Advertisement
E-Paper

‘তিলকারার অভিশাপ’ থেকে মুক্তি পেলে তবেই বিশ্বকাপ জিতবে মেসিরা!

আর্জেন্তিনার উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে একটা ছোট্ট গ্রাম তিলকারা। যে গ্রামে ১৯৮৬ সালের জানুয়ারি মাসে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি শিবির করেছিল কার্লোস বিলার্দোর দল।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৮ ০৪:২০
চ্যাম্পিয়ন: বিশ্বকাপ জিতে মারাদোনা।

চ্যাম্পিয়ন: বিশ্বকাপ জিতে মারাদোনা।

রাশিয়ার মাটি থেকে আর্জেন্তিনাকে বিশ্বকাপ জিততে হলে শুধু লিয়োনেল মেসির পায়ের জাদুর ওপর ভরসা করে থাকলেই হবে না। পাশাপাশি তাদের খুঁজে বার করতে হবে বছর তিরিশ আগেকার অভিশাপ থেকে মুক্তিলাভের উপায়ও!

যে অভিশাপ নাকি এখনও তাড়া করে চলেছে আর্জেন্তিনার ফুটবল দলকে। যে অভিশাপ নাকি দেশের ফুটবলের ওপর নিয়ে এসেছে দিয়েগো মারাদোনার সেই বিশ্বকাপজয়ী দল! আর্জেন্তিনার একটা অংশের মানুষ এখনও মনে করেন, এই ‘তিলকারার অভিশাপ’ থেকে এ বারও মুক্তিলাভ ঘটবে না মেসিদের। বিশ্বকাপ এ বারও অধরা থেকে যাবে ফুটবল রাজপুত্রের।

কী এই তিলকারার অভিশাপ?

আর্জেন্তিনার উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে একটা ছোট্ট গ্রাম তিলকারা। যে গ্রামে ১৯৮৬ সালের জানুয়ারি মাসে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি শিবির করেছিল কার্লোস বিলার্দোর দল। যে সময় গোটা গ্রামে একটি মাত্র টেলিফোন ছিল। টিভি খুঁজলেও পাওয়া যেত না। আন্দিজ পর্বতমালায়, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে আড়াই হাজার মিটার উচ্চতায় ওই গ্রামে শিবির করার একটাই কারণ ছিল। মেক্সিকোর উচ্চতায় খেলার প্রস্তুতি নেওয়া। সেই প্রস্তুতি শিবির চলাকালীনই বিলার্দোর কানে আসে একটি উপকথা। ওই গ্রামের একটি মাত্র চার্চে ‘ভার্জিন অব কোপা কাবানা’র মূর্তি আছে। গ্রামের মানুষ বিশ্বাস করেন, ওই মূর্তির সামনে যদি কিছু মানত করা হয়, তা হলে তা পূরণ হয়। আবার কোনও প্রতিশ্রুতি দিলে, সেটিও রক্ষা করতে হয়। না হলেই বিপদ।

বত্রিশ বছর আগের সেই ঘটনার কথা এখনও মনে আছে স্থানীয় মানুযের। আর্জেন্তিনার একটি ওয়েবসাইটে অতীতের সেই কাহিনি তুলে ধরেছেন ডেভিড গর্দিলো নামের জনৈক গ্রামবাসী। সে সময় বছর পঁচিশেক বয়স ছিল গর্দিলোর। আর্জেন্তিনার সেই দলের সঙ্গে অনুশীলনও করতেন তিনি। এক বার ফুটবলারদের কাছে এই জাগ্রত বিগ্রহের কথা বলেছিলেন গর্দিলো। তার পর ফুটবলাররা নাকি প্রতিশ্রুতি দেন, কোনও ভাবে বিশ্বকাপ জিততে পারলে তাঁরা আবার তিলকারায় ফিরে ‘ভার্জিন অব কোপা কাবানা’কে ধন্যবাদ দিয়ে যাবেন।

ভক্তি: তিলকারায় সেই মূর্তি নিয়ে ভক্তরা।

আর এক স্থানীয় বাসিন্দা, সারা ভেরাও প্রায় একই কথা বলেছেন। আর্জেন্তিনার অনুশীলনের জন্য মাঠ ভাড়া দিয়েছিলেন ভেরা। ভেরার বক্তব্য, তিনি জাতীয় দলের কোচ বিলার্দোকে নিয়ে ওই চার্চে গিয়েছিলেন। স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে ভেরা বলেছেন, ‘‘ভার্জিনের মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে বিলার্দো বলেন, বিশ্বকাপে তাঁরা যদি অসম্ভব সম্ভব করতে পারেন, তা হলে এখানে ফিরে এসে, হাঁটু মুড়ে বসে ধন্যবাদ জানাবেন।’’

অসম্ভব সম্ভব হয়েছিল। দিয়েগো মারাদোনার দল সে বার বিশ্বকাপ জিতেছিল। কিন্তু বিলার্দোরা আর ফিরে যাননি তিলকারায়!

স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস, এর পর থেকেই অভিশাপ তাড়া করছে আর্জেন্তিনাকে। যে কারণে তার পর থেকে দু’ বার বিশ্বকাপ ফাইনালে (১৯৯০, ২০১৪) উঠেও কাপ জেতা হয়নি তাদের। দু’বারই ফাইনালে এক গোলে হারতে হয়েছিল জার্মানির কাছে।

সেই বিতর্ক এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে ’৮৬ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্যদের। কিছু দিন আগেও বিলার্দো বলেছিলেন, তাঁরা কোনও রকম প্রতিশ্রুতি দেননি কোথাও। দলের ফুটবলারদেরও বক্তব্য ছিল একই রকম। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিতর্ক থামেনি। বিশেষ করে তিলকারার গ্রামবাসীরা ঘটনাটা ভাল ভাবে নেননি। স্থানীয়দের বক্তব্য, প্রতিশ্রুতিভঙ্গের অভিশাপ এখনও তাড়া করে যাচ্ছে আর্জেন্তিনাকে। উত্তপ্ত পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দিতে ২০০৬ সালে বিশ্বকাপের একটি প্রতিরূপও তিলকারার চার্চে পাঠিয়েছিল আর্জেন্তাইন ফুটবল সংস্থা। কিন্তু বিশ্বকাপ আর আসেনি আর্জেন্তিনার ঘরে।

আর্জেন্তিনার সংবাদ মাধ্যমের খবর, এ বছর সেই শাপমুক্তির লক্ষ্যে ১৯৮৬ সালের কাপজয়ী দলের কয়েক জন ফুটবলার তিলকারার গ্রামে যাওয়ার কথা ভেবেছেন। যাঁদের মধ্যে আছেন অস্কার রুগেরি, হর্হে বুরুচাগা, রিকার্দো বচিনিরা। তবে সংশ্লিষ্ট ফুটবলাররা এই ব্যাপারে মুখ খোলেননি। বিশ্বকাপ সামনে এসে পড়লেও এখনও পর্যন্ত ফুটবলারদের তিলকারা যাওয়ার কথাও জানা যায়নি।

তিলকারার ওই শিবিরে ছিলেন না মারাদোনা। কিন্তু তাতে কী? বিশ্বকাপজয়ী তাঁর দলের অনেক ফুটবলার তো ছিলেন। স্থানীয়রা মনে করেন, বিশ্বকাপ হাতে তোলার সঙ্গে সঙ্গে উত্তরসূরিদের মাথার ওপর ওই অভিশাপের বোঝাও চাপিয়ে দিয়েছিল মারাদোনার দল। যা থেকে এখনও মুক্তি মেলেনি মেসিদের।

Tilcara Carnival Diego Maradona Lionel Messi FIFA World Cup 2018 Football Argentina
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy