Advertisement
০৪ মে ২০২৪

মুরলীর মতো ওপেনার পেতে আইপিএল-ব্যর্থতার মাশুল দিতেও রাজি

প্রায় আট বছর আগের কথা। এক সর্বভারতীয় টুর্নামেন্টের জন্য দল গড়ার দায়িত্বে ছিলাম। সেই বছরই তামিলনাড়ুর হয়ে প্রথম মাঠে নেমেছিল ছেলেটা। তার পর সারা বছরই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছিল। ছেলেটি সম্পর্কে তখন খোঁজ খবর নিই দীনেশ কার্তিকের কাছে। ও তখন ছেলেটি সম্পর্কে খুব প্রশংসা করেছিল। সে-ই আজকের মুরলী বিজয়।

দীপ দাশগুপ্ত
শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৫ ১৮:৩২
Share: Save:

প্রায় আট বছর আগের কথা। এক সর্বভারতীয় টুর্নামেন্টের জন্য দল গড়ার দায়িত্বে ছিলাম। সেই বছরই তামিলনাড়ুর হয়ে প্রথম মাঠে নেমেছিল ছেলেটা। তার পর সারা বছরই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছিল। ছেলেটি সম্পর্কে তখন খোঁজ খবর নিই দীনেশ কার্তিকের কাছে। ও তখন ছেলেটি সম্পর্কে খুব প্রশংসা করেছিল।
সে-ই আজকের মুরলী বিজয়।
সে-ই প্রথম মুরলীকে দেখা। ওর সঙ্গে কাজ করা। তখনই ওকে দেখে মনে হয়েছিল, টেকনিকে নিখুঁত, মানসিকতায় আগ্রাসী আর ব্যক্তিত্বে অসাধারণ। কয়েক মাস পরেই ভারতীয় দলে ডাক পেল এবং তার পর থেকেই সাফল্য। শুরুর দিকটা বেশ ভাল খেলছিল। খেলারই কথা। কিন্তু তার পরই ওর ক্রিকেট জীবনে এমন একটা মোচড় এল যা প্রায় প্রত্যেক উঠতি ক্রিকেটারের জীবনেই আসে।
টি টোয়েন্টি ক্রিকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে গিয়েই বাধল বিপত্তি।

হঠাৎ দেখা গেল ওর খেলায় বদল এসেছে। প্রতিটা বলে শট খেলার প্রবণতা সাঙ্ঘাতিক বেড়েছে। এমনকী বাইরের বলগুলোও মেরে ওড়াতে চাইছে। টেস্টে ওপেন করে এটা বরাবর উপলব্ধি করেছি যে, বল ছাড়তে জানাটা ততটাই জরুরি, যতটা জরুরি খেলতে জানা। ধৈর্য, ঠান্ডা মাথা ও স্পষ্ট ধারণা রাখাই টেস্টে ওপেন করতে নেমে সফল হওয়ার উপায়। এই জায়গাটাতেই বিজয় মার খেয়ে গিয়েছিল তখন। টি টোয়েন্টির সঙ্গে মানিয়ে নিতে গিয়ে ওর ব্যাটিংয়ের যে ক্ষতি হল, তার প্রভাব পড়ল গিয়ে টেস্টেও। এবং টেস্টে নিজের জায়গাটা খোয়াল।

দল থেকে এই বাদ পড়াটাই ওর ক্রিকেট জীবনে শাপে বর হয়ে ওঠে বলতে পারেন। ভারতীয় দলের বাইরে থাকার সময়েই বোধহয় ও বুঝতে পারে কোথায় ওর ভুল হচ্ছে আর ওকে কী কী শোধরাতে হবে। তার পরই আমরা দেখলাম ‘মুরলী বিজয় ভার্সান টু’-কে। আরও ঠান্ডা, আরও রিল্যাক্সড ও আত্মবিশ্বাসী মুরলী বিজয়কে। অস্ট্রেলিয়ায় ওর ব্যাটিং দেখা এক দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা। ওকে কোন কোন বিষয়গুলোর উপর গুরুত্ব দিতে হবে, তা যেন ওর কাছে জলের মতো পরিষ্কার। এ বার ও প্রমাণ করল, কোন বল ছাড়া উচিত, শুধু লাইন নয়, লেংথ বিচার করেও, তা ও খুব ভাল করে বুঝে নিয়েছে। অসীম ধৈর্য নিয়ে লুজ বলের জন্য অপেক্ষা করা এবং লুজ বল পেলে তার ক্ষেত্রে যতটা নির্দয় হওয়া যায়, ততটাই হওয়ার মতো আগ্রাসন— এ সবই ফিরে এসেছে ওর ব্যাটিংয়ে। এমনটা তখনই হয়, যখন কোনও ব্যাটসম্যান মানসিক ভাবে নিখুঁত জায়গায় থাকে। দলের বাইরে থাকার সময়ই ও নিজেকে নিজের জায়গায় ফিরিয়ে আনার এই কাজটা করেছে বলেই আমার বিশ্বাস।

শুক্রবার ফতুল্লায় ফের সেই ব্যাটিংই দেখাল মুরলী বিজয়। আপাতত ও নিজেকে যে জায়গায় নিয়ে চলে এসেছে, তাতে ওকে টেস্ট দল থেকে বাদ দেওয়া অসম্ভব। লক্ষ্য করে দেখবেন, টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে যত ভাল দল এসেছে, তাদের ওপেনিং ব্যাটসম্যান ও ওপেনিং বোলারদের জুটি ছিল অসাধারণ। মুরলী বিজয় ভারতের টেস্ট দলের ওপেনিং জুটির অর্ধেকটা নিশ্চিত করে দিয়েছে।

এ জন্য ও হয়তো আইপিএলে ও তেমন ভাল পারফরম্যান্স দেখাতে পারেনি। এতে আমি অবাক নই, উদ্বিগ্নও নই। একজন অসাধারণ টেস্ট ওপেনারকে পেতে এই মাশুল দিতে আমরা রাজি।

এই সংক্রান্ত আরও খবর...

ঢাকার ডায়েরি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bd
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE