চিরুনি তৈরির কাজ চলছে।
কাঁচামাল আর উপযুক্ত বাজারের অভাবে মার খাচ্ছে গরু-মোষের শিং থেকে চিরুনি, লাঠি-সহ শৌখিন জিনিস তৈরির কুটিরশিল্প।
এক সময় বাগনানের বাকসি এলাকার দেউলগ্রামে কয়েকশো পরিবার এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু এখন মেরেকেটে খান দশেক পরিবারও এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত নেই। শিল্পীদের দাবি, যদি এই অবস্থা চলতে থাকে আগামী দিনে ওই এলাকায় এই কুটিরশিল্পটি লোপ পাবে। শিল্পটি বাঁচিয়ে রাখার জন্য শিল্পীরা জেলা শিল্প দফতর থেকে কোনও সাহায্য বা পরামর্শ পান না বলেও অভিযোগ।
এ ব্যাপারে জানতে জেলা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতরের আধিকারিক অশোক সিংহরায়কে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত রয়েছি। পরে ফোন করুন।’’ পরে বহু বার চেষ্টা করা হলেও তিনি আর ফোন ধরেননি। জবাব আসেনি এসএমএসের।
এলাকার শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, মূলত মোষ ও গরুর শিং থেকে চিরুনি, পিঠ চুলকানোর জন্য নকল হাত, লাঠি, মহিলাদের জন্য কানের অলঙ্কার তৈরি করতেন তাঁরা। এ ছাড়া, ঘর সাজানোর জন্য নকল চিংড়িমাছ, হরিণ, নানা ফল-সহ নানা ধরনের রকমারি শৌখিন জিনিস তৈরি করতেন। কলকাতা বা উলুবেড়িয়া থেকে তারা কাঁচামাল আনেন। পরে শিংগুলোকে যন্ত্রের সাহায্যে গরম করে চ্যাপ্টা বানানো হয়। সেগুলো বিভিন্ন ধরনের ছাঁচে ফেলে মাপে কাটা হয়। প্রয়োজনীয় নকশা এবং পালিশ করে বাজারে বিক্রির উপযোগী বানানো হয়।
বছর সাত-আট আগে পর্যন্ত এই ব্যবসার রমরমা ছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি প্রতিকূল। কারণ, কাঁচামাল ও উপযুক্ত বাজারের অভাব। তপন চন্দ্র নামে এক ব্যবসায়ী জানান, পাঁচশোটি নকল হাত তৈরি করতে অন্তত একশো কিলোগ্রাম কাঁচা মাল লাগে, আগে যার দাম ছিল প্রতি কেজি ২০ টাকা। সে সময় বাজারে প্রতিটি নকল হাত বিকোত ২০ টাকা করে। এখন কমপক্ষে কেজিপিছু ১০০ টাকা দরে কাঁচামাল মিলছে। কিন্তু কলকাতায় নকল হাতের দাম তুলনামূলক হারে বাড়েনি। হাতপিছু দর মিলছে ৩৫-৪০ টাকা। তার উপরে কলকাতায় মাল নিয়ে আসা-যাওয়ার খরচও বেড়েছে। একই অর্থনীতি প্রযোজ্য এই শিল্পের অন্য উপজাতগুলির জন্যেও। পাইকারি বাজারে শিঙের তৈরি জিনিসের দাম তুলনামূলক ভাবে না বাড়ার আর এক কারণ হল প্লাস্টিকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
তিন পুরুষের ব্যবসা লাল্টু চন্দ্রদের। লাল্টুবাবু জানাচ্ছেন, এক সময়ে তাঁদের কাছে জনা সাতেক শ্রমিক এই শিল্পে কাজ করতেন। এখন শিল্পে মন্দা দেখে তাঁরা কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। পরিবারের লোকেরা মিলে কোনও মতে ব্যবসা চালাচ্ছেন।
ব্যবসায়ীদের দাবি, ‘‘বাজার ছোট হলেও শিঙের তৈরি পণ্যের নিজস্ব চাহিদা রয়েই গিয়েছে। যদি কাঁচামালের জোগান সুলভ থাকে বা উৎপাদিত পণ্যের দাম ঠিকমতো পাওয়া যায়, তা হলে ব্যবসা ভালোই চলবে। সরকার পাশে দাঁড়ালে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা করাই যায়।’’ কিন্তু সরকার পাশে দাঁড়াবে কি না, সে প্রশ্নের জবাব এখনও অজানা তাঁদের। —সুব্রত জানা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy