Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

তিনি ভরসা জুগিয়েছেন ক্যানসার যুদ্ধেও

পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে তাঁর সঙ্গে পরিচয় আরও এক ক্যানসারজয়ী অজয় গুপ্তের। বছর আশির অজয়বাবু ক্যানসারের সঙ্গে নিজের লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি বই লিখেছিলেন, ‘কর্কট সহবাস’।

নবনীতা দেবসেন।

নবনীতা দেবসেন।

জয়তী রাহা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৫৮
Share: Save:

ক্যানসার ধরা পড়ার আগেই বেশ কিছু শারীরিক প্রতিবন্ধকতা এসে গিয়েছিল তাঁর। কিন্তু সচল ছিল কলম। সজাগ ছিল ভ্রমণের নেশা। হুইলচেয়ারকে সঙ্গী করেই বেরিয়ে পড়তেন। ‘ভালো-বাসা’-র বাসিন্দা তাঁর একেবারে শেষ দিকের লেখায় ‘পাঁজিপুঁথি দেখে, শুভ দিন, শুভ লগ্ন স্থির করে শুভ যাত্রা’র যে কথা দিয়েছিলেন, যেতে যেতে তা-ও রেখে গেলেন নবনীতা দেবসেন। তাঁর চলে যাওয়ার দিন, ৭ নভেম্বর ছিল ক্যানসার সচেতনতা দিবস। যাওয়ার বেলাতেও কলম ধরে শক্তি জুগিয়ে গেলেন অসংখ্য মানুষকে।

পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে তাঁর সঙ্গে পরিচয় আরও এক ক্যানসারজয়ী অজয় গুপ্তের। বছর আশির অজয়বাবু ক্যানসারের সঙ্গে নিজের লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি বই লিখেছিলেন, ‘কর্কট সহবাস’। লেখিকা নিজে ওই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরে আরও এক বার পড়েন বইটি। সে কথা জানালেন অজয়বাবুই। তাঁর কথায়, “নবনীতার সঙ্গে পরিচয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সময় থেকে। কাছ থেকে দেখেছি ওঁর যন্ত্রণা সহ্য করার অসীম ক্ষমতা। এমন মেয়ে যে ক্যানসারের কাছে হার মানবেন না, সেটাই স্বাভাবিক।”

তাঁর শিরায়, রক্তে, শ্বাস-প্রশ্বাসে প্রসারিত লেখার ক্ষমতাকে অসহ্য যন্ত্রণাতেও লালন করে চলার জন্য লেখিকাকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন শিশুরোগ চিকিৎসক অগ্নিমিতা গিরি সরকার। “ক্যানসার বা যে কোনও বড় অসুখের ক্ষেত্রে জরুরি হল, ইতিবাচক চিন্তা। যে কোনও সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে এক জন রোগী যদি আনন্দ খুঁজে পান, তা হলে সেটাই রোগ নিয়ন্ত্রণের রসদ। এর ফলে ‘পজ়িটিভ এনার্জি’ নিউরো ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে মস্তিষ্কে ছড়ায়, যা নেতিবাচক চিন্তা দূর করার ক্ষেত্রে সহায়ক।”

প্রিয় লেখিকার শেষ লেখাটি পড়েছেন তিনিও। ২০১২ সাল থেকে যিনি ক্যানসারের সঙ্গে আক্ষরিক অর্থে সহবাস করেও হার মানেননি। রক্তের ক্যানসারে মারা গিয়েছিলেন স্বামী। তাঁর মৃত্যুর দু’মাসের মাথায় ছেলের বিয়ের কিছু দিন আগে জানতে পারেন, তিনি নিজে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত। স্টেজ ফোর। একাই যাবতীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। বৌভাতের রাতে দুই ছেলেকে জানান সে কথা। শুরু হল চিকিৎসা। যখন মনে হল খানিকটা সামলে উঠেছেন, ফের বিপর্যয়। বছর পঁয়ষট্টির সেই সীমারেখা রায়চৌধুরী বললেন, “ধরা পড়ল দিদির মুখের ক্যানসার। তাঁর চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিজেকে অবহেলা করায় আমার রোগটা এখন ছড়িয়েছে। বন্ধুরা ফোন করেন। বলেন, ‘সব ঠিক হয়ে যাবে, চিন্তা কোরো না।’ নিশ্চয়ই কাজে ফিরতে পারব।” বন্ধু বলতে ক্যানসার রোগীদের নিয়ে কাজ করা এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যেরা। তাঁদের বড় ভরসা সীমারেখাদি। তাঁরও ভাল থাকার ওষুধ ওঁরাই।

নবনীতা দেবসেনের ভাবনার সঙ্গে সহমত ক্যানসার চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর মতে, “এ প্রশ্ন আমারও। ক্যানসারকে কেন এত গুরুত্ব দেব? একটা সময় ছিল যখন এর চিকিৎসা জানা ছিল না। ফলে সাহিত্যে-সিনেমায় ট্র্যাজিক দৃশ্য তুলে ধরতে ক্যানসার ছিল ভরসা। দিন বদলের সঙ্গে বদলানো উচিত ভাবনাও। প্রতিদিন ভয়ে না মরে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এমন কাজ করে যাওয়া উচিত, যা নিজেকে ভাল রাখবে, উপকৃত হবেন পাঁচ জন।”

অর্থাৎ মৃত্যু নিয়ে চর্চা নয়, বেঁচে থাকতে কী করলাম, চলে যাওয়ার পরে সেটাই থেকে যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nabaneeta Dev Sen Death Cancer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE