বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। —ফাইল চিত্র
লেখক অনেক দিন ধরেই অন্তরালে। শারীরিক অসুবিধার সঙ্গে যুদ্ধ করেই যুদ্ধ নিয়ে তাঁর পড়াশোনা চলেছে বছরখানেকের বেশি। তার পরে আত্মপ্রকাশ করেছে ‘নাৎসি জার্মানির জন্ম ও মৃত্যু’। পুজো শুরু হতেই পুজোর স্টলে সে বই নিঃশেষিত! যেমন হয়েছিল দু’বছর আগের পুজোয় তাঁর ‘ফিরে দেখা’।
দু’বছর আগেকার ঘটনার সঙ্গে এখনকার অবশ্য ফারাক অনেক। ‘ফিরে দেখা’ ছিল এ রাজ্যের বামফ্রন্ট সরকারের কাজের আত্মমূল্যায়ন। নাৎসি জার্মানি সেই তুলনায় দূর গ্রহের বস্তু! লেখক বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তখনও দলীয় দফতরে নিয়মিত আসতেন। দলীয় সহকর্মী এহং ঘনিষ্ঠ জনেদের সঙ্গে তাঁর আলাপচারিতা ছিল। এমনই এক আলাপচারিতায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘এ বার একটা বড় কাজে হাত দেব!’’ সেই ‘কাজ’ যে পুজোর মরসুমে উৎসাহী পাঠকের নজর কাড়ছে, তাতে খুশি সিপিএম নেতারা।
কেউ কেউ বলছেন, জনসমক্ষে না থাকা বুদ্ধবাবুকে নিয়ে কৌতূহলই তাঁর বইয়ের প্রতি বাড়তি আগ্রহের অন্যতম কারণ। আর আগ্রহ যাতে বাড়ে, তার জন্য হাতে-কলমে পরিশ্রম করছেন বিমান বসুর মতো অগ্রজ সহকর্মী। সিপিএমের এই বর্ষীয়ান পলিটব্যুরো সদস্য পুজো শুরুর তিন দিনে যাদবপুর ৮বি, কলেজ স্ট্রিট, বাগবাজারের মার্ক্সীয় সাহিত্য বিপণির স্টলে বইয়ের থাক থেকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বইটা বার করে জনতার হাতে তুলে দিয়েছেন। বিক্রি করেছেন অন্যান্য বইও। বিমানবাবুর কথায়, ‘‘বুদ্ধ চিন্তায় ছিল, পুজোর মধ্যে বইটা শেষ হবে কি না? আমি গিয়েছিলাম ওর কাছে। বলল, পাণ্ডুলিপি পৌঁছে গিয়েছে প্রকাশকের কাছে। এখন তো ভালই বিক্রি হচ্ছে সেই বই।’’ আপনি পড়েছেন? বিমানবাবুর সহাস্য মন্তব্য, ‘‘এখনও পড়ে উঠতে পারিনি। বইয়ের স্টলের কাজগুলো আগে শেষ করি।’’ বইয়ের প্রাক্-কথনে কিছু তথ্যের অসঙ্গতি শুধরে নিয়ে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় মুদ্রণের কাজ।
বই বেচতে বরাবরই ভালবাসেন বিমানবাবু। আর এ বার শারদীয়ায় সিপিএমের বই বিপণি এবং বিপণন— দু’টোর অঙ্কই বেড়েছে বলে তিনি স্বস্তিতে। বড় স্টলগুলোয় দিনে গড়ে প্রায় ৩৫-৪০ হাজার টাকার বই বিকোচ্ছে। কলকাতায় সিপিএমের স্টল হয়েছে ১০৫টা, গোটা রাজ্যে হাজারের বেশি। ভবানীপুরে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির কাছাকাছি ২৩ পল্লিতে একটি স্টল করার অনুমতি পুলিশ দেয়নি, বেলেঘাটায় একটি স্টল ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বিমানবাবু বলছেন, ‘‘কিছু মানুষ এখনও আছেন, যাঁরা পুজোয় বই কেনার জন্য টাকা বরাদ্দ রাখেন। তাঁদের হাতে বই তুলে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের নিতেই হবে।’’
রাজনীতির জমিতে যেমন, পুজোর আবহেও তেমন দৃশ্যমানতা বাড়িয়েছে গেরুয়া শিবির। শহরে সঙ্ঘ-বিজেপির স্টল হয়েছে গোটা পঞ্চাশ, সারা রাজ্যে প্রায় ৫০০। দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিংহেরা বলছেন, তাঁদের ‘জাতীয়তাবাদী চিন্তানায়ক’দের লেখার পাশাপাশি জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) নিয়েও স্টলে প্রচার চলছে। আবার দৃশ্যতই স্টলের সংখ্যা বেড়েছে শাসক দল তৃণমূলের মুখপত্রের। দলের মহাসচিব ও মুখপত্রের সম্পাদক পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এ বার পুজোর আগে একটু সময় পাওয়া গিয়েছিল। গুছিয়ে নিতে সুবিধা হয়েছে।’’ কালীঘাটের একটি সংস্থা এবং কলেজ স্ট্রিটের একটি নামী প্রকাশনা সংস্থার কাছ থেকেই বই যায় তৃণমূলের স্টলে। এ বার তার সঙ্গে যোগ হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ও সুর করা গানের সিডি।
পার্থবাবুর সংযোজন, ‘‘সকলে সকলের মতো বইয়ের স্টল করেছে, এটাই তো ভাল ব্যাপার।’’ সহাবস্থান থেকেই অক্ষরের লড়াই এ বার শারদীয়া কলকাতার প্রাপ্তি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy