জনজীবন স্বাভাবিক করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ভাটপাড়া নিয়ে উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন সূত্রে খবর, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ভাটপাড়া এবং সংলগ্ন এলাকার জনজীবন স্বাভাবিক করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। দ্রুত এবং কড়া হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার পাশাপাশি তিনি দাগী অপরাধীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে বলেছেন পুলিশকে। বৃহস্পতিবার বিকেলেই সরিয়ে দেওয়ার হয়েছে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের কমিশনার তন্ময় রায়চৌধুরীকে। তাঁর জায়গায় নিয়ে আসা হয় মনোজ বর্মাকে। তিনি দার্জিলিঙের আইজি পদে ছিলেন।
অন্য দিকে উত্তেজনা ও অশান্তি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের তরফে সমস্ত সার্ভিস প্রোভাইডারকে নির্দেশিকা পাঠানোর পরই কার্যত ব্যারাকপুর মহকুমা জুড়ে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে পরিষেবা সংস্থাগুলি।
গত ১৯ মে, ভাটপাড়া বিধানসভার উপনির্বাচনের দিন থেকেই অশান্তি দানা বাঁধছিল ভাটপাড়া এলাকায়। ভোটের দিনও তৃণমূল-বিজেপি কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। হামলা হয় পুলিশের উপরও। এর পর থেকে দফায় দফায় অশান্তি লেগেই ছিল ভাটপাড়া, জগদ্দল এবং কাঁকিনাড়া এলাকায়।
এরই মধ্যে ওই এলাকায় রাজনৈতিক সমীকরণেরও অনেক পরিবর্তন হয়। ব্যারাকপুর লোকসভা এবং ভাটপাড়া বিধানসভায় শাসক দল তৃণমূলকে হারিয়ে জেতেন সদ্য বিজেপিতে যাওয়া অর্জুন সিংহ এবং তাঁর ছেলে পবন। কাউন্সিলরদের একটা বড় অংশ দলবদল করে অর্জুনের হাত ধরে বিজেপিতে নাম লেখানোয় শাসক দলের হাতছাড়া হয় ভাটপাড়া, নৈহাটি, কাঁচড়াপাড়া, হালিশহর এবং গারুলিয়া পুরসভা।
আরও পড়ুন: মৃত্যু বেড়ে ২, বোমা-গুলির লড়াইয়ে উত্তপ্ত ভাটপাড়া নিয়ে বৈঠক নবান্নে, পৌঁছলেন ডিজি
গোটা শিল্পাঞ্চলেই কোণঠাসা হয়ে পড়ে শাসক দল। এলাকা দখলে রাখতে শুরু হয় সংঘর্ষ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকা দখলকে ঘিরে খারাপ হতে থাকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। প্রকাশ্যে রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াতে শুরু করে সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা। গত এক মাসে গুলির লড়াই, বোমাবাজি এবং সংঘর্ষে মৃত্যুর ঘটনা নিত্য নৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়ায় শিল্পাঞ্চলে, অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
এই পরিস্থিতিতে জগদ্দল থানা ভেঙে নতুন ভাটপাড়া থানা তৈরি করতে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। ভাটপাড়ার একাধিক হিংসার মামলার তদন্তের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় সিআইডির হাতে। কিন্তু তাতে নিয়ন্ত্রণে আসার বদলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে থাকে। র্যাফ-কমব্যাট ফোর্সের নজরদারি, তল্লাশি এবং রুট মার্চ সত্ত্বেও বোমাবাজি, গুলির লড়াই চলতেই থাকে।
বুধবার রাত থেকে ফের অশান্তি দানা বাঁধতে শুরু করে এলাকায়। যার তীব্র বহিঃপ্রকাশ ঘটে বৃহস্পতিবার সকালে। উদ্বোধনের আগেই ভাটপাড়া নতুন থানার প্রায় সামনেই দেড় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে দলে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বোমা-গুলির ভয়ঙ্কর লড়াই শুরু হয়। প্রাণ যায় দুই যুবকের। বোমা এবং গুলির আঘাতে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন পাঁচ জন।
আরও পড়ুন: গুজরাত দাঙ্গায় মোদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা সেই আইপিএস অফিসারের অন্য মামলায় যাবজ্জীবন
নবান্ন সূত্রে খবর, ভাটপাড়ার পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী এ দিন দুপুরে বিশেষ বৈঠক ডাকেন। মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, রাজ্য পুলিশের অধিকর্তা, এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) এবং পদস্থ পুলিশ কর্তাদের ওই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী অবিলম্বে ভাটপাড়া, জগদ্দল এবং কাঁকিনাড়া এলাকায় শান্তি ফেরানোর নির্দেশ দেন। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য গোয়েন্দা বিভাগ এ দিন তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে যে, প্রচুর বহিরাগত দুষ্কৃতী ঘাঁটি তৈরি করেছে ভাটপাড়া এলাকায়। সেখানে জমা করা হয়েছে প্রচুর পরিমাণে বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র। স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘বহিরাগতদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে এলাকার কিছু দুষ্কৃতী।”
মুখ্যমন্ত্রী বহিরাগতদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে দাগী অপরাধীদেরও গ্রেফতার করতে বলেছেন। পুলিশেরই একটা অংশের মতে, মনোজ বর্মা এর আগে সাফল্যের সঙ্গে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে কাজ করেছেন। পাশাপাশি মাওবাদী দমন এবং দার্জিলিঙে বিমল গুরুঙের বাহিনীকে ‘ঠান্ডা’ করতেও তাঁর ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। সেই কারণেই এই পরিস্থিতিতে তাঁর উপর ভরসা করছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy