—প্রতীকী চিত্র
দুপুরবেলা বেশ গরম। কিন্তু সন্ধ্যা নামলেই তাপমাত্রা কমছে। গভীর রাতে বা ভোরে উত্তুরে হাওয়ায় বেশ ঠান্ডা-ঠান্ডা লাগছে। মিলছে কার্তিকের হিমও। এবং এই হাওয়া বদলের খামখেয়ালিপনার হাত ধরেই মহানগরে জাঁকিয়ে বসছে পরজীবীবাহিত রোগ। ঘরে-ঘরে সর্দি, জ্বর, কাশি তো রয়েইছে, উপরি হিসেবে জুড়ছে নানা ধরনের সংক্রমণও।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস জানান, আজ, বৃহস্পতিবার থেকে রাতের তাপমাত্রা আরও কিছুটা কমবে। চলতি সপ্তাহে কলকাতার রাতের তাপমাত্রা ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি ছিল। বুধবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাঁচির রাতের তাপমাত্রা ইতিমধ্যেই ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। কড়া হিম মিলছে এ রাজ্যের পশ্চিম প্রান্তেও। গণেশবাবু জানান, উত্তুরে হাওয়ার জোর কিছুটা বেশি রয়েছে। তার ফলেই এই পরিস্থিতি। তবে চলতি মাসের শেষে ফের মাথাচাড়া দিতে পারে কলকাতার রাতের পারদ।
সংক্রামক রোগের চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী বলছেন, ‘‘ঋতু বদলের সময়ে পরজীবীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাতেই সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ে।’’ চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতা, অনেক সময়েই ভাইরাল জ্বর হচ্ছে। রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়া ধরা পড়ছে না। কিন্তু জ্বর কমার পরে অন্য নানা রকম সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। উত্তর শহরতলির বাসিন্দা এক মহিলা পুজোর আগে এমনই জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। জ্বর কমার পরে দেখা গেল, তাঁর মূত্রনালিতে সংক্রমণ হয়েছে। সেই সংক্রমণ কমলে ফের জ্বরে আক্রান্ত হন তিনি। অনেকের আবার জ্বরের সঙ্গে শ্বাসনালিতেও সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে।
সংক্রামক রোগের চিকিৎসক বিনয় গুছাইতের মতে, ভাইরাল জ্বরে এমনিতেই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। সে ক্ষেত্রে দেহের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেও সংক্রমণ ঘটছে। তাঁর অভিজ্ঞতা, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার পাশাপাশি অনেকেই ফ্লু-তে আক্রান্ত হচ্ছেন। শ্বাসনালি, মূত্রনালির সংক্রমণে আক্রান্ত রোগীও আসছেন। তবে অমিতাভবাবুর বক্তব্য, ‘‘এ ক্ষেত্রে জ্বরের পরে সংক্রমণ, না সংক্রমণ থেকে জ্বর আসছে, সেটা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।’’
আমজনতার অনেকেই বলছেন, অক্টোবর এখনও শেষ হয়নি। গত কয়েক বছরে নভেম্বর মাসেও বেশ গরম ছিল। এ বছর এমন হিমের আধিক্য কেন? আবহবিদদের একাংশের বক্তব্য, এ বছর বর্ষা বিদায় হতেই একাধিক পশ্চিমী ঝঞ্ঝা (ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে বয়ে আসা ঠান্ডা, ভারী হাওয়া) কাশ্মীরে এসেছে এবং তা বয়ে এসেছে হিমাচল প্রদেশের দিকে।এক প্রবীণ আবহবিজ্ঞানী বলছেন, ‘‘সাধারণত এ সময়ে ঝঞ্ঝা এলেও তা তিব্বতের দিকে বয়ে যায়। এ বছর আচমকা কয়েকটি ঝঞ্ঝা কেন দিক পরিবর্তন করল, তা নিয়ে বিশদ বিশ্লেষণের প্রয়োজন রয়েছে। তবে এই হিম এখনই স্থায়ী হবে না।’’ তাঁর বক্তব্য, হিমাচলে ঝঞ্ঝা বয়ে এলেই তা উত্তর ভারতের তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়। সেই হিমই উত্তুরে হাওয়া বয়ে নিয়ে আসে পূর্ব ভারতে। কিন্তু উত্তুরে হাওয়ার জোর কমলেই এ সময়ে হিমের দাপট কমে যাবে। পুরোপুরি শীত না প়়ড়া পর্যন্ত এমনই চলবে বলে তাঁর মত।
চিকিৎসকদের অনেকে বলছেন, এই ঠান্ডা-গরমে সংক্রমণও বাড়তে পারে। তাঁদের পরামর্শ, সংক্রমণ এড়াতে সাবধানতা জরুরি।চট করে ঠান্ডা জল খাওয়া কিংবা টানা এসি চালিয়ে ঘুমোনো উচিত নয়। ভোরের দিকে বেরোতে হলে হাল্কা গরম পোশাক গায়ে চাপানো যেতে পারে। এ সময়ে বাতাসে দূষণের মাত্রা বা়ড়তে থাকে। ফলে হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের রোগীদের অতিরিক্ত সাবধানতা প্রয়োজন। সতর্কতা প্রয়োজন শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy