নক-আউট পর্বের প্রস্তুতিতে মেসি। ছবি: এপি।
শেষ ষোলোর লড়াই শুরুর আগে সব চেয়ে বড় চমক বোধহয় জার্মানির বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেওয়া। তবে গত বারের চ্যাম্পিয়নরা থাকবে না বলে যে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালের মান পড়ে যাবে, এমনটা কিন্তু হবে না। পাশাপাশি এটাও বলব, এই রাউন্ডেও অনেক চমক অপেক্ষা করে আছে আমাদের জন্য।
আজ, শনিবার নক-আউটের প্রথম ম্যাচে আর্জেন্টিনা নামছে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে। গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনা খুব একটা ভাল খেলে আসতে পারেনি। বরং বিদায় নিতে নিতে ফিরে এসেছে। কঠিন লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে শেষ ষোলোয় উঠেছে। যে কারণে আমার মনে হয়, আর্জেন্টিনার খেলা এখন থেকে আরও ভাল হবে। ফ্রান্স সম্পর্কে বলব, ওরা সেই আগের ফ্রান্স নেই। কিন্তু ওদের দলে এমন কয়েক জন ফুটবলার আছে, যারা যে কোনও সময় খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারে। তাই আর্জেন্টিনাকে রক্ষণের ওপর জোর দিতে হবে। আমাদের দলে আক্রমণে বৈচিত্র কম নেই। তাই আক্রমণ এই মুহূর্তে চিন্তার কারণ নয়।
এই ম্যাচে কিন্তু শারীরিক সক্ষমতা একটা বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। ফ্রান্স চাইবে ম্যাচটা ১২০ মিনিট পর্যন্ত টানতে। সেটা ওদের করতে দিলে চলবে না। কারণ, ফ্রান্স অনেক তরতাজা অবস্থায় মাঠে নামছে। ওদের ফুটবলারদের বয়স কম, গতিও আছে। ১২০ মিনিট খেলা হওয়া মানে ওদের সুবিধে। এই ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হবে আর্জেন্টিনাকে।
আরও পড়ুন: একা রোনাল্ডোই এগিয়ে রাখছেন পর্তুগালকে
ফ্রান্স কোন দিক থেকে এগিয়ে? শারীরিক ক্ষমতা, বল নিয়ন্ত্রণ, গতি।
আর্জেন্টিনা কোন দিকে এগিয়ে? অবশ্যই লিয়োনেল মেসির উপস্থিতি। তার সঙ্গে দলের মানসিকতা।
ফ্রান্সের রণনীতি কী হওয়া উচিত? ম্যাচ যে করেই হোক অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে যাওয়া।
আর্জেন্টিনার ছকটা কী হবে? ৬০ মিনিটে ম্যাচটা শেষ করে দিতে হবে মেসিদের। মানে গোল করে এগিয়ে যেতে হবে। এর পরের তিরিশ মিনিট ফ্রান্সকে আটকে রাখতে হবে। প্রয়োজনে প্রতি-আক্রমণে যেতে হবে। এটাই আজ হর্হে সাম্পাওলির রণনীতি হোক।
আমি একটা কথা বিশ্বাস করি। বিশ্বকাপ জিততে গেলে যে কোনও দলের বিরুদ্ধে খেলার জন্য তৈরি থাকতে হবে। উল্টো দিকে কারা রয়েছে, তা নিয়ে ভাবলে চলবে না। ১৯৭৮ সালে আমরা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে অনেক ভাল ভাল দলকেই হারিয়ে এসেছিলাম।
ফ্রান্সের সঙ্গে ম্যাচ কতটা কঠিন পরীক্ষা হবে আর্জেন্টিনার জন্য? প্রি-কোয়ার্টারে ওঠার পথে ফ্রান্সকে খুব একটা শক্ত ম্যাচ খেলতে হয়নি। এমনকি শেষ ম্যাচে ডেনমার্কের বিরুদ্ধে পাঁচ জন প্রধান ফুটবলারকে বিশ্রামও দিতে পেরেছিল। তাই ফ্রান্সের প্রায় অর্ধেক ফুটবলার মোটামুটি ন’দিনের বিশ্রাম নিয়ে মাঠে নামবে। সন্দেহ নেই, শারীরিক ভাবে একটু সুবিধাজনক জায়গায় থাকবে ফ্রান্স। কিন্তু তা বলে কি আর্জেন্টিনার খুব দুশ্চিন্তা করার কিছু আছে? আমি বলব, না। আমাদের দল যদি বল ধরে খেলতে পারে, চাপে না পড়ে যায় আর মেসি যদি ছন্দে থাকে, তা হলে চিন্তার কিছু নেই। ফ্রান্স বেশি চিন্তায় থাকবে মেসিকে নিয়ে। আর্জেন্টিনার বাকি ফুটবলারদের নিয়ে নয়। যে ব্যাপারটা আর্জেন্টিনার পক্ষেই যেতে পারে। ভুলে যাবেন না, ফ্রান্স আর যাই হোক ব্রাজিল নয়।
আর্জেন্টিনা এবং ফ্রান্স, দু’টো দল দু’রকম পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এসেছে। আগেই বলেছি, ফ্রান্সকে সে রকম লড়াই করতে হয়নি শেষ ষোলোয় ওঠার জন্য। এক কথায় বলা যেতে পারে গ্রুপ পর্বে ফ্রান্সের ম্যাচগুলো খুব সাদামাঠা ছিল। লড়াই করতে হয়নি, চাপ নিতে হয়নি, যন্ত্রণা পেতে হয়নি।
উল্টো দিকে আর্জেন্টিনা মাঠ এবং মাঠের বাইরের বিশৃঙ্খলা সামলে উঠে এসেছে। যে বিশৃঙ্খলার পূর্ণ কাহিনিটা হয়তো ভবিষ্যৎ আমাদের বলবে। এখন শুধু বলব, মেসি, বিগলিয়া, মাসচেরানো, আগুয়েরোর মতো ফুটবলারদের হস্তক্ষেপে একটা বিপর্যয় এড়ানো গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy