Advertisement
E-Paper

ইতিহাসের হাতছানিতেও শান্ত হ্যারি

ইংল্যান্ড দলেও দেখা যাচ্ছে সেই ছবি। শনিবার তিনি গোল পাননি কিন্তু সতীর্থদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন কেন।

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৮ ০৪:২৩
হ্যারি যেন এখন ইংল্যান্ডের নতুন প্রজন্মের কাছে স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। ছবি: রয়টার্স

হ্যারি যেন এখন ইংল্যান্ডের নতুন প্রজন্মের কাছে স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। ছবি: রয়টার্স

রানি এলিজাবেথের হাত থেকে জুলে রিমে কাপ নিচ্ছেন ববি মুর।

১৯৬৬-র সেই ছবি এখনও সেরার সেরা হয়ে রয়েছে লন্ডনের জাদুঘরে। তার পাশে নিজেদের ছবি বাঁধিয়ে রাখার সুযোগ সামনে হাজির।

ব্রাজিলের রোনাল্ডোর ২০০২-এর হাসিমুখের সেই আট গোল করে সোনালি বুট নেওয়ার ছবি এখনও উজ্জ্বল ফিফার ওয়েবসাইটে। রিয়োর রাস্তায়।

চুয়াত্তরের পরে সেই রেকর্ড এখনও ভাঙতে পারেনি কেউই। সেটা ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার চাবি তাঁর হাতে।

আঠাশ বছর বাদে সেমিফাইনালে ওঠার পর দেশের রাজ পরিবার থেকে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে টুইট এসেছে! শোনা যাচ্ছে, দল ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে বুধবার ফাইনালে উঠলে স্বয়ং যুবরাজ আসবেন ফাইনাল দেখতে।

রাশিয়ার মাটিতে ফুটবলের রাজ সিংহাসনে বসার এ রকম মাহেন্দ্রক্ষণের সামনে তিনি। তবুও হ্যারি কেন নিজেকে হ্যারিকেনের মতো আলোতে রাখতেই যেন বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করছেন এখনও। ‘‘আমাদের টিম একটা পরিবার। এখানে আমি একা কেউ নই। আমাদের স্বপ্ন ছুঁতে আর দু’টো ম্যাচ জিততে হবে। তার পরই আমরা আনন্দ করব।’’ সুইডেনকে সামারা থেকে বিদায় করে দিয়ে মস্কোর বেস ক্যাম্পে ফিরেই বলে দিয়েছেন বিশ্ব ফুটবলের নতুন তারকা। যাঁকে নিয়ে গান বেঁধেছেন ইংল্যান্ড সমর্থকরা, ‘‘হ্যারি কেন, হ্যারি কেন, উই উইল বি চ্যাম্পিয়ন এগেইন।’’ সেই গান আরও জোরালো হয়েছে শনিবার বিকেল থেকে। অধিনায়কের মুখে দলগত সংহতির সেই জয়গানে যেন আরও সুর জুড়েছে।

মস্কো, সেন্ট পিটার্সবার্গ, কাজ়ানের রাস্তায় এখনও ইতিউতি দেখা যাচ্ছে লিয়োনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, নেমার দা সিলভা স্যান্টোসের (জুনিয়র) কিছু ছবি। আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল এমনকি বেলজিয়াম, ক্রোয়েশিয়ার পুরো দলের ছবি দেখেছি ইলেকট্রনিক বোর্ডে। রাশিয়ার তিনটে বড় শহরে ঘুরে কোথাও দেখতে পাইনি একটা হ্যারি কেন বা ইংল্যান্ড দলের কাট আউট। কমিউনিজম থেকে বেরিয়ে মুক্ত হাওয়ায় আসার পরও কি রাজ পরিবার সম্পর্কে একই রকম মনোভাব রুশদের? জানি না, কিন্তু যেভাবে কায়রন ট্রিপিয়ার, অ্যাশলে ইয়ং, দালে আলিরা অশ্বমেধের ঘোড়ার মতো একের পর এক বাধা টপকাচ্ছেন, তাতে ভ্লাদিমির পুতিনকে না হ্যারি কেনের সঙ্গেই বিশ্বকাপের শেষ দিনে ছবি তুলতে হয়। রাশিয়া বিশ্বকাপের অন্যতম আকর্ষণীয় চরিত্র এ দিন কিন্তু তাদের দেশের সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘মেসি, নেমার, রোনাল্ডো নিয়ে তো অনেক লেখা হল। তারা তো নেই কাপে। এ বার ইংল্যান্ডের নতুন প্রজন্মকে নিয়ে কিছু লিখুন। ওরা অনভিজ্ঞ বলে তো অনেক সমালোচনা করেছেন। কটাক্ষ করেছেন। এ বার তারা অভিজ্ঞ হয়েছে তো।’’

আরও পড়ুন: জিতে অঁরিকে জবাব দিতে চান জিহুরা

ইংরেজ সাংবাদিকদের কাছে শুনলাম, হ্যারি কেন খুব ঠোঁট কাটা স্বভাবের। তাঁকে বা তাঁর দলকে নিয়ে সমালোচনা হলে চুপ করে থাকেন না‌। সাফল্য পাওয়ার পরে জবাব দেওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকেন এ বারের বি‌শ্বকাপের একমাত্র ছয় গোলের মালিক। ’৬৬-র ববি মুর এখন কিংবদন্তি। সোশ্যাল মিডিয়ার ভোটে কেন পিছনে ফেলে দিয়েছেন ওয়েন রুনিকে। তাঁর থেকে জনপ্রিয়তায় সামান্য এগিয়ে আছেন শুধু ডেভিড বেকহ্যাম। বিশ্বকাপ জিতলে সেই পার্থক্য মুছে যাবে তো বটেই, মেসি-রোনাল্ডো-নেমারদের চেয়েও ইংরেজ সংবাদমাধ্যম তাঁকে এগিয়ে দেবে ফুটবল বিশ্বে। হ্যারি কেন যেন সে জন্যই আরও তেতে আছেন। ‘‘শুরুতে আমাদের কেউ ধর্তব্যের মধ্যে রাখেনি। সেটাই আমাদের বেশি করে তাতিয়েছে’’ বলে দিয়েছেন ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা।

বেকহ্যাম যে স্কুলে পড়তেন সেই চিংফোর্ড ফাউন্ডেশন স্কুলে পড়তেন হ্যারি কেন। সেখানকার এক খেলাধুলোর শিক্ষক দেখলাম এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই হ্যারি খুব চালাক। অত্যন্ত দাপুটে। আমাদের স্কুল টিম যখন গোল করতে পারত না, সবাই বলত যেখানেই বল পাবি হ্যারিকে দিবি। ও গোল করে দেবে। সেটা করে ফেলত ও। নেতৃত্ব দেওয়ার সহজাত গুণ আছে ছেলেটার মধ্যে।’’

ইংল্যান্ড দলেও দেখা যাচ্ছে সেই ছবি। শনিবার তিনি গোল পাননি কিন্তু সতীর্থদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন কেন। বলে দিয়েছেন, ‘‘আমার গোল নিয়ে ভাবি না। আমি যদি কাউকে গোল করতে সাহায্য করি এবং সেটা গোল হয় তা হলেও একই রকম আনন্দ পাই।’’ মোটা বলে এক সময় আর্সেনাল ও টটেনহ্যাম অ্যাকাডেমির শিক্ষকরা তাঁকে দলে নেননি। বাদ দিয়ে দিয়েছিলেন। সেই টটেনহ্যামই হ্যারি কেনের ছবি দিয়ে বিপণনের নতুন মোড়ক তৈরি করছে। সুইডেন ম্যাচ জেতার পরেই হ্যারি কেন উঠে গিয়েছিলেন গ্যালারিতে। পরিবারের একজনের থেকে মোবাইল চেয়ে নিয়ে সন্তান-সম্ভবা সঙ্গিনী কেটি গুডল্যান্ডের সঙ্গে ভিডিয়ো কলে কথা বলেন দীর্ঘক্ষণ। লন্ডনে তাঁর সঙ্গে কথা বলার পরে মস্তিষ্কের ক্যানসারে আক্রান্ত এক ভক্তের সঙ্গে সেলফি তোলেন তিনি। তাঁর দলের সমর্থকেরাও স্ত্রী, পরিবারের সঙ্গে উৎসব পালন করেন। এমনিতে এ বার ইংরেজ সমর্থকেরা তেমন আসেননি রাশিয়ায়। যা শুনলাম হাজার চারেক সমর্থক এসেছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই ইতিমধ্যে দেশের জার্সিতে কেনের নাম লিখিয়ে ফেলেছেন। মস্কোর রাস্তায় এ রকম কয়েকটি দলকে দেখলাম। ‘হ্যারি, হ্যারি স্টার্লিং, স্টার্লিং’ চিৎকার করতে করতে চলেছে। রাস্তা দিয়ে ব্রাজিল, সুইডেন থেকে যাওয়া সমর্থকেরা হাঁ করে দেখছেন সেই দৃশ্য।

এ রকম ছবি যে ক্রমশ বাড়বে, সেটা বলাই যায়। হ্যারি কেন যে এখন ইংল্যান্ডের নতুন প্রজন্মের কাছে স্বপ্নের ফেরিওয়ালা।

Harry Kane England Football FIFA World Cup 2018 ফিফা বিশ্বকাপ ২০১৮
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy