Advertisement
E-Paper

‘বেলজিয়ামের মনোবল কিন্তু বেড়েই থাকল’

আমার আবারও মনে পড়ছে, ৬৪ বছর আগে পশ্চিম জার্মানির অন্য একটা ম্যাচের কথা। ১৯৫৪-র সেই দুনিয়া কাঁপানো বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল।

শিশির ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৮ ০৫:০৪

রাত জেগে সোমবার দেখতে বসেছিলাম বিশ্বকাপ প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়াম বনাম জাপান ম্যাচটা। প্রথমার্ধ গোলশূন্য। তার পরে আটষট্টি মিনিট পর্যন্ত ০-২ পিছিয়ে বেলজিয়াম। শেষ পর্যন্ত পরের ২৫ মিনিটে তিন গোল দিয়ে বিশ্বকাপের শেষ আটে পৌঁছে যাওয়া এডেন অ্যাজারদের। জয়সূচক গোল আবার সংযুক্ত সময়ে শেষ শটে। নাটকীয় এই ম্যাচটা শেষ হওয়ার পরে টিভিতে ধারাভাষ্যকাররা বলছিলেন, ৪৮ বছরের রেকর্ড ভাঙল বেলজিয়াম।

কী সেই রেকর্ড? ৪৮ বছর আগে ১৯৭০ সালে মেক্সিকো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে পশ্চিম জার্মানির বিরুদ্ধে অ্যালান মুলেরি এবং মার্টিন পিটার্সের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ড জিতে ফিরতে পারেনি। বেকেনবাউয়ার, উয়ে সিলার আর গার্ড মুলারের গোলে সেমিফাইনালে গিয়েছিল পশ্চিম জার্মানি।

আমার আবারও মনে পড়ছে, ৬৪ বছর আগে পশ্চিম জার্মানির অন্য একটা ম্যাচের কথা। ১৯৫৪-র সেই দুনিয়া কাঁপানো বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল। পুসকাস এবং জিবরের গোলে আট মিনিটেই ২-০ এগিয়ে গিয়েছিল ফেভারিট হাঙ্গেরি। কিন্তু তার দশ মিনিটের মধ্যেই জার্মানদের হয়ে সেই গোল শোধ করে দেন ম্যাক্সিমিলিয়ান মার্লক এবং হেলমুট রান। ম্যাচ শেষ হওয়ার ছয় মিনিট পরে সেই রানের গোলেই কাপ উঠেছিল পশ্চিম জার্মানির অধিনায়ক ফ্রিৎজ ওয়াল্টারের হাতে। যাঁদের নিয়ে আলোচনা করছি, তাঁদের সঙ্গে আমার ফুটবল ভুবনের তফাৎ আকাশ-পাতাল। কিন্তু এটা জানি, পাড়ার টুর্নামেন্টেও যদি কোনও দল ০-২ পিছিয়ে থেকে পঁচিশ মিনিটে তিন গোল করে জেতে, তা হলে তাদের মনোবল, আত্মবিশ্বাস কতটা মজবুত হয়।

কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়ামের এই আত্মবিশ্বাস এবং লড়াই নিয়ে চিন্তায় থাকবে তিতের ব্রাজিল। এনজো শিফোদের পরে এই বিশ্বকাপে তাঁদের দেশের সেরা দলটাকে নিয়ে রাশিয়ায় এসেছেন বেলজিয়াম কোচ রবের্তো মার্তিনেস। ৩-৪-৩ ছকে তাঁর আক্রমণে রোমেলু লুকাকু, এডেন অ্যাজার, দ্রিস মার্টেনস। মাঝমাঠে কেভিন দে ব্রুইনের মতো প্লে-মেকার। রক্ষণে ভ্যানসঁ কোম্পানি, জাঁ ভার্তোয়েনরা। গোলে বিশ্বের অন্যতম সেরা থিবাউ কুর্তোয়া। ফলে আক্রমণ, রক্ষণ ও মাঝমাঠ তিন বিভাগেই নেতৃত্ব দিয়ে খেলার মতো ফুটবলার রয়েছে দলে। যা ব্রাজিলের বিরুদ্ধে টিনটিনের দেশের ব্রহ্মাস্ত্র হয়ে উঠতে পারে।

এর সঙ্গে রয়েছে কোচ মার্টিনেসের মগজাস্ত্র। জাপানের বিরুদ্ধেই যেমন মোক্ষম সময়ে পরিবর্ত হিসেবে মারুয়ান ফেলাইনি এবং চ্যাডলিকে নামিয়ে দিয়েছিলেন। এই দু’জনের গোলেই শেষ পর্যন্ত সমতা ফেরানো ও ম্যাচ জেতা বেলজিয়ামের।

তবে ওদের কিছু দুর্বলতাও রয়েছে। সেই সমস্যা রক্ষণে। যে দুই উইং হাফকে সাইড ব্যাকের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে, সেই থোমা মিউনিয়ার এবং ইয়ানিক কারাস্কো আক্রমণে যতটা সাবলীল, রক্ষণে ততটা নির্ভরশীল নয়। চাপ পড়লেই তাই ভাঙছে কোম্পানিদের রক্ষণ। গ্রুপের খেলায় টিউনিশিয়াও দু’গোল করেছে বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে। ভাগ্য সহায় থাকলে সোমবার রাতে জিতে ফিরতে পারত জাপানও। চার ম্যাচে চার গোল খেয়েছে বেলজিয়াম। জাপান কোচ আকিরা নিশিনো সোমবার রাতে তাদের দুই গোলদাতা হারাগুচি এবং ইনুইকে কাজে লাগাচ্ছিলেন উইংয়ে। বেলজিয়ামের দুই প্রান্তিক আক্রমণকারী অ্যাজার ও মার্টেনস উপরে উঠে গিয়ে নামতে সময় নিচ্ছিলেন। ফলে জাপানের দুই উইঙ্গারকে ধরতে পারছিলেন না। উইংয়ে খেলা ছড়ালেই কিন্তু চাপে পড়ে যাচ্ছে বেলজিয়াম। রক্ষণকে নির্ভরতা দিতে গিয়ে তাই কখনও কখনও নামতে হচ্ছে দে ব্রুইনকে।

ফলে আক্রমণ অনেক সময় দানা বাধছে না। পাউলিনহো, ফিলিপে কুটিনহোরা কিন্তু এই জায়গায় কামড় দেবেন। এ ছাড়াও, জাপানের বিরুদ্ধে দুই প্রান্ত থেকে বল উড়ে আসলে নড়বড় করছে কোম্পানিদের রক্ষণও। এই সমস্যা সারিয়ে কিন্তু নামতে হবে মার্তিনেসকে। কারণ দলটার নাম ব্রাজিল। পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়ন।

Belgium Brazil Football FIFA World Cup 2018 বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy