Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বিশেষ কোর্টের জটে কুণালদের হাজিরা-বিভ্রান্তি

সিবিআইয়ের দায়ের করা মূল সারদা মামলার যাবতীয় ‘কেস রেকর্ড’ বা নথি বারাসত থেকে আলিপুর আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কুণাল ঘোষ। ফাইল চিত্র।

কুণাল ঘোষ। ফাইল চিত্র।

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৫:০৪
Share: Save:

অভিযুক্ত সাংসদ-বিধায়কদের মামলা চালানোর জন্য আলাদা আদালত হয়েছে বারাসতে। কিন্তু সেই এমপি-এমএলএ আদালতে জনপ্রতিনিধিদের হাজিরা নিয়ে বিভ্রান্তি এখন চরমে। এবং পরিস্থিতিটা জটিল হয়েছে কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের মামলাকে ঘিরেই।

সিবিআইয়ের দায়ের করা মূল সারদা মামলার যাবতীয় ‘কেস রেকর্ড’ বা নথি বারাসত থেকে আলিপুর আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বারাসতের বদলে ২৪ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার সারদা মামলায় অভিযুক্ত সকলকে তাই ডেকে পাঠানো হয়েছে আলিপুর জেলা জজের আদালতে। তাঁদের মধ্যে জেলবন্দি সুদীপ্ত সেন, দেবযানী মুখোপাধ্যায়েরা রয়েছেন, আছেন প্রাক্তন চার সাংসদ-বিধায়ক সৃঞ্জয় বসু, মাতঙ্গ সিংহ, কুণাল ঘোষ ও মদন মিত্র। এঁরা এত দিন একসঙ্গে বারাসতের বিশেষ এমপি-এমএলএ আদালতে হাজির হচ্ছিলেন।

শুধু সিবিআইয়ের মামলা নয়, অর্থ লগ্নি সংস্থা সারদার আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে রাজ্য পুলিশের যে-সব মামলা চলছে, (যেখানে মূলত কুণাল অভিযুক্ত), সেগুলিও বারাসত থেকে সংশ্লিষ্ট আদালতে ফেরত পাঠানো হবে বলে জানান কুণালের আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তী। এর ফলে কুণালকে আবার হাওড়া, ব্যাঙ্কশাল, আলিপুর, বিধাননগর, এমনকি জলপাইগুড়িতে ছুটতে হবে। মদনের আইনজীবী গোপাল হালদার জানান, প্রাক্তন মন্ত্রীর মামলা বারাসত থেকে আলিপুরে চলে আসায় তাঁদের সুবিধা হবে। কারণ, আলিপুর তাঁর এবং মদন মিত্র— দু’জনেরই বাড়ির কাছে।

বিভ্রান্তির সূত্রপাত ১৭ সেপ্টেম্বর। সে-দিন সকালে বারাসতের বিশেষ আদালতে প্রথমে রাজীবের আগাম জামিনের আবেদন জানান তাঁর আইনজীবী। পরে রাজীবের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার আর্জি জানায় সিবিআই। ওই আদালতের বিচারক সঞ্জীব দারুকা দু’টি ক্ষেত্রেই জানিয়ে দেন, তাঁর হাতে ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা নেই। তাই তাঁর পক্ষে আগাম জামিন দেওয়া বা নাকচ করা সম্ভব নয়। গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়েও তিনি কোনও নির্দেশ দিতে পারেন না। বিচারক বলেন, ‘‘কাউকে গ্রেফতার করে আমার কাছে আনলেও আমি তাঁকে পুলিশ বা জেল, কোনও হেফাজতেই পাঠাতে পারি না।’’

অথচ সিবিআইয়ের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ সারদা মামলা আরসি৪ (রেগুলার কেস) এবং আরসি৬-এর যাবতীয় নথি তখনও ওই বিচারকের আদালতে ছিল। ফলে সেই মামলায় কোনও অগ্রগতি হলে তা ওই আদালতকেই জানানোর কথা। বিচারকের কথা শুনে কার্যত অসহায় দেখায় সিবিআইয়ের আইনজীবীদের। প্রশ্ন ওঠে, এর মধ্যে রাজীব যদি গ্রেফতার হয়ে যেতেন, তাঁকে কোন আদালতে হাজির করা হত? সে-দিন এই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর ছিল না সিবিআইয়ের কাছে।

সে-দিনই কিছু পরে বিচারক দারুকা জানান, সারদার আরসি৪ মামলার নথি তিনি আলিপুরে ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এ বার ওই মামলার কোনও অগ্রগতি হলে, কাউকে গ্রেফতার করলে তা আলিপুরে আদালতে গিয়ে জানাতে হবে।

বছর দুয়েক আগে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, বিধায়ক-সাংসদদের বিরুদ্ধে সব মামলা রাজ্যের নির্দিষ্ট একটি আদালতেই শুনতে হবে। সেই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্ট একটি প্রশাসনিক নির্দেশ জারি করে। তাতে বলা হয়, এমপি-এমএলএদের মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ হবে বারাসতে। যার অর্থ, মামলার চার্জ গঠনের পরে তা স্থানান্তরিত হবে এই আদালতে। কিন্তু চার্জ গঠনের আগেই পশ্চিমবঙ্গে সারদা মামলায় যেখানে যত বিধায়ক-সাংসদ অভিযুক্ত ছিলেন, তাঁদের মামলাগুলি তড়িঘড়ি বারাসতে স্থানান্তরিত হতে শুরু করে। শুধু সারদা নয়, কোনও বিধায়ক মারপিটের মামলায় অভিযুক্ত হলেও তাঁর মামলা যেতে থাকে বারাসতে। এত দিন শুনানি চলছিল। কারণ, কোনও মামলাতেই নতুন করে গ্রেফতারের কোনও সম্ভাবনা দেখা যায়নি। এ বার সিবিআই রাজীবকে গ্রেফতারের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হতেই আইনি সঙ্কট উপস্থিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE