Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

শিক্ষক মোবাইলে বুঁদ, ছাত্রী শিখছে ‘বৃত্ত গোল গোল’...

ইসলামপুরের দাড়িভিটের ঘটনার আগেই স্কুল পরিদর্শনে জোর দিয়েছে স্কুলশিক্ষা দফতর। দাড়িভিটের ঘটনার পরে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশ মতো স্কুল পরিদর্শন শুরু করেছেন খোদ শিক্ষাসচিব।

অলঙ্করণ: তিয়াসা দাস।

অলঙ্করণ: তিয়াসা দাস।

সুপ্রিয় তরফদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৮ ০২:৩৯
Share: Save:

নবম শ্রেণিতে অঙ্কের ক্লাস চলছে। পরিমিতি করাচ্ছেন শিক্ষিকা। ছাত্রীরা কেমন পড়াশোনা করছে দেখার জন্য ক্লাস চলাকালীনই ভিতরে ঢুকল পরিদর্শক-দল। পরিচয় পর্ব সেরে দলের এক সদস্য ছাত্রীদের প্রশ্ন করলেন, ‘‘বৃত্তের সংজ্ঞা কেউ বলতে পারবে?’’

প্রশ্ন শুনে মুখ চাওয়া-চাওয়ি শুরু করল ছাত্রীরা। কারও কারও আবার মাথা নিচু। শিক্ষিকার মাথায় তখন প্রায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। কিছু ক্ষণ পরে এক ছাত্রী সাহস করে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘‘ওটা হল গোল গোল জিনিস! এটুকুই জানি।’’ অনেক চেষ্টা করেও আর এক ধাপও এগোতে পারল না সে। প্রশ্নকর্তা বললেন, ‘‘বইয়ের ভাষা ছেড়ে নিজের ভাষায় বললেও হবে।’’ কিন্তু ওই ছাত্রীর মুখ দিয়ে আর টুঁ শব্দ বেরোল না।

একই ভাবে অন্য একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে ভূগোলের ক্লাস চলার সময়ে হাজির হয়েছিলেন পরিদর্শকেরা। দলের এক সদস্য ছাত্রদের প্রশ্ন করেন, ‘‘আহ্নিক ও বার্ষিক গতি কী, জান?’’ সটান উঠে দাঁড়িয়ে এক ছাত্রের উত্তর, ‘‘আগেরটা বইয়ে আছে বলে মনে পড়ছে না। কিন্তু বার্ষিক গতিটা খুব চেনা।’’ শিক্ষকের মুখ থেকে তখন আর কথা সরছে না। পরিদর্শক-দলে থাকা স্কুলশিক্ষা দফতরের এক সদস্য প্রশ্নকর্তাকে বললেন, ‘‘এ বার থামুন। আর প্রশ্ন করবেন না। মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে।’’ সম্প্রতি দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন স্কুল ঘুরে এমনই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলেন পরিদর্শকেরা।

ইসলামপুরের দাড়িভিটের ঘটনার আগেই স্কুল পরিদর্শনে জোর দিয়েছে স্কুলশিক্ষা দফতর। দাড়িভিটের ঘটনার পরে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশ মতো স্কুল পরিদর্শন শুরু করেছেন খোদ শিক্ষাসচিব। গত শনিবার কলকাতার বেশ কয়েকটি স্কুল ঘুরে দেখেন তিনি। সেখানে এমন অভিজ্ঞতা না হলেও দক্ষিণ ২৪ পরগনার ওই অভিজ্ঞতায় হতাশ জেলা স্কুলশিক্ষা দফতর।

সূত্রের খবর, জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) নজরুল হক সিপাইয়ের নেতৃত্বে একটি দল গত শুক্র এবং শনিবার বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শন করে। ওই দলে আছেন বিকাশ ভবনের কর্তারাও। দলের এক সদস্য জানান, অধিকাংশ স্কুলেই ন্যূনতম ‘লার্নিং আউটকাম’ নেই। প্রসঙ্গত, ক্লাসে শিক্ষক পড়ানোর পরে পড়ুয়ারা যা শেখে তা-ই লার্নিং আউটকাম। ওই সদস্যের কথায়, ‘‘যে ক্লাসে যে বিষয়টি পড়ানো হচ্ছে, তার সম্পর্কে কোনও ধারণাই নেই ছাত্র বা ছাত্রীর। সেটাই সবচেয়ে দুঃখের।’’ অথচ, ওই পড়ুয়াদের জিজ্ঞাসা করে জানা গিয়েছে তারা একাধিক গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ে।

এর পরেই সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে পরিদর্শক-দল। কী ভাবে লার্নিং আউটকাম বাড়ানো যায়, সেই পরামর্শ দেওয়া হয়। স্কুলগুলিকে নিয়ে রিপোর্টও তৈরি করছে দফতর। স্কুলে পঠনপাঠনের মান উন্নত করার জন্য বারবার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষাসচিব। এর জন্য শিক্ষকদের বাড়তি দায়িত্বও নিতে বলেছেন তাঁরা। কিন্তু তার পরেও বহু স্কুলে এই অবস্থা। তবে তার মধ্যেও কিছু স্কুলে সন্তোষজনক ছবি দেখা গিয়েছে বলে জানান ওই দলের এক সদস্য।

দলের আর এক সদস্যের কথায়, ‘‘অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, ক্লাসের মধ্যেই শিক্ষকেরা মোবাইলে বা হোয়াটসঅ্যাপে বুঁদ রয়েছেন।’’ সে কারণে ক্লাসে মোবাইল নিষিদ্ধ করার জন্য দ্রুত নির্দেশিকা জারি করা হবে বলেও জানান তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Education WBBSE
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE