব। প্রকট শীত না থাকলেও ভাল আমেজ আছে। রাতের দিকে গায়ে কিছু একটা থাকলে মন্দ হয় না। আর পারিপার্শ্বিক ছেড়ে যদি ঢোকা যায় বাইশ গজের চরিত্রে, তা হলেও ঘণ্টা পনেরোর ট্রেন-দূরত্বের মুম্বইয়ের সঙ্গে ঘোরতর বৈপরীত্য। সোজাসুজি বলে ফেলা যাক। আগামী পরশু থেকে এখানে যে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট সিরিজের তৃতীয় যুদ্ধ শুরু হচ্ছে, সেখানে শাস্ত্রী বনাম সুধীর নায়েক ঘটনার পুনরাবৃত্তির সম্ভবনা খুবই কম। প্রায় নেই বললেই চলে।

কারণ এটাও নাকি সাড়ে তিন দিনের টেস্টের পিচ! টেনেটুনে চার দিন!

গোটা টেস্ট সিরিজ জুড়ে হাসিম আমলার টিমের ‘অতিথি সত্‌কার’ যে ঘূর্ণিতেই হবে, মোহালি টেস্টের পর আর আশ্চর্যের বিষয়বস্তু নয়। আশ্চর্যের হল, ক্রিকেট সংস্থার কর্তাদের টেস্টের মেয়াদ গণনায় বসে যাওয়া। বিদর্ভ ক্রিকেট সংস্থার কর্তারা যা অনায়াসে বলে-টলে দিচ্ছেন। রাতের দিকে নাগপুর ঢুকে কয়েক জন কর্তার সঙ্গে কথাবার্তা বলে বোঝা গেল, মনোহরের শহর পাঁচ দিন পর্যন্ত টেস্ট গড়ানোর সম্ভাবনা ধরছে না। এবং অবশ্যই দক্ষিণ আফ্রিকার সিরিজে সমতা ফেরানোর সম্ভাবনাকে ‘বাপি বাড়ি যা’ করে আগাম ফেলে দেওয়া হচ্ছে। বলা হল, উইকেট একদম শুকনো। মোহালির মতো বিতর্কিত ঘূর্ণির জন্ম দেবে না ঠিকই, কিন্তু এটাও টার্নার। প্রথম দিন থেকে ঘোরার সম্ভাবনা ভাল রকম এবং এ পিচে তিন স্পিনারের কম্বিনেশনে না যাওয়া নাকি মূর্খামি।

হাতেগরম দু’টো উদাহরণ ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এক, দিনকয়েক আগের অসম-বিদর্ভ রঞ্জি ম্যাচ। টেস্ট ম্যাচের উইকেটেই হয়েছিল এবং বিদর্ভ স্পিনাররা ষোলো উইকেট নিয়ে শেষ করেছিলেন। আর দুই, রবিচন্দ্রন অশ্বিন। যিনি নাকি সোমবার ভারতীয় নেট চলাকালীন ঋদ্ধিমান সাহাকে নিয়ে ম্যাচ স্ট্রিপের পাশেরটায় চলে যান। বেশ কিছুক্ষণ যেখানে বল করেন অশ্বিন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিশ্বাস করলে বেশির ভাগ বল হাতখানেক ঘুরেছে আর চলতি সিরিজে টিম ইন্ডিয়ার সেরা মারণাস্ত্রের ঠোঁটে চিলতে হাসিও দেখা গিয়েছে!

স্পিন-সাহসেই সম্ভবত, টিম ইন্ডিয়ার তর্জন-গর্জনও শোনা গেল বেড়েছে। এমনিতে দক্ষিণ আফ্রিকার সমস্যা এক নয়। একাধিক। সিরিজে ০-১ পিছিয়ে। দু’টো টেস্ট হয়ে গেল, কিন্তু ভারতীয় স্পিনের প্রতিষেধক খুঁজে বার করা দূরে থাক, ইনিংসে আড়াইশো পেরনো যাচ্ছে না। এবি ডে’ভিলিয়ার্স বাদ দিলে কেউ দাঁড়াতে পারছেন না। ইমরান তাহিরকে নিয়ে তৈরি আফ্রিকান স্পিন-ফৌজ ভারতীয় ব্যাটিং দুর্গে এখনও সে ভাবে দাঁত ফোটাতে পারেনি। ভরসা ছিল পেস। অর্থাত্‌, স্টেইন-মর্কেল। কিন্তু জুটিটাই তো এখনও নামল না। মোহালিতে স্টেইন ছিলেন। মর্কেল নন। বেঙ্গালুরুতে মর্কেল নামলেন। কিন্তু চোট পেয়ে স্টেইন মাঠের বাইরে। নাগপুরেও আতঙ্কের পেস-জুটিকে দেখতে পাওয়া নিয়ে নিশ্চয়তার চেয়ে বেশি অনিশ্চয়তা। এ দিন নেটে মিনিট দশেক বল করেছেন স্টেইন। কিন্তু আফ্রিকা শিবিরকে তা নিশ্চিন্ত করতে পারেনি। মর্কেল বলে গেলেন, ‘‘বুধবার সকালের আগে কিছু বলা যাচ্ছে না।’’ স্টেইনকে ফিট করে তোলার চেষ্টা চলছে। কিন্তু তা সফল হলেও লাভ খুব হওয়ার কথা নয়। স্টেইন গানের ঝাঁঝ আর আগের মতো নেই। বয়স গুলি-বর্ষণের তেজ এমনিই কমিয়েছে।

আফ্রিকান সিংহদের মেজাজ আরও তিতকুটে হয়ে যেতে পারত ভারতীয় টিম হাডলে হওয়া কথাবার্তা শুনলে। শোনা গেল, মাঠে টিম হাডলের সময় এ দিন সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দিয়েছেন রবি শাস্ত্রী। ভারতীয় টিম ডিরেক্টরের গমগমে গলা থেকে নিঃসৃত যে শব্দগুচ্ছ অনায়াসে পৌঁছেছে হাত পাঁচেক দূরে দাঁড়ানো মিডিয়ার কানে।

‘বয়েজ, ইউ নিড টু ফোকাস অ্যান্ড সিল দ্য ডিল হিয়ার!’

যার তর্জমা, অন্তর্নিহিত অর্থ সহজ। ছেলেরা, সিরিজ এখানেই শেষ করো। ফালতু দিল্লি পর্যন্ত ফেলে রেখো না।

কীসের জোরে এমন নিনাদ, বিশদে বলা মানে সময় নষ্ট। বরং কোহলি-শাস্ত্রীদের তুরীয় মেজাজ দেখলে মনে হবে, আমলারা বোধহয় আগাম কিছু সোয়েটার অর্ডার করে রাখলে পারেন। সকালের দিকে তাপমাত্রা যতই ত্রিশের উপরে থাক, মাঠের ঠকঠকানি সামলাতে হবে তো!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE