গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
এত দিন তাঁর দল বিজেপি দাবি করেছে, রাজ্যে তারা ২৩টি আসন পাবে। সোমবার ঝাড়গ্রামে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বয়ং তাঁর দলের প্রত্যাশিত আসন সংখ্যা আরও খান দশেক বাড়িয়ে দিলেন। এ দিন তাঁর ঘোষণা, তৃণমূল এ বার ১০টি আসনও পাবে না। যার অর্থ, রাজ্যে অন্তত ৩২টি আসন পেতে চলেছে বিজেপি।
জবাবে বাঁকুড়ার কোতুলপুরের সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহাস্য মন্তব্য, ‘‘মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে ওঁর। গোল্লা পাবেন। তাই আবোল তাবোল বলছেন!’’
সোমবার পঞ্চম দফা ভোটের দুপুরে ভিড়ঠাসা ঝাড়গ্রামের সভায় মমতাকে আক্রমণ করে মোদী বলেন, ‘‘গরিবের সব কিছু লুট করেছে তৃণমূলের চিটফান্ডগুরুরা। যুবক পরীক্ষায় পাশ করেও চাকরি পাননি। কর্মীদের ডিএ মেলে না। গুন্ডামি আর সিন্ডিকেটরাজের জন্য রুটি-রুজি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এ সব কারণে এ রাজ্যের মানুষ দিদিকে ১০টি আসনেও পৌঁছতে দেবে না।’’
মমতাও মোদীর হুঁশিয়ারিকে কার্যত ‘পাগলের প্রলাপ’ বলে কটাক্ষ করে কোতুলপুরের সভায় বলেন, ‘‘তুমি দশটা পেলে হয়! তৃণমূল ৪২-এ ৪২ পাবে। নিজের কী হবে? হাল ঠিক আছে তো? বেচারা। উথালপাথাল করছে মন! তা না-হলে কেউ বলে তৃণমূল ১০টা আসনও পাবে না!’’ বাংলা থেকে বিজেপিকে বড় রসগোল্লা দেওয়ার আবেদন জানিয়ে এর পরেই বিজেপি নেতাদের আগের হিসেবের কথা উল্লেখ করেন মমতা। বলেন, ‘‘আগে বলেছিল বিজেপি ২৩টা পাবে। এখন তো বলছে শুনছি, ৩৩টা পাবে! কবে বলবে, ৪২টাই পাবে! তার পর বলবে ৫৪৩ এর মধ্যে ৫৪৩টাই পাবে! আসলে উনি গান গাইছেন, আমার সাধ না মিটিল, আশা না পুরিল!’’
বাঁকুড়ার রাধানগরের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: অভিজিৎ সিংহ
এ বার দিল্লির সরকার গঠনে অন্যতম নির্ণায়ক শক্তি হবে। অন্যদিকে, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে রাজ্য নেতারাও বিভিন্ন সময়ে এ রাজ্যে এত দিন ২২-২৩টি আসন জেতার ‘স্বপ্ন’ কোন অঙ্কে তৃণমূল দশটি আসনও পাবে না, তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা অবশ্য মোদী দেননি। তবে তিনি দাবি করেছেন, ‘‘ভোট লুট করার চেষ্টা করছে তৃণমূল। তৃণমূলের যথাসাধ্য গুন্ডামি সত্ত্বেও মানুষ বুথে গিয়ে ভোট দিতে পারছেন। বিজেপি কর্মী এমনকি, আমাদের প্রার্থীদের উপরেও হামলা হয়েছে। দিদির ধমকানি, চমকানি আর বাংলার মানুষ বরদাস্ত করবে না। পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিংসা আর তৃণমূলের আক্রমণে ভোট দিতে না পারার জবাব এ বার দিদিকে দেবেন মানুষ।’’
মমতাও বিষয়টি আঁচ করতে পেরে তাঁকে ‘ভীত’ বলে কটাক্ষ করেছেন মোদী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘গণতন্ত্র, আইন, জনতার শক্তি আর জনতার রায়কে মমতাদিদি ভয় পাচ্ছেন। কিছুতেই সেই ভয় তাঁর পিছু ছাড়ছে না। সঙ্গে বাংলার প্রতি কোণায় এই যে বিজেপির সভায় জনসাগর হচ্ছে, তার রিপোর্ট শুনে আরও রাগ হচ্ছে মমতাদির।’’
জবাবে মমতা মোদীকে বিঁধে বলেন, ‘‘ধমকাচ্ছেন, চমকাচ্ছেন তো আপনি। আপনিই তো সবাইকে সিবিআই, ইনকাম ট্যাক্স, ডাকাত দিয়ে চমকাচ্ছেন। স্পর্ধা ভাল, আস্পর্ধা ভাল নয়।’’ এ রাজ্যে মানুষ কিছুতেই বিজেপিকে ঢুকতে দেবে না বলে আশাবাদী মমতা। আর তিনি যে কিছুতেই ভয় পান না, তা বুঝিয়ে মমতা বলেন, ‘‘আমায় চমকে, ধমকে লাভ নেই। সবাই ভয় পেয়ে চুপ করে থাকলেও আমি বেঁচে থাকতে চুপ করব না। বিড়ালের গলায় ঘণ্টা আমিই বাঁধব। মোদীবাবু তোমায় বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে!’’
ঝাড়গ্রামের সভায় সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির নাম নিয়েও কটাক্ষ করেন মোদী। বলেন, তাঁর নামের মধ্যে ‘সীতা এবং রাম’ শব্দ দুটি থাকলেও তাঁদের তিনি সম্মান করেন না। সীতারামের জবাব, ‘‘এ সব সস্তা গিমিক দিয়ে ভোটারদের ভোলানো যাবে না। বিজেপি সরকারকে গত পাঁচ বছরের ব্যর্থতার খেসারত দিতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy