নরেন্দ্র মোদী।
পশ্চিমবঙ্গে ক্রমশ এগিয়ে আসছে বিধানসভা নির্বাচন। তাই করোনা পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলেই নয়া নাগরিকত্ব আইনে মূলত বাংলাদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কাজ শুরু করার কথা ভাবছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। সূত্রের মতে, দুর্গাপুজোর আগেই অন্তত পাইলট প্রকল্প হিসেবে ওই কাজ এক বা একাধিক জেলায় শুরু করে দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে।
দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে আসা অ-মুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলেছে মোদী সরকার। বর্তমানে ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে পাকাপাকি ভাবে এ দেশে রয়ে গিয়েছেন এমন ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে আগতদের সংখ্যাই বেশি। বিজেপির মতে, এই আইনে পশ্চিমবঙ্গে সব থেকে বেশি ফায়দা হবে মতুয়া সম্প্রদায়ের। এই সম্প্রদায়ের মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই নাগরিকত্বের দাবিতে সরব ছিলেন। এই মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষেরা মূলত রয়েছেন নদিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, মালদহ, কোচবিহারের মতো সীমান্ত সংলগ্ন জেলাগুলিতে।
মূলত ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রেখেই তড়িঘড়ি নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে কেন্দ্র। বিজেপির আশা ছিল, এর সুফল পাওয়া যাবে রাজ্য-রাজনীতিতে। কিন্তু বাস্তবে হয় উল্টো। ওই বিল ঘিরে নানা জটিলতা, অবিশ্বাস, নাগরিকত্ব চলে যাওয়ার ভয়— সব মিলিয়ে ওই আইন পাশের পরে হওয়া উপনির্বাচনে পর্যুদস্ত হয় বিজেপি।
তার পর থেকেই ওই আইনটি নিয়ে ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়েছে বিজেপি। কিন্তু আজ দিল্লিতে নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘ওই আইন নিয়ে লোককে ভীষণ ভাবে ভুল বুঝিয়েছে রাজ্যের শাসক দল। এই আইনে মানুষের উপকার হবে, অথচ বোঝানো হয়েছে উল্টো।’’ বিজেপি নেতৃত্ব তাই ওই অপপ্রচারের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রচারে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঘনিষ্ঠ মহলে বিজেপি নেতারা স্বীকার করছেন, এই আইন দু’ধারি তলোয়ার। মানুষকে ঠিক ভাবে বোঝাতে না-পারলে লাভের চেয়ে ক্ষতিই করবে বেশি।
করোনা অতিমারি পিছনের সারিতে ঠেলে দিয়েছে সব কিছুকেই। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচন যখন এগিয়ে আসছে, তখন নাগরিকত্ব আইন নিয়ে ধীরে ধীরে প্রচারে নামার কথা ভাবছে বিজেপি। বিলটি ঘিরে মানুষের মনে যে সন্দেহ রয়েছে, তা কাটাতে একেবারে হাতে-কলমে নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করার পক্ষপাতী রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। দল মনে করছে, এক বার মানুষ নাগরিকত্ব পেতে শুরু করলেই এ নিয়ে বিরোধীদের সমস্ত অপপ্রচার থেমে যাবে। একই মত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদেরও।
কিন্তু করোনা আবহে নাগরিকত্ব দেওয়ার কাজ শুরু হলে হিতে বিপরীত হতে পারে। নতুন করে ছড়িয়ে পড়তে পারে সংক্রমণ। তাই রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসার পরেই নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করার কথা ভাবছে কেন্দ্র। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের মতে, হাতে সময় কম। তাই পুজোর আগেই পাইলট প্রকল্পের কাজ শুরু করার কথা ভাবা হচ্ছে। সূত্রের মতে, শুরুতে শুধু একটি জেলায় কাজ শুরু হোক। রাজ্য বিজেপি সূত্রের মতে, নোট-বাতিলের মতো দুর্ভোগ যাতে নাগরিকত্ব যাচাইয়ের ক্ষেত্রে না-হয়, সে জন্য ইতিমধ্যেই কিছু জেলায় দলীয় কর্মীদের পাশাপাশি পেশাদার নিয়োগ করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy