আউটের আবেদন নাকচ। জো রুটের সঙ্গে কথাকাটাকাটিতে জড়ালেন ইশান্ত শর্মা। ছবি: রয়টার্স
ভারত ৪৫৭ ও ১৪৪-৩
ইংল্যান্ড ৪৯৬
এ ভাবেও জয় হাতছাড়া করা যায়! ভারতীয় পেসাররাই দেখাল।
তিনশো রানের মধ্যেই ন’উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও যে ইংল্যান্ডের শেষ উইকেট জুটির আরও ১৯৮ রান তুলে টেস্ট ইতিহাসে নজির গড়ে ফেলার ঘটনাটা আমার কাছে বিস্ময়কর। শনিবার সকালে ঝাড়া দু’ঘন্টা বল করেও যে একটাও উইকেট ফেলতে পারবে না ভারতের বোলাররা, এও অভাবনীয়। তবে খেলায় যেমন হার-জিত আছে তেমনই অঘটনও আছে। ট্রেন্ট ব্রিজে অঘটনই শেষ করে দিল হার-জিতের সম্ভাবনা।
ভারতের দুর্ভাগ্য যে, ইশান্ত, শামি, ভুবিদের বদান্যতায় অঘটনটা ঘটিয়ে ফেলল ইংল্যান্ডের শেষ দুই ব্যাটসম্যান জো রুট (১৫৪ অপরাজিত) ও জেমস অ্যান্ডারসন (৮১)। এক দিন আগে ব্যাট হাতে নেমে অ্যন্ডারসনকে যা করেছিল শামি ও ভুবনেশ্বর, ঠিক সে ভাবেই এ দিন তা ওদের ফিরিয়ে দিল ইংল্যান্ডের পেসার। জো রুট তো ভাল ব্যাটসম্যান, টেস্টে ৪২-এর কাছাকাছি গড় ওর। ১৭টা টেস্ট খেলে একটা ডাবল সেঞ্চুরিও করে ফেলেছে ২৪ বছর বয়সি ছেলেটা। কিন্তু যে অ্যান্ডারসনের সর্বোচ্চ টেস্ট স্কোর ছিল ৩৪, তার এই ইনিংস সত্যিই অপ্রত্যাশিত।
কিন্তু আগের দিন আশা জাগিয়েও কেন ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারল না ইশান্তরা?
প্রথমত, উইকেট। উইকেটটা এত পাটা হয়ে গিয়েছে যে, বোলারদের জন্য কিছুই নেই। ব্যাটসম্যানদের এই স্বর্গে ভাল বল করা কঠিন। কিন্তু বোলারদের তো সবসময় উইকেটের উপর নির্ভর করলে চলে না।
দ্বিতীয়ত, বোলিংয়ে ধারের অভাব। শামি-র (২-১২৮) বলের গতি নেমে এসেছে ১৩০-এ। যে শামি ১৪০-এর গতিতে প্রায়ই বল করত, সেই শামির এই অধঃপতন দেখে অবাক হচ্ছি। মনে হচ্ছে ও ক্লান্ত। ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে সমীহ আদায় করার মতো বোলিং দেখাতে পারল না কেউ। ইশান্ত (৩-১৫০) বড়জোর কিছু বাউন্সার দিল। কিন্তু রিভার্স সুইং করাতে পারল না সে রকম। বোধহয় ডিউক বলকে রিভার্স সুইংয়ের জন্য তৈরি করে নেওয়াটা তুলনামুলক ভাবে কঠিন বলেই সেটা করতে পারল না। রিভার্স সুইংয়ের জন্য বলকে তৈরি করা ও তা বজায় রাখা যে শিল্প, সেই শিল্প ভারতীয়দের আরও ভাল ভাবে রপ্ত করতে হবে। ভুবি (৫-৮২) এদের মধ্যে কিছুটা হলেও উজ্জ্বল।
তৃতীয়ত, পেসাররা সমানে শর্ট বল দিয়ে যাওয়ায় ওরা অনেক ‘প্রেডিক্টেবল’ হয়ে উঠল। বোলিংয়ে বৈচিত্রের অভাবই এর কারণ।
চতুর্থত, রবীন্দ্র জাডেজার বলে কোনও ঘূর্ণিই দেখা গেল না। এই উইকেটে যদিও সেটা সহজেই করা যায় না। কিন্তু টেস্ট স্তরের একজন স্পিনারের কি এ টুকুও পারার কথা নয়? তা ছাড়া ট্রেন্ট ব্রিজে যা উইকেট, তাতে তো ঘরের মাঠের অনুভূতি হওয়া উচিত ওর, তা-ও কেন হল না, কে জানে। অশ্বিন দলে থাকলে এই সুবিধাটা বোধহয় পেত ভারত।
এ রকম সময়ে শামির বলে ধোনি অবশ্য একটা ক্যাচও ছেড়েছে। ক্যাপ্টেন বোধহয় তখন একটু বেশিই চিন্তিত হয়ে পড়েছিল। এতটাই হতাশ হয়ে পড়েছিল ইশান্ত যে, একটা আউটের আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ার পর জো রুটের সঙ্গে ও ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ল। এতে ইশান্তেরই বেশি ক্ষতি হল। চায়ের পর ভুবি অ্যান্ডারসনকে না ফেরাতে পারলে এই হতাশা আরও বাড়ত।
মোদ্দা কথা হল, ভারতের সামনে প্রথম টেস্টেই জিতে সিরিজে অনেকটা এগিয়ে থাকার যে সুযোগটা এসেছিল, তা হাতছাড়া হল। বেশিরভাগটাই ভারতের বোলারদের দোষে। আর কিছুটা এমন পাটা উইকেটের জন্য। এক দিকে যখন টেস্ট ক্রিকেটকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য বিশেষ পরিকল্পনা করছে আইসিসি, তখন খোদ ইংল্যান্ডের বুকে এমন উইকেট যে টেস্টের পক্ষে মোটেই ভাল বিজ্ঞাপন নয়, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
প্রথম ইনিংসে ৩৯ রানে পিছিয়ে থাকা ভারতকে টেস্টে ফয়সালার সম্ভাবনা ফিরিয়ে আনতে গেলে দ্রুত রান তুলে ইংল্যান্ডকে দান ছেড়ে দিতে হত। কিন্তু ১৪০-এর মধ্যে ধবন (২৯), বিজয় (৫২) ও পূজারাকে (৫৫) হারিয়ে ধাক্কা খেয়ে গেল ভারত। এখন কোহলি (৮ ব্যাটিং) ও রাহানে (১৮ ব্যাটিং) দলকে কতটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, সেটাই দেখার অপেক্ষায় রইলাম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy