হারের হ্যাটট্রিক। ফুটবলারদের মধ্যে ঝামেলা! জোড়া ধাক্কায় তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছে শৃঙ্খলাপরায়ণ কোচের দৃঢ় মানসিকতাও!
‘বিশৃঙ্খল’ ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে যখন আন্তোনিও লোপেজ হাবাস সাংবাদিক সম্মেলনে আসছিলেন, দেখে মনে হচ্ছিল ঘাড়ে করে কোনও শবদেহ বহন করে নিয়ে চলেছেন। ফ্যাকাসে, থমথমে মুখ। বাকরুদ্ধ। যেন সদ্য প্রিয়জনকে হারানোর যন্ত্রণায় ছটফট করছেন আটলেটিকো দে কলকাতা কোচ।
এবং শেষমেশ হাবাস বলেই ফেললেন, ‘‘এ রকম হার সত্যিই হতাশাজনক। টিমের অনেক জায়গায় মেরামতি দরকার। পস্টিগার না থাকাটা একটা ক্ষতি। টিমে এক জন জেনুইন স্ট্রাইকারের অভাব তো আছেই।’’ অথচ ‘সাহসী’ স্প্যানিশ কোচ ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগেও বলেছিলেন, ‘‘কোন ফুটবলার নেই, তা নিয়ে আমি কান্নাকাটি করার লোক নই।’’
বিপক্ষ দশ জন হয়ে যাওয়ার পরেও তাদের কাছে হারতে হবে, বোধহয় ভাবতে পারেননি হাবাসের দল। ম্যাচের পরেই সবার সামনে অর্ণব, বোরহা, নাতোর মধ্যে শুরু হয়ে যায় কথাকাটাকাটি! টানা হারের ধাক্কায় ‘শৃঙ্খলাপরায়ণ’ আটলেটিকো ফুটবলারদের একতায়ও যে চিড় ধরেছে, তা এ দিন যুবভারতীতে স্পষ্ট! যে বিদেশি কোচ সব সময় শৃঙ্খলার মধ্যে নিজের টিমকে বাঁধতে চেয়েছেন, তাঁর সামনেই ফুটবলাররা ঝগড়া করছেন, এই অভাবিত দৃশ্য দেখার পর আর নিজেকেও সামলাতে পারেননি হাবাস। ‘সত্যি বলতে কী, ‘টানা তিন ম্যাচ হারে ফুটবলাররা মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে। ওদের মানসিকতা পাল্টাতে হবে। আর তার জন্য অবশ্যই আমাকেও ওদের পাশে দাঁড়াতে হবে,’’ বলার সময় করুণ শোনাচ্ছিল রাশভারী হাবাসের গলা!
ফুটবলার রবের্তো কার্লোসের বিরুদ্ধে কখনও জেতা হয়নি হাবাসের। বৃহস্পতিবারও হল না। শুধু ফুটবলার কার্লোস নয়, কোচ কার্লোসের কাছেও এ দিন হেরে গেলেন মহাঅভিজ্ঞ কোচ হাবাস। আর শেষ মুহূর্তে গোল পাওয়াটা দিল্লির কাছে যে বড় প্রাপ্তি, মেনে নিলেন কিংবদন্তি ব্রাজিলীয় ফুটবলারও। ম্যাচর পর হাসতে হাসতে বলে দিলেন, ‘‘এটা আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ জয়। গোলটা যখনই আসুক না কেন, তিন পয়েন্ট পাওয়াটাই আসল ব্যাপার।’’
মালুদা, গুস্তাভো স্যান্টোস, আনাসদের শিবিরে যখন উৎসবের মেজাজ, যখন হইহই করে যুবভারতী থেকে বেরিয়ে বাসে উঠছিলেন দিল্লির ফুটবলাররা, তখন থমথমে মুখে মাথা নিচু করে সাংবাদিকদের এড়িয়ে কার্যত পালাচ্ছিলেন গ্যাভিলান, জুয়েল, বোরহারা। হিউমকে তো কোনও প্রশ্ন করতে গেলেই প্রায় খেপে উঠছিলেন। স্ত্রী, কন্যাদের সামনে এ দিন যে তিনি চূড়ান্ত ব্যর্থ।
আটলেটিকোর হারের হ্যাটট্রিক প্রসঙ্গে কাতর গলায় হাবাসের অজুহাত, ‘‘লারা, আরাতা, হিউম, পস্টিগা, ভালদো— এতগুলো গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারকে চোটের জন্য পেলামই না। এ বার চোট সমস্যা এত বেশি যে, একই টিম টানা দু’টো ম্যাচেও খেলাতে পারছি না। আমাদের টিমে এখন অনেক সমস্যা।’’
বাহাত্তর ঘণ্টার মধ্যে নিকোলাস আনেলকার মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে কি এত সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব? এই এক বারই মনে হল, নিকষ অন্ধকারে দাঁড়িয়েও আলোর পথযাত্রী হতে চাইছেন কলকাতার স্প্যানিশ কোচ। ‘‘এখনও অনেক ম্যাচ বাকি। অনেক পয়েন্ট পড়ে আছে পাওয়ার জন্য। সেমিফাইনালের আশা তো এখনও রয়েছে,’’ বলে দিলেন হাবাস।