দেহ উদ্ধারের পর ঘটনাস্থলের ছবি। ইনসেটে নিহত পার্থ চক্রবর্তী। —নিজস্ব চিত্র
হাত-পা-মাথা কাটা অবস্থায় একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এক কর্মীর দেহ উদ্ধার হল হাওড়ার ডোমজুড় থানা এলাকার মাকড়দহে।
পার্থ চক্রবর্তী (২৭) নামে ওই যুবক নদিয়ার চাকদহের বাসিন্দা হলেও হাওড়ার সলপের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে লোন রিকভারি এজেন্টের চাকরি করতেন। ব্যাঙ্কের উপর তলাতেই থাকতেন তিনি।
বুধবার দুপুরে হাওড়ার মাকড়দহের রাঘবপুরে এক ঝোপের পাশে একটি বস্তা দেখতে পান স্থানীয়েরা। তাঁদের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ এসে বস্তা খুলে একটি দেহ উদ্ধার করে। উদ্ধার হওয়া ওই দেহের হাত, পা এবং মাথা কাটা ছিল। ছিন্নবিচ্ছিন্ন ওই দেহ প্রথমে শনাক্ত করা যায়নি।
অন্য দিকে, নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও পার্থ ব্যাঙ্কে না ফেরায় পুলিশে নিখোঁজ ডায়েরি করেন কর্তৃপক্ষ। বেসরকারি ওই ব্যাঙ্কের তরফে পুলিশকে জানানো হয়, বুধবার পাঁচটি জায়গা থেকে টাকা নিয়ে ফেরার কথা ছিল পার্থের। ফিরতে দেরি হচ্ছে দেখে তাঁরা পার্থের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্ত তাঁর মোবাইলের সুইচ অফ ছিল।
আরও পড়ুন: অভিযুক্ত ওসি গ্রেফতার না হলে লাগাতার কর্মবিরতির হুমকি ডাক্তারদের
পুলিশ এর পর উদ্ধার হওয়া মুণ্ডহীন ছিন্ন বিচ্ছিন্ন দেহ দেখায় পার্থের সহকর্মীদের। তাঁরা প্রথমে সেই দেহ শনাক্ত করতে পারেননি। পরে রাতে পার্থর পরিবারকে খবর দেওয়া হয়। তাঁরাও প্রথমে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত পার্থের দেহে থাকা অন্তর্বাসের ট্যাগ, পৈতে দেখে পরিবার এবং সহকর্মীরা শনাক্ত করেন তাঁকে। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, “পার্থর পরিচয় যাতে জানা না যায় হত্যাকারী সে জন্য তাঁর ধড় থেকে মাথা আলাদা করে দিয়েছিল। পোশাক খুলে নিয়েছিল। এমনকি শরীরের যেখানে তিল ছিল, সেই তিলও কেটে দেয়।” শেষ পর্যন্ত পার্থর থাকার জায়গায় পাওয়া অন্তর্বাসের সঙ্গে পরনে থাকা অন্তর্বাস এবং পৈতে দেখে শনাক্ত করা হয় তাঁকে।
কিন্তু কারা খুন করল এই ব্যাঙ্ক কর্মীকে? তদন্ত করতে গিয়ে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের হাতে।
ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের দাবি, পার্থ বুধবার পাঁচটির মধ্যে চারটি জায়গা থেকে টাকা নিয়ে এসেছিলেন। সেই টাকার পরিমান প্রায় তিন লাখ। সেই টাকা পার্থর দেহের সঙ্গে মেলেনি। তদন্তকারীদের দাবি, বুধবার দুপুর একটা নাগাদ পার্থর ফোন বন্ধ হয়ে যায়। কল রেকর্ডস থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে, শেষ ফোন তিনি করেছিলেন এক মহিলাকে। সময়টা ১২টা ৫০ মিনিট। অর্থাৎ মোবাইল বন্ধ করার আগেই। সেই মহিলার পরিচয় জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।
আরও খবর: খাস কলকাতায় ভেজাল গুঁড়ো দুধের রমরমা কারবার, ইবি-র অভিযানে পর্দাফাঁস
গোটা ঘটনা থেকে একটি বিষয়ে তদন্তকারীরা নিশ্চিত যে, পার্থর খুনের পেছনে রয়েছেন খুব পরিচিত কেউ। তা না হলে অপরিচিত কোনও আততায়ীর পক্ষে জানা সম্ভব নয় পার্থর দেহে কোথায় তিল আছে। সেই সঙ্গে তদন্তকারীরা মনে করছেন, যেখানে তাঁর দেহ পাওয়া গিয়েছে তার আশে পাশেই কোথাও তাঁকে খুন করা হয়েছে।
তদন্তকারীরা এখনও খুনের মোটিভ সম্পর্কে নিঃসন্দেহ নন। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, “পার্থের সঙ্গে টাকা ছিল। সেই টাকা লুঠের জন্য খুন। এটাও হতে পারে।” পার্থর পরিবারের সন্দেহ, কোনও সহকর্মী এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। পুলিশ সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিতে পারছে না। সেই সঙ্গে তাদের ভাবাচ্ছে সেই রহস্যময়ী মহিলার ভূমিকাও। কারণ সেই মহিলার সঙ্গেই পার্থ শেষ কথা বলেছেন ফোনে। ওই মহিলার হদিশ পেলে গোটা রহস্য পরিষ্কার হবে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy